স্থানীয় ডুবুরির সহায়তায় অন্নপূর্ণাঘাটেই উদ্ধার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃতদেহ
অন্নপূর্ণাঘাটে যে এলাকায় গতকাল তলিয়ে গিয়েছিল শিলচর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র বিবেক দেব, সেখানেই আজ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে এসডিআরএফ বাহিনী কোনোভাবেই খোঁজাখুঁজি করে থাকে উদ্ধার করতে পারেনি। শ্রীকোনার শুকতারা এলাকার এক যুবক পুলিশ এবং এসডিআরএফ বাহিনীর সামনেই জলে ডুব দিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখনো কাছাড় জেলার বাহিনীদের কাছে নেই, ফলে তারা সব সময় সাফল্য নাও পেতে পারেন।
দোল উৎসবে রং-খেলায় অংশ নিতে সোমবার দুপুরে নিজের দাদার সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়েছিল বিবেকানন্দ রোডের ছেলে বিবেক দেব। শিলচর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রটি বয়স মাত্র ১৬ বছর, উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করে। দুপুর বারোটা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিত জনের সঙ্গে রং খেলে। এরপর বাড়ি ফেরার আগে বিকেল চারটে নাগাদ অন্নপূর্ণা ঘাটের হাত পা ধোয়ার জন্য গেছিল বিবেক। তবে হঠাৎ করে পা পিছলে নদীতে পড়ে যায় সে এবং সঙ্গে সঙ্গেই তলিয়ে যায়। আশেপাশের মানুষ তৎক্ষণাৎ সেখানে জড়ো হন এবং তাকে খোঁজার চেষ্টা করেন, কিন্তু কিছুতেই পাওয়া যায়নি। খবর দেওয়া হয় পুলিশ এবং এসডিআরএফ বাহিনীকে। তারা এসে কিছুক্ষণ খোজাখুজি করেন এবং সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে বলেন রাতে খোজা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। সোমবার রাতে না খুঁজলেও মঙ্গলবার সকালে তারা এলাকায় উপস্থিত হন এবং তলিয়ে যাওয়া ছাত্রকে খুঁজতে চেষ্টা করেন।
সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ শ্রীকোনার এক যুবক এবং তার বাবা, যারা আদতে মাঝি, এলাকায় এসে এসডিআরএফ বাহিনীদের দেখেন। যুবকটি বলে কোন জায়গায় ছাত্রটি ডুবে গিয়েছিল সেটা দেখিয়ে দিতে। এতে এসডিআরএফের সদস্যরা খানিকটা তাচ্ছিল্য করেন। বলেন আমরাই খুঁজে পাইনি এবার তুমি খুজবে? যুবকটি প্রথম চেষ্টায় সফল না হলেও কিছুটা দূরে গিয়ে দ্বিতীয় ডুব দিতেই দেখতে পায় বিবেক দেবের মৃতদেহ। তখন সে কোমড়ের দড়ি বেঁধে হাতে আরেকটা দড়ি হাতে নিয়ে জলে নামে এবং মৃতদেহের পায়ে দড়ি বেঁধে জল থেকে টেনে তুলে।
পরিবারের সদস্যরা এই মুহূর্তের আগে পর্যন্ত ভেবেছিলেন বিবেক দেব জীবিত আছে। তবে মৃতদেহ দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিন দুপুরে শিলচর শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেও এভাবে অন্নপূর্ণা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এক যুবতী জলে ঝাপ দিয়েছিল। সুরক্ষা বাহিনীরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাননি। নব নির্মিত সেতুর পাশে যে এলাকায় যুবতী ঝাঁপ দিয়ে ছিলেন সেখানেই তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন এলাকার মানুষ। সেদিন যুবতীটি রাতের বেলা ঝাঁপ দিয়েছিল এবং এসডিআরএফ বাহিনী জানিয়েছিলেন তাঁরা রাতের বেলা খুঁজতে সমর্থ নন। একইভাবে বদরপুরে এক ছাত্রী জলে তলিয়ে গিয়েছিল এবং তাদের খোঁজার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিল করিমগঞ্জ প্রশাসন। অথচ যেখানে যেখানে সে তলিয়ে যায় সেখান থেকেই মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এসডিআরএফ বাহিনী খোঁজাখুঁজি করেও তাদের দেখতে পায়নি।
এবার আরেক যুবকের এভাবেই প্রাণ গেল। এসডিআরএফ বাহিনীরা তাকে খুঁজে বের করতে পারেননি। কোনও ব্যক্তি জলে তলিয়ে গেলে তাকে খোঁজার জন্য দক্ষ ডুবুরিদের কাজে লাগালে হয়তো উদ্ধারের সম্ভাবনা বেড়ে যেত। এই ঘটনায় আবার এমনই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে।
Comments are closed.