Also read in

নিষ্ফলা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপে অসমের জমি থেকে পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নিতে রাজি হল মিজোরাম

বুধবার সকালে অসম এবং মিজোরামের গৃহসচিব মুখোমুখি বসছেন, এটা নিয়ে সীমান্ত এলাকায় অত্যন্ত উৎসাহ ছিল। তবে ম্যারাথন বৈঠকের পর কোন সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি, মিজোরাম প্রশাসন জমিবিবাদ নিয়ে কথা বলতে রাজি নয়, তারা চায় শুধু রাস্তা খুলে ট্রাকগুলো যেতে দেওয়া হোক। অসমের গৃহসচিব বলেন, শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। এতে এলাকার মানুষ নিরাশ হন এবং জোর গলায় বলেন, সমস্যার সমাধান না হলে মিজোরামের কোনো ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে না।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে উত্তর-পূর্বের দায়িত্বে থাকা জয়েন্ট সেক্রেটারি সত্যেন্দ্র কুমার গার্গ সেদিন হঠাৎ করেই শিলচরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। লায়লাপুরে বৈঠক শেষ হওয়ার পর আসাম এবং মিজোরামের গৃহসচিব শিলচরের সার্কিট হাউসে তার সঙ্গে দেখা করতে উপস্থিত হন। সেখানে আরেক দফা ম্যারাথন বৈঠক হয়। শেষমেষ মিজোরামের গৃহসচিব জানিয়ে দেন, তারা অতিসত্বর অসমের জমি থেকে তাদের পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেবেন। পরবর্তীতে সীমা নির্ধারণ নিয়ে কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় বৈঠক হবে। পাশাপাশি এখন থেকে স্বাভাবিক গতিতে মাল বোঝাই গাড়ি সহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সত্যেন্দ্র কুমার গার্গ বলেন, “অসম এবং মেঘালয় সীমান্ত ভারতবর্ষেরই দুই রাজ্য, যদি কোনও বিবাদ থাকে সেটা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে হবে। ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝির জন্য যাতে কোনোভাবেই এলাকায় অশান্তির পরিবেশ গড়ে না ওঠে এটা দেখার দায়িত্ব প্রত্যেকের। আমরা আপাতত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বৈঠক করেছি। মিজোরামের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,যেসব এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সেখানে নানান সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তারা সীমান্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তবে এবার তাদের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অতিসত্বর অসম সীমান্ত থেকে তাদের রাজ্যের পুলিশ বাহিনী হটিয়ে নেওয়া হবে। দুই রাজ্যের সীমান্ত নিয়ে যেসব কথা রয়েছে সেটা আমরা আগামীতে আলোচনা করব।”

এরপর তিনি অসমের গৃহসচিব জ্ঞানেন্দ্র দেব ত্রিপাঠিকে পুরো বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে দিতে বলেন। ত্রিপাঠি বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম সর্বতো অবস্থায় এলাকায় আইন শৃঙ্খলা এবং শান্তি বিরাজ করুক, এই উদ্দেশ্য নিয়েই পুরো বৈঠক হয়েছে। যেহেতু আমরা একই দেশের দুটি রাজ্য, যেকোনো সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান করা সম্ভব। এমনটাই হয়েছে, কেন্দ্র সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উপস্থিতিতে সমাধানসূত্র বেরিয়েছে। আগামীতে যাতে এধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখব।”

মিজোরামের গৃহসচিব পি লালবিয়াকসাঙ্গি বলেন, “বৈঠকে আসার পেছনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যান চলাচল স্বাভাবিক করা। রাজ্যে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র ঢুকছিল না, ফলে সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েছেন। আমরা সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু উপদ্রব দেখতে পেয়েছি তাই পুলিশ মোতায়েন করেছিলাম। এতে জমি জবর দখলের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। এবার যখন কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আমরা আমাদের পুলিশ বাহিনী পুরনো সীমান্ত পর্যন্ত নিয়ে যাব। সীমান্ত নির্ধারণের ব্যাপারে আমাদের যেসব কথাবার্তা রয়েছে সেটা আগামীতে কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে হবে।”

বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বেশ কিছু আটকে থাকা ট্রাক বুধবার রাতে মিজোরাম প্রবেশ করেছে, সেখানে আটকে থাকা গাড়িগুলো বেরিয়ে আসার পথে। এব্যাপারে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে এজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পরিস্থিতি উত্তাল হওয়ার পর আমরা এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং তাদের কাছে সমস্ত তথ্য তুলে ধরেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমাধান সূত্র বের করে দিয়েছেন। আমরা এতে আশ্বস্ত, আগামীতে এধরনের যাতে ভুলবোঝাবুঝি না হয় সেদিকে নজর থাকবে।”

Comments are closed.