যারা বাইরে থেকে ফিরছেন তারা আমাদেরই একজন, অকারণে আতঙ্কিত হবেন না: জেলাশাসক কীর্তি জল্লি
জেলার বাইরে থেকে যারা ফিরছেন তারা প্রত্যেকে আমাদেরই একজন, অথচ অনেকেই আমাদের কাছে দাবি রাখছেন যাতে তাদের এলাকায় সরকারি কোয়ারেন্টাইন বানানো না হয়। লকডাউনে যারা আটকা পড়েছিলেন তাদের তো ফিরিয়ে আনতেই হবে। তাদের মাধ্যমে যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য তাদের পর্যাপ্ত পরীক্ষা করিয়ে কোয়ারেন্টাইনে কিছুদিন রেখে সমাজে ফিরতে দেওয়া হবে। তবে এই দায়িত্বটুকু শুধুমাত্র প্রশাসনের নয়, সাধারণ মানুষকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে সমানভাবে যোগদান দিতে হবে। যাদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে তারা করোনায় আক্রান্ত নন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের আমরা আইসোলেশনে রাখি। তাই ভয় পাবার কিছু নেই এবং ভয় ছড়ানো থেকেও বিরত থাকা দরকার, এমনটাই বললেন নবনিযুক্ত জেলাশাসক কীর্তি জল্লি।
কাছাড়ের জেলা শাসক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর শুক্রবার স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আলাপচারিতায় বসেন তিনি। তিনি বলেন, আপাতত ফোকাস হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সামাল দেওয়া। জেলার অন্যান্য সমস্যাগুলো আগামীতে দেখা হবে। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সব থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়। এতদিন শুধুমাত্র বাসে এবং গাড়িতে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া মানুষ জেলায় ফিরছিলেন। এবার ট্রেনে করে ফিরতে শুরু করছেন। ট্রেন যাত্রীদের জন্য আলাদা এসওপি রয়েছে। উত্তর-পূর্বের বাইরে থেকে যে যাত্রীরা আসবেন প্রত্যেকের সোয়াব টেস্ট বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি তাদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলা, দিব্যাঙ্গ, শিশু এবং বৃদ্ধ ব্যক্তিদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে না বরং তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে তাদের ঘরকে কনটেইনমেন্ট ঘোষণা করা হবে। তাদের হাতে সিম লাগিয়ে দেওয়া হবে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সব টেস্ট হয়ে রেজাল্ট নিগেটিভ আসছে না ততক্ষণ তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বেরোতে পারবেন না। তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরকারিভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমরা চাইব পাড়াপড়শি এবং এলাকার মানুষ তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করুন।
আগামীতে বিধানসভা সমষ্টি অনুযায়ী সরকারি কোয়ারেন্টাইন বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যে ব্যক্তি ফিরবেন তাকে তার বিধানসভা সমষ্টির এলাকায় থাকা কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য নেওয়া হবে।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি সাধারণ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। বাইরে থেকে মানুষ আসার সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টাইন গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে দুই হাজার মানুষকে রাখার মত ক্ষমতা রয়েছে যেটা আগামীতে বেড়ে ছয় হাজার পর্যন্ত হতে পারে। আগামীতে অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল গুলোকেও কাজে লাগানো হবে। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে সুরক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। রোগীর সঙ্গে যারা আসছেন তারা যদি মাস্ক পরিধান না করেন তবে ৫০০ টাকা ফাইন ধার্য করে দেওয়া হয়েছে।
যারা বাইরের রাজ্য থেকে কাছাড় জেলায় আটকা পড়ে রয়েছেন তাদের ফেরত পাঠানোর জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লকডাউনের পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করেছেন বলে নানান অভিযোগ রয়েছে। আমাদের স্পেশিয়াল ফ্লায়িং স্কোয়াড রয়েছে যারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এগুলোর দিকে নজর রাখছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক দোকানে সরকারি মূল্য তালিকা থাকবে, কিন্তু সাধারণ মানুষ যখনই দোকানে যান, তালিকা তাদের চোখে পড়ে না। তারা আমাদের কাছে অভিযোগ জানান,আমরা দেখেছি দোকানদাররা সরকারি আধিকারিকদের জন্য এই তালিকাটি লাগান এবং তারা চলে গেলে সেটা সরিয়ে দেন। এব্যাপারে আগামীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিলচর শহরের পরিছন্নতা বজায় রাখতে আপাতত শিলচর পৌরসভা পুরনো পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে কাজ করছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে এসএলআরএম সারা শহরে চালু হবে। এদিকে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে সবক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সাহায্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা যেসব নিয়ম ধার্য করে দেব সেগুলো সাধারণ মানুষকেই পালন করতে হবে।
Comments are closed.