ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে করিমগঞ্জকে উপেক্ষা করছে সরকার, অভিযোগে ধরনায় বসলেন বিধায়ক কমলাক্ষ
করিমগঞ্জে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা জেলা পরিদর্শন করছেন এবং মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, এই অভিযোগে ধরনায় বসেছেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা বিধানসভায় বিরোধী দলের সহ সচেতক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন ভ্যাকসিনের অভাব রয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগান এখনও পাওয়া যায়নি। তারা বারবার সরকারের কাছে কথাগুলো জানিয়েছেন এবং আশা করছেন আগামীতে আরও বেশি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল ঘোষণা করেছেন ২১ জুন থেকে কেন্দ্র সরকার সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রধানের দায়িত্ব নেবে এবং ১৮ বছরের উর্ধ্বে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে বরাক উপত্যকায় ভ্যাকসিন কম পাঠানোর অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার বলা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু আদতে অন্যান্য জেলার তুলনায় বরাক উপত্যকায় ভ্যাকসিন কম এসেছে।
কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ধরনায় বসে অভিযোগ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার করিমগঞ্জ জেলাকে উপেক্ষা করছে। তিনি বলেন “রাজ্যের অন্যান্য এলাকার তুলনায় আমাদের অনেক কম ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেখানে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকার প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দিচ্ছে বলে বার বার কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে আমরা চোখের সামনে দেখছি মানুষ ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না। আমরা বারবার স্বাস্থ্যবিভাগের আধিকারিক থেকে শুরু করে সরকারের কাছে কথাগুলো তুলে ধরেছি, কিন্তু তারা আমাদের উপেক্ষা করছেন। এর প্রতিবাদে আজ আমরা ধরনায় বসেছি, যদি এতে পরিবর্তন না হয় আমরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
গতবছর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ শয্যা গড়ে তোলা হবে। পিএম কেয়ার থেকে এইজন্য প্রয়োজনীয় বহুমূল্য জিনিসপত্র পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেশব মহন্ত বরাক উপত্যকা পরিদর্শন করেন। তিনি করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে গিয়ে সেখানে পরিকাঠামোগত উন্নতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কুড়ি দিনের মধ্যে হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা গুলো চালু করা। তবে সেটা পেরিয়ে গেলেও এখনও ঠিকমতো কাজই শুরু হয়নি, এমনটাই অভিযোগ বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের।
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন অথচ সরকারি আধিকারিকরা কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এর দুটো মানে হতে পারে, প্রথমটা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দ্বিতীয়টা সরকারি আধিকারিকরা মন্ত্রীকে একেবারেই পাত্তা দেননি। দুই ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারকে নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য অন্তত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই কঠিন পরিস্থিতিতে জনগণের স্বার্থকে আরেকটু গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।”
করিমগঞ্জ জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, “জেলায় ভ্যাকসিনের যোগান তুলনামূলকভাবে কম, ফলে একসঙ্গে সবাইকে সেটা প্রদান করা যাচ্ছে না। ১৮ থেকে বেশি যারা রয়েছেন তাদের তালিকা আগেই সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তারা জানেন কতটুকু ভ্যাকসিন পাঠাতে হবে। যেহেতু দুটো ডোজ দিতে হয়, ফলে পরিকল্পনা করে আমরা বিভিন্ন স্তরে ভ্যাকসিনগুলো পাঠিয়ে দিচ্ছি। সরকারের তরফে বলা হয়েছে আগামীতে আরও বেশি ভ্যাকসিনের জোগান দেওয়া হবে, তখন কাছাড় জেলার মত আমরাও বিশেষ কিছু ড্রাইভ চালিয়ে একসঙ্গে অনেক বেশি লোককে ভ্যাকসিন দিতে পারব।”
বিভাগের তরফ জানানো হয়েছে জেলায় এখন পর্যন্ত কোভিশিল্ড প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৭৯২৯৬ জনকে এবং দ্বিতীয় টা পেয়েছেন ১৯২২৩ জন ব্যক্তি। কোভ্যাকসিন প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১২২৯০ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৬৪১ জন।
Comments are closed.