মহাসড়ক নিয়ে ১০০ কোটির ঘাপলা করেছে বিজেপি, বাজপেয়ী জমানার বড় নেতা জড়িত, অভিযোগ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের
১৯৯৮ সালে বরাক উপত্যকায় এক প্রভাবশালী বিজেপি নেতা খুব চালাকি করে মহাসড়কের ম্যাপ এমনভাবে বানিয়েছিলেন যেটা বারবার ভাঙবে এবং তারা এর থেকে টাকা রোজগার করবেন। দুই দশক ধরে বরাক উপত্যকা এবং গুয়াহাটির কিছু রাজনীতিবিদ মিলে এই প্রকল্পের নামে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঘোটালা করেছেন। এখন ক্ষমতায় থাকা বিজেপির নেতারা অসম্পূর্ণ রাস্তার শেষ অংশে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি স্থাপন করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন, এমনটাই অভিযোগ সদ্য আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টৈর সদস্যদের। বুধবার তারা শিলচরে নিজেদের দলের লোগো প্রকাশ করেন। এই অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে বরাকের বিভিন্ন বঞ্চনার উল্লেখ করার পাশাপাশি মহাসড়ক নিয়ে ১০০-কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলেন তারা।
অনুষ্ঠানে দলের পক্ষ থেকে যোগ দেন প্রদীপ দত্ত রায়, পার্থ দাস, জহর তারান, ঋষিকেশ দে, কল্পর্নাভ গুপ্ত সহ অন্যান্যরা। প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, “অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে অত্যন্ত নমস্য, কেননা তিনি তাঁর সময়ে যেটুকু কাজ করেছেন সেটা খুব কম প্রধানমন্ত্রীই করতে পেরেছিলেন। বর্তমান বিজেপি সরকারের নেতারা কখনোই তাঁকে যোগ্য সম্মান দেননি, এমনকি তার শুরু করা অসম্পূর্ণ কাজ তারা গত ছয় বছরে শেষ করেননি। আগামী বছর অসমে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে তাই এখন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর নামে রাজনীতি করতে এবং নিজেদের দোষ ঢাকতে তার মূর্তি বসানো চলছে। আমি আশ্চর্য হচ্ছি নীতিন গাডকারির মতো একজন সৎ নেতা এতে সামিল হচ্ছেন। তিনি আসার পর আমরা চেষ্টা করব তার সঙ্গে দেখা করে আসল সত্য তুলে ধরতে। কিভাবে ভুল জমিতে রাস্তা বানিয়ে এতবছর ধরে সরকারি টাকা লুটপাট হয়েছে এবং এসব ঢাকতে মূর্তি উন্মোচনের নাটক চলছে। আমরা আশা করি তিনি আমাদের কথা শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।”
সাংসদ রাজদীপ রায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমাদের সাংসদের লজ্জা নেই, তাই রাস্তা শেষ না করে মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। সিলেটিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘মুলো নাই ঘর আর পুবেদি তিন দুয়ার’, অর্থাৎ মূল কাজ শেষ না করে বাহ্যিক জিনিসগুলো নিয়ে লম্ফঝম্প করা। আমাদের বর্তমান সাংসদ যে কাজটা করছেন তার সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে। তখন কাছাড় জেলায় বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতা যে কাজটি ভুল শুরু করেছিলেন, পরবর্তীতে বিজেপি এবং কংগ্রেস নির্বিশেষে সেই সূত্র ধরে নিজেদের পকেট ভরেছে। তবে আমরা ঠিক সময়ে সেগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরবো।”
নতুন দল নিয়ে তার অভিমত, আঞ্চলিক দল ছাড়া এলাকার সমস্যা সমাধান হয়না এটা অনেকেই জানেন। তবে তারা কোনও প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছিলেন না কথা বলার। ইতিমধ্যেই আমাদের সঙ্গে বিজেপি-কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের বড় মাপের নেতারাও যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। আমরা বরাকের ১৫ টি আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছি এবং ইতিমধ্যে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এমনকি কিছু প্রাক্তন বিধায়ক এবং মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা বিজেপি এবং কংগ্রেস দলের প্রত্যেক নেতাদের কাছে বলতে চাই যদি মনে হয় দলে আপনাদের কথা কেউ শুনছে না এবং বরাক উপত্যকার স্বার্থে আপনাদের কথা বলার ইচ্ছে রয়েছে তাহলে আমাদের দরজা খোলা আছে।”
এদিন শিলচর প্রেসক্লাবে দলের লোগো প্রকাশ করা হয়। মাঝি এবং নৌকা সহ লোগোটি বরাকের মূল স্রোতের কথা ভেবে বানানো হয়েছে। পাশাপাশি তারা উপত্যকার বিভিন্ন অপ্রাপ্তির কথা মনে করিয়ে দেন। জনসমর্থন পেলে সমস্যাগুলো নিয়ে আরও জোরালো আওয়াজ তুলবেন বলে আশ্বাস দেন তারা।
এছাড়া তাদের একটি অভিযোগ, শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে গিয়ে একটি অংশ ‘ভাষাশহিদ ট্রেন’ এর দাবি তুলছে। প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, “ভাষা শহিদ স্টেশন’র দাবি অনেক পুরনো, যদি একটি ট্রেনের নামও ভাষাশহিদ ট্রেন করতে হয় এতে আপত্তি নেই। তবে একটার পরিবর্তে অন্যটা নয়, দুটোই হতে পারে। একাংশ মানুষ বহুদিনের পুরনো ভাষা শহিদ স্টেশন’র দাবিকে ভেস্তে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন এবং তারাই ট্রেনের কথা বলে উদ্ভট যুক্তি দিচ্ছেন। আমরা দুটোর সমর্থনে আছি তবে আপাতত স্টেশনের নাম পরিবর্তন করতে হবে।”
Comments are closed.