২৪ ঘন্টায় শিলচর মেডিক্যালে মারা গেলেন করোনা আক্রান্ত চারজন, কাছাড়ে পজিটিভ ১৮০
গতকাল চিকিৎসক তথা শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় বলেছিলেন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি আগামীতে আরও কঠিন রূপ নেবে। বরিষ্ঠ চিকিৎসকরা বলছেন, এই বছর করোনা ভাইরাস আগের থেকে অনেক শক্তিশালী এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি। গতকাল রাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় চার ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে তিনজন কাছাড় জেলার এবং একজন করিমগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
শুক্রবার কাছাড় জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮০ জন ব্যক্তি। রেপিড এন্টিজেন টেস্টে ৯৮ জন এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৮২ জন ব্যক্তির শরীরে থাকা সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এদিন হঠাৎ করেই কোভিড পরীক্ষার মাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। এদিন মাত্র ৯৫৭ জনের রেপিড এন্টিজেন টেস্ট হয়েছে এর মধ্যে ৯৮ জন পজিটিভ হয়েছেন এবং ৮৫৯ জন নেগেটিভ হয়েছেন।
শুক্রবার রাত ১০ টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২১৪ জন ব্যক্তি। এরমধ্যে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২১ জন, সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৪ জন, গ্রীন হিলস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩০ জন, দয়াপুর সিআরপিএফ হাসপাতালে ৩৬ জন, সেনা হাসপাতালে ৮ জন কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালে ১৪ জন, গ্রেসওয়েল হাসপাতালে ২৪ জন, ভ্যালি হাসপাতালে ১৯ এবং বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ৮৫৯ জন।
হাসপাতালের তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি এলাকার বাসিন্দা গীতা ধর ৭ মে চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এসেছিলেন। ক্রমশ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল, একসময় অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যায় এবং তাকে ভেন্টিলেশনে অক্সিজেনের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
এরপর মৃত্যু হয় ডলু কালিনগর এলাকার বাসিন্দা রথীন্দ্র রায়ের। তিনি ৯ মে চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন এবং তাকে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াও তার শরীরের অন্যান্য রোগ ছিল। শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
কাটিগড়ার বাসিন্দা শিখা ভট্টাচার্য্য ৫ মে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রথম থেকেই তার অক্সিজেনের মাত্রা কম ছিল, ফলে আইসিইউতে চিকিৎসা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
কালাইন এলাকার বাসিন্দা মনোরঞ্জন দাস বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন, তবে ৯ মে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকেও আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রেখে অক্সিজেনের সাহায্যে চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুর ১২ টা ৫৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
উপত্যকার বরিষ্ঠ চিকিৎসকরা বলছেন, এই বছর যে ভাইরাস কাজ করছে সেটা কতটুকু ভয়াবহ, এটা শুধুমাত্র অনুমান করা হয়েছে, তাকে এখনও পুরোপুরি চেনা যায়নি। অনেকেই মনে করছেন ভাইরাস এখন বাতাসে রয়েছে এবং তার মারন-ক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেশি। কারন এই বছর মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে গত বছর থেকে অনেক বেশি। তারা প্রত্যেক ব্যক্তিকে আগের থেকে অনেক বেশী সচেতন থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের বয়ান, “প্রশাসন নিয়ম বানিয়ে দিতে পারে, তবে সেটা কাজে আসবে যখন জনগণ মানতে চাইবেন।”
Comments are closed.