'মিস টিজিপিসি'র ফাইন্যালিস্ট, শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী তেজস্বিনীর সঙ্গে কিছুক্ষণ
আমাদের অনেকেরই ধারণা, ছোট্ট শহরের মেয়েদের জন্য সুন্দরী প্রতিযোগিতাগুলো স্বপ্নসম। আবার এমনও ধারণা রয়েছে যে লম্বা হলে এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা জরুরি। কিংবা ক্যারিয়ার এবং স্বপ্নকে সাকার করার দৌঁড়, দুটো কিছুতেই পাশাপাশি চলতে পারেনা।
কিন্তু তেজস্বিনী বি রাভা এই বদ্ধ ধারণাগুলোকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে প্রবেশ করলেন ভারতের ‘মিস টিজিপিসি’ ( দ্য গ্রেট পেজেন্ট কমুইনিটি) সপ্তম মরশুমের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়। স্বপ্নদ্রষ্টা রাভা আসামের বঙ্গাইগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ বছর বয়সী রাভা বর্তমানে আসামের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করছেন।
তেজস্বিনী বিশ্বাস করেন যে ভারতের ‘মিস টিজিপিসি’ হল বিশ্বের সেরা অনলাইন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, যেখানে যে কেউ নিজের ঘর থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। “এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য সম্মানের যে পূর্বের সুন্দরী নেহাল ছুদাসামা, (মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া, ২০১৮) শ্রদ্ধা শশীধর (মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া, ২০১৭), প্রিয়াঙ্কা কুমারী (এফবিবি কলরস ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া ২০১৭, সেকেন্ড রানার আপ)দের সঙ্গে স্টেজ ভাগ করা। বরাক বুলেটিনে অবদানকারী এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র ছাত্র কুশল দেব রায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় তেজস্বিনী এ কথাগুলো বলেন।
তেজস্বিনীর সঙ্গে কথোপকথনের সম্পাদিত অংশ :
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে আপনাকে কি অনুপ্রাণিত করেছিল?
আমি সবসময় সুন্দরীদের দেখে মুগ্ধ হয়েছি।আমি যখন ছোট ছিলাম তখন সুস্মিতা সেন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন’র মত মডেলদের দেখতাম। একদিন তাদের পারফরমেন্সের ভিডিওগুলো দেখার সময় আমি লক্ষ্য করি যে মিস ইউনিভার্স মিস ওয়ার্ল্ড ইত্যাদির মতো বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের নিজেদের নামে সম্বোধন করা হয় না, বরং দেশের নামে সম্বোধন করা হয়। ঠিক সেদিন থেকেই আমি মিস ইন্ডিয়া নামে পরিচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম এবং এই দুই কালজয়ী আইকনের উত্তরাধিকার বহন করি।
আপনি কিভাবে আপনার মেডিক্যালের পড়াশোনা এবং একই সঙ্গে মডেলিংয়ের স্বপ্ন পূরণে ব্রতী হচ্ছেন?
আসলে কি জানেন? আপনি যদি উৎসাহী হন তবে কিছুই অসম্ভব নয়। মিথ্যে বলা হবে যদি আমি বলি যে দুটো কাজ আমি খুব সহজে করে নিচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি এটা অসম্ভব নয়।আমি এও বিশ্বাস করি যে যদি আপনি কোন কিছুর প্রতি আগ্রহী হন তবে আপনি যতই ব্যস্ত হোন কিংবা যতই ক্লান্ত হোন না কেন আপনি এ জন্য কাজ করে যেতে পারবেন। এটি আসলে সময় থাকা বা না থাকার বিষয় নয়, বরং সময় বের করার বিষয়।আপনি যদি কিছু করতে পছন্দ করেন তবে কখনই ক্লান্ত বোধ করবেন না। একই ব্যাপার ঘটছে আমার সঙ্গেও।
কিভাবে এই সুন্দরী প্রতিযোগিতা এবং মডেলিং আপনাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে প্রভাবিত করেছে?
