বিশ্বকাপ খেলতে না পারার দুঃখ আজও তাড়া করে শিলচরের জেনচুনকে
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে বসেছিল ফিফা অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের আসর। আয়োজক দেশ হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিল ভারত। সেবারের বিশ্বকাপ নিয়ে গোটা দেশের সঙ্গে স্থানীয় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যেও দারুন উৎসাহ ছিল। এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল। এক, ভারতের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের আসর। দুই, প্রথমবার ফিফা বিশ্বকাপের আসরে খেলতে নেমেছিল ভারত। আর তিন, ভারতীয় বিশ্বকাপের স্কোয়াডে স্থান পাওয়ার দারুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল শিলচরের ছেলে জেনচুন রংমাই। এই তিন নং কারণটির জন্য এখানকার ফুটবলপ্রেমী দের মধ্যে সেই বিশ্বকাপ নিয়ে একটি বাড়তি উৎসাহ ছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত দারুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলে বিশ্বকাপের দলে স্থান করতে পারেনি জেনচুন। বিশ্বকাপের ফাইনাল সিলেকশনে জেনচুনকে বাদ দিয়ে দেন ভারতের জার্মান কোচ অ্যাডাম নিকোলা। অল্পের জন্য স্বপ্ন হাতছাড়া হয়ে যায় জেনচুনের। বিশ্বকাপ না খেলার দুঃখ আজও তাড়া করে শিলচরের তরুণ ফুটবলারকে।
২০১৫ সাল থেকেই অনূর্ধ্ব ১৭ ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল ভারত। ২৫-৩০ জনের একটা প্রাথমিক দল বাছাই করা হয়েছিল। সেই দলে ছিলেন শিলচরের তরুণ মিডফিল্ডারও। ছেলেদের এক্সপোজারের জন্য সেই সময় স্পেন, জার্মানি এবং বাংলাদেশ সফর করেছিল ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দল। ইউরোপ সফরে দেশের জার্সি গায়ে ম্যাচও খেলেছিলেন জেনচুন। ভালো পারফর্ম করেছিলেন। ফলে কোচের সুনজরে ছিলেন। ইউরোপ সফরকালে ২০১৫ সালে স্পেনের লা লিগার একটি ম্যাচও দেখেছিলেন জেনচুন। ভ্যালেন্সিয়ার ঘরের মাঠে বসে লা লিগা উপভোগ করেছিলেন শিলচরের টিন এজ ফুটবলার। সে ছিল দারুণ এক অভিজ্ঞতা। সবকিছুই সঠিক পথে এগোচ্ছিল। কিন্তু দারুন আশা জাগিয়েও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দল থেকে ছিটকে যান জেনচুন।
বিশ্বকাপ দল থেকে জেনচুন ছিটকে গেলেও তার সহ খেলোয়াড়রা কিন্তু ফিফার মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। জেনচুন জানান, মনিপুরের অমর জিৎ সিং এবং ধীরাজ সিংয়ের মত ফুটবলারদের সঙ্গে তার দারুণ বন্ধুত্ব জমে উঠেছিল। তবে এখন সবই অতীত। ধীরাজরা অনেকটা এগিয়ে গেছেন। আর বাস্তব হচ্ছে ফুটবলার হিসেবে নিজেকে ফের একবার প্রমাণ করার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে জেনচুনকে। কিন্তু করোনার জেরে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
মহামারি ভাইরাসের জন্য গত মরশুমে শিলচরের গোটা ফুটবল মরশুম বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এবারও পরিস্থিতি সেই একই পথে এগোচ্ছে। গোটা দেশের সঙ্গে বরাক উপত্যকা তেও প্রতিদিন করোনা সংক্রমনের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের সব টুর্নামেন্ট সহ স্টেডিয়ামের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ফলে এবারও ফুটবল মরশুম শুরু হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই।
করোনার জেরে ফুটবলের প্র্যাকটিসও করতে পারছেন না জেনচুন। মিনি লকডাউনের আগে রোজ সকালে শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমি মাঠে অনুশীলন করতেন তিনি। তবে এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। তারাপুর নিজের বাড়িতে হালকা গা ঘামিয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে। দু’বছর আগে শিলচর সুপার ডিভিশন লিগে অরুণাচল এস এসের হয়ে খেলেছিলেন জেনচুন। তবে গতবছর আর মাঠে নামা হয়নি। এবার তো এখন পর্যন্ত দল বদলের প্রক্রিয়াই সম্পুর্ণ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই জেনচুনের সঙ্গে কোন ক্লাব যোগাযোগ করেনি।
বিশ্বকাপ না খেললেও ইউরোপ ও এশিয়া সফরে ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জেনচুন। ফলে স্থানীয় ক্রীড়ামহল তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এখন পর্যন্ত সেই প্রত্যাশার মান রাখতে পারেননি শিলচরের এই মিডফিল্ডার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের ফুটবলকে নেক্সট লেভেল এ নিয়ে যেতে পারেননি। এটাই তাকে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে দিয়েছিল। শীর্ষস্তরে টিকে থাকতে হলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুবই জরুরি। এখানেই জেনচুনের আসল সমস্যা। জুনিয়র স্তরের সেই অভিজ্ঞতা কে একজন তরুণ ফুটবলার হিসেবে কাজে লাগাতে পারছেন না তিনি। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেনচুনের আশা, করোনার প্রকোপ শেষ হবার পর ফুটবল মরশুম শুরু হলে নিজেকে নতুন করে মেলে ধরতে পারবেন।
Comments are closed.