মনিপুরি পিপুলস্ বিল, ২০১৮ : বাঙালি কি মনিপুর থেকে ও উৎখাত হতে চলেছে!
পার্শ্ববর্তী রাজ্য মনিপুরে সম্প্রতি নতুন করে এক নাগরিকত্ব বিল পাস হল রাজ্য বিধানসভায়। এখন তা রাজ্যপাল নাজমা হেপাতুল্লার অনুমোদনের অপেক্ষায়। ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বর্ষ ধরে মনিপুর বিধানসভায় গত ২৩ জুলাই পাস হওয়া অমনিপুরী বিরোধী নাগরিকত্ব বিল যার পোশাকি নাম হচ্ছে ‘মনিপুরী পিপুলস্ বিল : ২০১৮’ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল সীমান্ত জেলা জিরিবাম। ১৯৫১ সালের আগে মণিপুরে যারা এসেছেন শুধু তাদেরই স্থানীয় আখ্যা দিয়ে রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া এই বিলের প্রতিবাদে এবং ১৯৭২ সালকে বৃত্তি বর্ষ করার দাবিতে জিরিবাম জেলার বাঙালিরা আন্দোলনে নামলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি ও গুলি চালায়। এই ‘বাঙালি বিরোধী’ বিলের প্রতিবাদে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জিরিবামে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে কয়েকজন মহিলা সহ কম করেও ১৫ জন লোক আহত হয়েছেন। তাছাড়া জিরিবামের পুলিশ সুপারসহ চার পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। গুরুতরভাবে আহত ৬ জনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় শিলচর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনিপুর রাজ্য গঠিত হয়েছিল ১৯৭২ সালের ২১ শে জানুয়ারি। কিন্তু এই বিলে মনিপুরের বাসিন্দা হওয়ার ভিত্তিবর্ষ রাখা হয়েছে ১৯৫১ সাল । তাই এই বিলটি পাস হতেই অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণে অমনিপুরিরা বিশেষ করে বাঙালি হিন্দু মুসলিমরা গর্জে উঠেছেন। গত ২৫শে জুলাই অল জিরিবাম ইউনাইটেড মাইনরিটি পিপলস্ এর ব্যানারে এক বিশাল মিছিল বের হয় । মিছিল শেষে রাষ্ট্রপতি ও মণিপুরের রাজ্যপাল এর কাছে পত্র পাঠিয়ে দিলে তীব্র বিরোধিতা করা হয়। একই দাবিকে সামনে রেখে গতকাল লালপানি, বেকরা এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হন মহিলারা। পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় ডেপুটি কমিশনার সমস্ত জিরিবাম জেলাজুড়ে ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত নিষিদ্ধ করে করেন। আন্দোলনকারীরা জিরিবাম থানা থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিনে সোনাপুরে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে বিলের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেন । ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণ দেখিয়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয় । বাধা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা ধর্না চালিয়ে গেলে পুলিশ এদের উপর প্রথমে লাঠি চালায়, এরপর কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করে এবং রাবার বুলেট ও চালায়। জানা গেছে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শেষমেশ গুলি ও চালায়। উত্তেজিত জনতা তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে । দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলে মহিলাসহ কমপক্ষে ১৫ জন আন্দোলনকারী এবং চার পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের একজনের পায়ে গুলি লাগে । ৬ গুরুতর আহত ব্যক্তিকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এরা হলেন ঐ অঞ্চলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে তথা প্রতিনিধি হোসেইন আহমেদ (২৩),পেশায় রিকশাচালক সমজিদ আলী (৩০), মনোয়ারা বেগম, সমারজান বেগম, বাহার উদ্দিন ও হাসনা বেগম। সোনাপুরের জামাল হোসেনের ছেলে সমজিদ আলীর পায়ে গুলি লেগেছে।
আহত পুলিশ কর্মীদের জিরিবাম জেলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এই ঘটনায় বর্তমানে জিরিবাম এর বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা রয়েছে সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছেন পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আন্দোলনকারীরা স্থানীয় বিধায়ক তথা মনিপুর বিধানসভায় একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি আসাব উদ্দিনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিলের বিরুদ্ধে তিনি কোন ভূমিকা পালন কনরেনি। উল্লেখ্য রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠনের পর নির্দল বিধায়ক আসাদ সরকার পক্ষে চলে যান। অমনিপুরী জনগণের ভোটে জিতে জিরিবামের বিধায়ক হওয়া আসাব উদ্দিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আন্দোলনকারী ভুক্তভোগী জনগণের পাশে না থাকার খবরে ঐ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
এদিকে জিরিবামের শুক্রবারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে আমরা বাঙালি। আমরা বাঙালি নেতা সাধন পুরকায়স্থ এদিন শিলচর মেডিকেল কলেজে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেন।
Comments are closed.