উকিলপট্টিতে প্রকাশ্যে যুবতীর শ্লীলতাহানীর চেষ্টা, তলানিতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা
কিছুদিন আগে উকিলপট্টিতে রাতের বেলা প্রকাশ্যে এক মহিলার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছিল দুষ্কৃতিরা। স্থানীয় অনেকেই বলেন, সন্ধ্যার পরে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নেশা হয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অপরাধমূলক কাজ। তবে সোমবার সকালে দিনের আলোয় এক নেশাগ্রস্ত যুবক স্থানীয় যুবতীর শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। যুবতীটির বয়ান অনুযায়ী, নেশাগ্রস্ত যুবক তাকে সিঁড়ির মাঝামাঝি একা পেয়ে প্রথমে কুরুচিকর মন্তব্য করে এরপর অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে। তিনি সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করলেও তার আওয়াজ কারও কাছে পৌঁছয়নি, শেষমেষ অনেক কষ্টে পালিয়ে যাবার রাস্তা বের করেন এবং ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। ঘটনায় তিনি একেবারে স্তম্ভিত এবং আতঙ্কিত।
উকিলপট্টির ললিত-সুষমা অ্যাপার্টমেন্টে সোমবার সকালে ঘটনাটি হয়েছে। সকাল ছয়টায় তিনি অন্যদিনের মতোই জুম্বা-ক্লাসে গেছিলেন, ফেরার পথে লক্ষ্য করেন যুবকটি ফ্ল্যাটের নিচতলায় ঘোরাফেরা করছে। গত দুই তিন দিন থেকে এভাবেই যুবকটি তার উপর নজর রাখছিল। তবে সোমবার কোনও রাখঢাক না রেখেই যুবতীর পিছু নেয় নেশাগ্রস্ত যুবকটি। সিঁড়ির কাছাকাছি এলাকায় তাকে একা পেয়ে প্রথমে কুরুচিকর মন্ত্যব্য শুরু করে, যুবতীটি রেগে গিয়ে প্রতিবাদ করবেন ততক্ষণে যুবকটি প্রায় নগ্ন অবস্থায়। তিনি ভাবতেই পারেননি এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে এর প্রতিবাদ করবেন। অনেক সাহস জুগিয়ে শেষমেষ রাস্তা বের করে দৌঁড়ে ঘরে চলে যান। কিছুক্ষণ ঘরে কাটিয়ে বেরিয়ে আসেন এবং ফ্ল্যাটের অন্যান্য লোকেদের কাছে ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন, তবে কেউ খুব একটা সাড়া দেননি। এমনকি অনেকেই পুলিশে খবর দিতে মানা করেছেন।
শেষমেষ যুবতীটি ঘটনার বৃত্তান্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে এবং এতে সারা শহরে আলোড়ন দেখা দেয়। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তারা বলেন, “তুমি থানায় যাও, পুলিশকে খবর দাও, আমরা পাশে আছি।” এব্যাপারে যুবতীর বয়ান, “আমি শুনেছি কিছুদিন আগে এই যুবকটি এলাকার এক বয়স্ক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করেছিল, এমনকি বয়স্ক মহিলাকে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় কেউ এর পরে পুলিশকে জানাননি, ফলে তার সাহস বাড়ছে। সন্ধ্যেবেলা উকিলপট্টি এলাকায় পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। অনেকে প্রকাশ্যে নেশা করে, কেউ তাদের আটকায় না। সেই সময় কোনও মেয়ে বা বয়স্ক মহিলাও যদি এলাকা দিয়ে হেঁটে যান, তাদের শুনতে হয় নানান কুরুচিকর মন্তব্য। শিলচর শহরে দাঁড়িয়ে এমনটা হতে পারে, কখনো ভাবতাম না। আমি রীতিমত আতঙ্কে আছি, যদি মনে হয় আমাকে এলাকাবাসীরা সুরক্ষা দিতে পারছেন না, শেষমেষ হয়তো পুলিশের দ্বারস্থ হব। তবে ভয় হচ্ছে যদি যুবকটি এরপর অন্যভাবে আমার উপর হামলা চালায়। আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।”
একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ভারতীয় আইনে এভাবে প্রকাশ্যে কোনো যুবতীকে আটকে তার সামনে নগ্ন হয়ে যাওয়া শ্লীলতাহানীর পর্যায়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি যুবতীটি সাহস করে পুলিশের দ্বারস্থ হতে না পারে, সেক্ষেত্রে পুলিশের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো এবং যুবককে অন্তত আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং ঘটনার তদন্ত করা।”
Comments are closed.