Also read in

টিসিএস এবং অন্যান্য এমএনসি'র লোভনীয় প্রস্তাব সরিয়ে দিয়ে লক্ষ্যে পৌছলেন আহমদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী

হাইলাকান্দির আহমেদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী গতকাল ইউপিএসসি পরীক্ষার ঘোষিত মেধা তালিকায় ২৮৩ তম স্থান অর্জন করেছেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা, যা বিশ্বের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হিসেবে চিহ্নিত, এই পরীক্ষায় চৌধুরী তার তৃতীয় প্রচেষ্টায় সফল হলেন। তিনি নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।

গতকাল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথে বরাক উপত্যকা আনন্দ মুখর হয়ে উঠে। আহমদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী ২০১২ সালে গুয়াহাটির ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০১৭ সালে বি-টেক শেষ করার পর তিনি নিজের ই-কমার্স স্টার্টআপের দিকে এগিয়ে যান। আহমদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আমার প্রাথমিক ফোকাস ছিল সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং তাই ক্যাম্পাস অফার পাওয়া সত্ত্বেও আমি কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগদান করিনি।” বর্তমানে সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে তিনি যা মাইনে পাবেন তার চেয়ে অনেক বেশি পেতেন যদি তিনি টিসিএস বা অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানিতে যোগদানের প্রস্তাব গ্রহণ করতেন। বিদেশ ভ্রমণ, লোভনীয় মাইনের হাতছানি কাটাতে কি জিনিস তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল ! “আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে যোগদান করে, আমি আমার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারব না। আমার জন্য, জীবনের অর্থ জনসেবায় নিহিত, যা আমি একমাত্র সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েই করতে পারতাম এবং তাই আমি এর জন্য প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছিলাম, ” বলেন হাসানুজ্জামান চৌধুরী। তিনি এই পরিশ্রম সাপেক্ষ পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিতে তার পরিবারের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছেন তার প্রশংসা করেন। তার বয়স বাড়ছিল এবং দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, সাধারণত, এক সাধারণ পরিবার আশা ভরসা হারাতে শুরু করে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে, তার পরিবার সর্বদা সহায়ক ছিল। “আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হল আমার পরিবার – আমার বাবা -মা। আমার দাদু, যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আমাকে আমার প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করেছিলেন,” তিনি যোগ করেন। তার বাবা জাকির আহমেদ চৌধুরী আসাম ইলেকট্রনিক্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চীফ জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পরিবারের তৃতীয় এবং কনিষ্ঠ সন্তান। তার বড় বোন ডাঃ সালমা ফেরদৌস চৌধুরী শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ; আরেক বোন হায়দ্রাবাদে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। আহমেদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী জানান যে, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে নিজে প্রস্তুতি নেওয়াটা ছিল তার প্রাথমিক ফোকাস। তিনি হিন্দু এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতো খবরের কাগজ, এনসিইআরটি’র বইয়ের উপর নির্ভর করেছিলেন। তিনি ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বেছে নিয়েছিলেন। যখন তিনি ইউপিএসসি -র প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তিনি ইগনুতে(IGNOU) ভর্তি হন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ সম্পন্ন করেন। “এই এমএ পড়া, ঐচ্ছিক বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেছিল,” তিনি বলেন।
“জনগণের সেবা,” এটাই তার জীবনের লক্ষ্য। মেধা তালিকার ২৮৩তম স্থানে তাকে যে সেবায় নিয়োজিত করা হবে, সেটাতেই তিনি যোগদান করবেন। আহমদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “আমার সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা হল আইএএস, কিন্তু সকল সেবা সমান এবং জনসেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।”

আইএএস, আইপিএস বা আইএফএস … বরাক উপত্যকার মানুষের জন্য আহমদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী বা বিক্রম কৈরি হাজার হাজার যুবক যুবতীর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। এই ধরনের ফলাফলে বরাক উপত্যকার তরুণরা নিজেদের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেছে এবং আরও বেশি করে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে আগ্রহী। বিক্রম কৈরি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন, যখন তিনি মাজুলির জেলা উপায়ুক্ত হয়েছিলেন। এখন আহমেদ হাসানুজ্জামান চৌধুরী ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

Comments are closed.