Also read in

ঘৃণার উত্তরে ভালোবাসা: করিমগঞ্জে 'বাঙালি-খাসিয়া ভাই-ভাই' পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে ভাতৃত্ববোধের বার্তা

বুধবার শিলংয়ে খাসি ছাত্র সংগঠন মেঘালয়ে বসবাসকারী প্রত্যেক বাঙালিকে বাংলাদেশী আখ্যা দিয়ে ব্যানার লাগিয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে কথা বললে একই ভাষায় তারা বলে বাঙালিরা আমাদের বন্ধু নয়। অনেকেই এর প্রতিবাদ করলেও ঘৃণার পরিবর্তে ঘৃণা ছড়ায়নি, বরং ভাতৃত্ববোধ এবং একতার বার্তা দিল বরাক উপত্যকা। ‘অসম রাজ্যে বসবাসকারী প্রত্যেক খাসিয়া ভারতীয়, তারা প্রত্যেকে আমাদের ভাই বোন’, এই বার্তা দিয়ে করিমগঞ্জে ব্যানার লাগালেন সমাজসেবী সুজন দেব রায়।

সুজন দেব রায় বলেন, ‘আমার মনে হয়না খাসি ছাত্র সংগঠনের এই বার্তা সমগ্র খাসিয়া সমাজের বার্তা। মেঘালয়ে কয়েকশো বছর ধরে বাঙালি এবং খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ একে অন্যের সঙ্গে থেকে সমৃদ্ধ হয়েছেন। শুধুমাত্র একটা ছাত্র সংগঠন ঠিক করে দিতে পারেনা সমগ্র খাসিয়া সমাজ কি চায়। যেমন আমরা ভারতবর্ষের নাগরিক, এই দেশে বাস করা প্রত্যেক খাসিয়া মানুষ ভারতবর্ষের নাগরিক। আমরা কেউ কারও শত্রু নই, এই কথাটুকু মনে করিয়ে দিতে আমি ব্যানার লাগিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক খাসিয়া এবং বাঙালি ভাতৃত্ববোধ এবং সহাবস্থানে বিশ্বাসী।”

তিনি আরও বলেন, “আর পাঁচটা বাঙালি মানুষের মতো আমিও গতকাল ব্যানারগুলো দেখে অত্যন্ত আহত হয়েছি। একটি ছাত্র সংগঠন কিভাবে রাজ্যের বাঙালিদের বাংলাদেশী বলতে পারে, তাদের মনোবৃত্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এটা নিয়ে আশ্চর্য হচ্ছি। মেঘালয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে বাঙালিদের অবদান আজকের নয়, এটা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন খাসিয়া সমাজ জানে। অবশ্যই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই ব্যানারগুলো লাগানো হয়েছিল। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে, সেটা আমরা এখন আলোচনা করছিনা। তবে আমরা এভাবেই বারবার ভাতৃত্ববোধের বার্তা দিয়ে যাব।”

গতকাল মেঘালয়ের খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন শিলংয়ে অত্যন্ত আপত্তিকর বাঙালি বিদ্বেষী কিছু পোস্টার লাগিয়ে দেয়। ব্যানারগুলোয় পরিষ্কার ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘মেঘালয়ের সব বাঙালিই বাংলাদেশী’, ‘বাংলাদেশী তোমরা মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং আসামে তোমাদের অত্যাচার বন্ধ করো,’ ইত্যাদি। পোস্টারগুলো সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই গর্জে ওঠেন। শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় এবং প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব অসম এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত এব্যাপারে যোগাযোগ করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ পোস্টারগুলো সরিয়ে নেয়। তবে ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, উত্তর-পূর্বের গন্ডি পেরিয়ে সেটা পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রত্যেকেই এই কথার তীব্র নিন্দা করছেন। এবার বরাক উপত্যকা থেকে ভাতৃত্ববোধের একটি সুন্দর বার্তা তাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো।

Comments are closed.