মিজোরামের নিজের দেওয়া কথা রাখা উচিত, বললেন বিদায়ী মুখ্য সচিব
রাজ্যপালের জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী আজ থেকে রাজ্যের নতুন মুখ্য সচিব হচ্ছেন জিষ্ণু বড়ুয়া। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রাক্তন মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের মুখ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণা। কোভিড পরিস্থিতিতে দক্ষ হাতে প্রয়োজনীয় সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গতকাল তার চাকরি জীবনের শেষ দিন ছিল। বিদায়বেলায় বরাক বুলেটিনের সঙ্গে ফোনে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন তিনি।
১৯৮৫ ব্যাচের আইএএস কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণা ৩১ অক্টোবর অবসর নিয়েছেন। অসমের মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে কেন্দ্র সরকারের অর্থ বিভাগ ও কৃষি বিভাগের বিশেষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিউ ইয়র্কে টি বোর্ডের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। অসমের কামরূপ’ এবং শোনিতপুর জেলার জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি মুখ্যসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাসের মধ্যেই করোনাভাইরাস আক্রমণের কঠিন সময় এসে দাঁড়ায়। কেন্দ্র সরকারের গঠিত নির্দেশ গুলোর উপর ভিত্তি করে আরো কঠিন নিয়মাবলী বানানো হয়েছে অসমে। যদিও সেগুলো ঘোষণা স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেছেন কিন্তু নিয়ম নীতি গড়ে তোলা এবং সরকারি স্তরে এগুলো পালনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা ছিল মুখ্যসচিবের। এই সময়কে তিনি যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তবে পরিস্থিতি যখন উপরে এসে পড়েছে সেটা সামাল দিতেই হতো। শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা বিশ্বে এই পরিস্থিতিকে যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, আমরা এর বাইরে ছিলাম না। প্রয়োজনে রাজ্য সরকার অনেক কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু এতে সুফল পাওয়া গেছে। আজ সারা দেশের কাছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের রাজ্য একটি অন্যতম সফল মডেল। অবশ্যই এর পিছনে হাজার হাজার মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের সাধ্যমত সেরাটুকু নিংড়ে দিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসে ধীরে ধীরে সব মেনে নিয়েছেন সেটাও ভুললে চলবেনা।’
কোভিড পরিস্থিতি চলাকালীন আরেক অসুবিধার মুখোমুখি হয় অসম রাজ্য। মিজোরামের পুলিশ কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দিতে ধীরে ধীরে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করে। কাছাড় জেলায় বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়া হয়। এব্যাপারে তিনি বলেন, “নানান পদ্ধতি ব্যবহার করে মিজোরামের পুলিশবাহিনী অসমের জমিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। তবে বিষয়টি শুধু রাজ্য সরকারের সীমিত নয়, কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সরাসরি এব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন। আমরা বিভিন্ন স্তরে একের পর এক বৈঠক আয়োজন করেছি, উদ্দেশ্য ছিল এলাকায় শান্তি প্রতিস্থাপন করা। কেন্দ্র সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকের মধ্যস্থতায় দুই রাজ্যের গৃহসচিব বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মিজোরাম সরকারের প্রতিনিধি কথা দিয়েছিলেন তারা অসমের জমি থেকে পুলিশ বাহিনী উঠিয়ে নেবেন। তারা যদি কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধির সামনে কথা দিয়ে থাকেন, সেই কথা পালন করা উচিত। আমাদের তরফে কথা দেওয়া হয়েছিল পণ্যবাহী ট্রাক মিজোরামে যেতে দেওয়া হবে, সেই কথা আমরা রেখেছি। বৈঠকের পর দুই হাজারের বেশি ট্রাক মিজোরামে প্রবেশ করেছে। অথচ মিজোরাম সরকার অসমের জমি থেকে এক ইঞ্চিও তাদের সেনাবাহিনীকে সরায়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। তারা যদি এমনটাই করবেন তাহলে কেন্দ্র সরকারের প্রতিনিধির সামনে কেন কথা দিলেন? আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এই ব্যাপারে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। আমার পরবর্তীতে এবার যিনি আসছেন তিনিও একই ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। তবে আমি বলবো, সর্বাবস্থায় মিজোরাম যে কথা দিয়েছে সেটা তাদের রাখা উচিত।”
গত কয়েক বছরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে নানান দুর্নীতির কথা উঠে আসছে। এরমধ্যে রয়েছে এপিএসসি এবং পুলিশের মত বিভাগ। এক সময় পুলিশ সহ বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন। নাম উঠে এসেছে বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের পর্যন্ত। এতে জনমনে সরকার তথা সরকারি বিভাগের সম্বন্ধে সন্দেহ বেড়েছে। এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “বিভাগীয় দুর্নীতি রোধ করতে বিভাগের মানুষকে কাজে লাগিয়ে খুব একটা সফল হওয়া সম্ভব নয়। কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন পরীক্ষায় অন্যান্য বিভাগের লোকেদের ব্যবহার করা হয় এবং সেটা করার জন্য একটা নিজস্ব বোর্ড থাকে। আমরাও চেয়েছিলাম এধরনের বিশেষ বোর্ড গড়ে তুলতে। সরকারের কাজের বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ দিক থাকে যেগুলো জনসমক্ষে আমরা তুলে ধরতে পারিনা। তবে এটুকু বলা যায় হয়তো আগামীতে এধরনের বিশেষ দল বা বোর্ড গঠন করে দুর্নীতি রোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তৃণমূলের দুর্নীতি রোধ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ, তবে বর্তমান সরকার চাইলে নানান পদক্ষেপ নিতে পারেন। এব্যাপারে আমাদের বারবার আলোচনা হয়েছে।”
মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘অনেক অনেক মুহূর্ত রয়েছে যেগুলো আমার সারা জীবন মনে থাকবে। তবে এই দুঃসময়ে সেগুলো নিয়ে না হয় কথা নাই বললাম। আরও কোনো একদিন হবে এব্যাপারে আলোচনা।’
Comments are closed.