আসলে ‘টিজিপিসি’ সব সময় আমাকে যেখানে আমার খামতি রয়েছে সে বিষয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে এবং আমি যেভাবে সেভাবেই নিজে গর্বিত বোধ করতে শিখিয়েছে।এই প্রতিযোগিতা আমাকে গর্বের সঙ্গে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে সাহস যুগিয়েছে যে আমি তেজস্বিনী বি রাভা এবং ৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা।
কে আপনার অনুপ্রেরণা কিংবা কে আপনাকে এগুলো করতে অনুপ্রাণিত করে?
ভারত থেকে আমাদের প্রথম মিস ইউনিভার্স ‘বিউটি কুইন’ সুস্মিতা সেন।
ভবিষ্যতে যদি এমন একটা পরিস্থিতি উদয় হয় যে আপনাকে মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এবং মডেলিং’র মধ্যে কোন একটা বেছে নিতে হবে। তাহলে আপনি দুটোর মধ্যে কোনটার সঙ্গে যেতে পছন্দ করবেন?
মডেলিং এবং প্রতিযোগিতা বা প্রদর্শনের প্রতি আমার গভীর আসক্তি। আমি এই দুটি ক্ষেত্রই চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু কথাটা যখন চিকিৎসা বিষয়ে হয় তখন এসে যায় আমার মায়ের কথা। কারণ আমার মা সবসময়ই এ নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি আমার যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণে খুব কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং ঘাড়ে স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে আমাকে রোগীদের চিকিৎসা করার স্বপ্ন দেখেছেন। আমার মা’র স্বপ্নপূরণের সময় এখন এসেছে। মডেলিংয়ের প্রতি চিরকালই আমার আসক্তি থাকবে। তবে চিকিৎসা তথা রোগীদের শুশ্রূষা করা আমার পেশা।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় প্রবেশের আগে বাবা-মাকে বোঝানো আপনার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল?
সত্যি, প্রত্যেক মা-বাবার মতো আমার মাও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। পঞ্চম মরশুমে আমি তাকে না জানিয়ে আবেদনপত্রটি ভরেছিলাম। আমি আমার জমানো টাকা থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করেছিলাম। পরবর্তীতে যখন তিনি আমাকে এতে সত্যিই খুব ভালো করতে দেখলেন তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এক্ষেত্রেও আমার বড় কিছু করার দক্ষতা রয়েছে এবং তখন তিনি আন্তরিকভাবে আমাকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন। এই মরসুমে প্রথম থেকেই তিনি আমার সঙ্গে আছেন।
এই অঞ্চলে এমন অনেকেই আছেন যারা মডেল হতে পছন্দ করেন। তবে সামাজিক নিন্দা বন্দনার ভয়ে সাহস করতে পারেন না। তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
দেখুন, এর সম্পূর্ণটাই আপনার এবং আপনার দৃষ্টিকোণের ওপর নির্ভর করে। যারা এই মডেলিং জগতের সঙ্গে জড়িত তারা কিন্তু এটিকে খারাপ বানাননি। এটি আসলে লোকেদের মানসিকতা, যারা এটিকে খারাপ চোখে দেখেন। সবচেয়ে প্রথমে মডেলিং এর মূল অর্থ কি তা বুঝতে হবে। আপনি যখন মডেল হন তখন আপনি মূলত বিভিন্ন ডিজাইনারদের জন্য কাজ করেন। তারা আপনার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশৈলীগুলোকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেন এবং আমার মনে হয় এর মধ্যে কোন খারাপ কিছু নেই। এছাড়া মডেলিং এবং প্রদর্শনীর মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে। প্রদর্শনীতে আয়োজকরা তাদের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজনের সন্ধান করেন, যিনি তাদের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। অন্যদিকে মডেলিংয়ের সময় আপনি এমন একজন, যিনি ফটোগ্রাফারের ফটোগ্রাফির দক্ষতার মাধ্যমে ডিজাইনারদের সৃজনশীলতাকে প্রদর্শন করছেন।
Comments are closed.