Also read in

সংখ্যালঘুরা সরকারি প্রকল্প ভোগ করলেও বিরোধীদের ভোট দিয়েছেন, অভিযোগ জেলা বিজেপির

নির্বাচনী প্রচারে বিজেপির স্থানীয় প্রার্থী থেকে শুরু করে দলের রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের স্টার ক্যাম্পেইনাররা পর্যন্ত বারবার বলেছেন, “মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা এখন বিজেপিকে ভয় পাননা, তারা বিজেপিকে ভোট দিতে শিখে গেছেন।” অথচ ফলাফল ঘোষণার একদিন পর প্রাথমিক সমীক্ষার ভিত্তিতে কাছাড় জেলা বিজেপির সদস্যরা উল্টো সুরে কথা বলছেন। তাদের অভিযোগ, যেসব এলাকায় মুসলমান ভোটদাতাদের সংখ্যা বেশি, সেখানে বিজেপির প্রার্থী ভোট কম পেয়েছেন। তার মানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বিজেপির প্রার্থীদের ভোট দেননি, ফলে উপত্যকার উন্নতিতে এত কাজ করেও বিজেপি আশানুরূপ ফল পায়নি। সোমবার বিকেলে ইটখোলার কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে কথাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি বিমলেন্দু রায়, দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা নিত্য ভূষণ দে, অভ্রজিত চক্রবর্তী, দীপন দেওয়ানজি, গোপাল রায় এবং দেবাশীষ সোম।

তারা বলেন, “বিজেপি সরকার গত পাঁচ বছরে সারা রাজ্যের সঙ্গে বরাক উপত্যকার উন্নতির স্বার্থে অসংখ্য প্রকল্প চালু করেছে এবং এর ফল ভোগ করেছেন রাজ্যের প্রত্যেকে। সরকারি প্রকল্পের লাভ থেকে বাদ পড়েননি কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা। অথচ নির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা সরাসরি বিজেপির বিরোধিতা করেছেন। তারা দায়িত্ব নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন এবং বেশি সংখ্যায় দিয়েছেন, এতেই বরাক উপত্যকায় দলের প্রার্থীরা একের পর এক পরাজিত হয়েছেন। শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের কথা সামনে রেখে এক সম্প্রদায়ের লোকেরা এভাবে ব্যবহার করবেন, এটা আমরা আঁচ করতে পারিনি। এবার হয়তো নিজেদের পরিকল্পনায় অনেকটাই পরিবর্তন আনা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমনটা না হয়।”

তবে হঠাৎ করে এমনটা মনে হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, “শিলচর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটদাতার সংখ্যা কম। সেখানে বিজেপির প্রার্থীরা সহজে জয়ী হয়েছেন এবং ভালো ভোটও পেয়েছেন। আমাদের প্রাথমিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা ৯০ শতাংশের বেশি ভোট দিয়েছেন। যারা কাছাড় জেলার বাইরে ছিলেন তারা নির্বাচনের দিন বা তার আগে এলাকায় পৌঁছে গেছেন এবং দায়িত্ব নিয়ে ভোট দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য তারা কংগ্রেস-এআইইউডিএফ জোটের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অথচ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এব্যাপারে উদাসীন, তারা পরোয়া করেননি নিজের সম্প্রদায়ের লোকদের খাতিরে অন্তত ভোট দিতে যাবেন বলে। এতেই আজ পরিস্থিতি এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। বরাক উপত্যকার ১৫ টি আসনের মধ্যে ৮টিতে মুসলমান প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন এবং সেখানে একজনও বিজেপির নন। এখনও যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ভবিষ্যতের পরিস্থিতি আঁচ করতে না পারেন, তাহলে ভুগতে হবে তাদেরই।”

দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা কতটুকু ক্ষতি করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জেলা বিজেপির বয়ান, “হাতেগোনা কয়েকজন বিরোধিতা করেছেন এবং তাদের জন্য কিছু কিছু এলাকায় প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে সোনাই সমষ্টিতে। এমনকি লক্ষীপুর আসনের থৈবা সিংহ প্রায় কুড়ি হাজার ভোট পেয়েছেন, তবু সেখানে বিজেপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। শিলচরে প্রাক্তন বিধায়ক খুব একটা বেশি প্রভাব ফেলতে পারেন পারেননি, বিজেপির প্রার্থী প্রায় এক লক্ষ ভোট পেয়েছেন। এই বিষয়ে আগামীতে পর্যালোচনা করা হবে এবং নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি যেন এরকম না হয় সেটার দিকে নজর রাখা হবে।”

বিজেপির আসন কমলেও ভোট বেড়েছে এমনটাই দাবি জেলা বিজেপির। তারা বলেন, শুধুমাত্র যোগ্য আসনে নয় যেসব এলাকায় বিজেপির প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন সেখানেও অতীতের রেকর্ড ভেঙে নতুনভাবে বেশি ভোট পেয়েছেন দলের প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন যেহেতু সংখ্যার খেলা, সেখানে কয়েকটা সমীকরণ এলোমেলো হয়ে গেছে এবং আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ পালন করে আগে থেকেই বিজেপির সদস্যরা জানিয়ে দিয়েছিলেন প্রার্থীরা জয়ী হলে কোনও ধরনের বিজয়োল্লাস হবে না, কেউ আবির খেলবেন না এবং কেউ বাজি-পটকা ফাটাবেন না। নির্বাচনের পর তারা কথা রেখেছেন এবং কোন ধরনের বিজয়োল্লাস হয়নি। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের তরুণ ব্রিগেডকে বিভিন্ন দায়িত্বে কাজে লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা নিত্য ভূষণ দে।

Comments are closed.