বরাক যা চাইছিল মোদি তা দিতে পারলেন না
‘ভারত মাতা কি জয়! ইংরেজি শুভ নববর্ষ, আগামী মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে আমি বরাকের সমস্ত জনগনকে জানাচ্ছি আমার শুভেচ্ছা।’ ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় প্রধানমন্ত্রী শুরু করলেন ভাষণ, তারপরই নিজস্ব স্টাইলে সাবলীল হিন্দি।
কিন্তু বরাকের মানুষ যে মোদ্দা কথাটা শুনতে চাইছিল তার কাছ থেকে সেটা তার ৩০ মিনিটের ভাষণে অশ্রুত রয়ে গেল।
বরাকের মানুষ জানতে চেয়েছিল এনআরসি-ছুটদের অবস্থান ; দিশেহারা এনআরসি-ছুট প্রায় সেই ১২ লক্ষ লোক, যারা আবেদনই করতে পারেননি তাদের ভবিষ্যতটা কী দাঁড়াবে সেটা বুঝতে। আশ্বাস এসেছে, প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়বে না। যারা আবেদনই করতে পারেনি তাদের নাম বাদ পড়াটা তো অবধারিত, ‘রুধিবে কি দিয়া’? যারা দাবি পেশ করেছে তাদের মধ্যেও কিছু সংখ্যক আবেদন বাতিল হবে, তার ওপর রয়েছে আপত্তির আড়াই লক্ষ। প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক কারা সেটা তো এখনো ঠিকই হয়নি। আর নাগরিকত্ব বিলের হাত ধরে যদি সেই আশ্বাস এসে থাকে তবে তাতে ভরসা করার মতো কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ এখনো ঘটেনি, সেটা এখনো বিশ বাঁও জলে।
বরাকের মানুষ শুনতে চেয়েছিল কাছাড় কাগজ কল আবার বাঁচিয়ে তোলা নিয়ে কিছু বাস্তব পদক্ষেপের কথা। সেখানেও হোঁচট খেতে হল, ভাষণে এর কোনও উল্লেখই নেই। কাগজ কলটা যে এতদঞ্চলে একটা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে তা প্রধানমন্ত্রীকে হয়ত জানানোই হয়নি আর না হলে তিনি ইচ্ছে করেই চেপে গেলেন।
বরাকের মানুষ শুনতে চেয়েছিল পাঁচ বৎসর আগের প্রতিশ্রুত ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়ার পদক্ষেপের কথা। সেটা অব্যক্ত থেকে প্রমাণ করল যে, নতুন করে ডিটেনশন ক্যাম্প গড়ে তোলার যে প্রস্তুতি চলছে তাই বাস্তবায়িত হবে।
বরাকের মানুষ শুনতে চেয়েছিল, মহাসড়ক বাস্তবায়ন শুধু একটা সীমিত সময়ের অপেক্ষা, সেটাও স্পষ্ট শোনা গেল না। শুধু জানালেন, মহাসড়ক নিয়ে অটল বিহারি বাজপেয়ি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেটা বাস্তবায়িত অবশ্যই হবে।
অসম চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাসে হাততালিও শোনা গেল, কতটা সমঝে-বুঝে কতটা না বুঝে তা অবশ্য বোঝা গেলনা। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন উন্নয়নের ফিরিস্তিও শোনা গেল তার ভাষণে, কিন্তু বরাকের উন্নয়ন নিয়ে খুব একটা কিছু পাওয়া গেল না।
সবশেষে বলা যায় বাঙালি মনস্তত্ত্বের ভেতরেও ঢুকতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী। তার প্রমাণ , নির্বাচনী সভা শেষে ট্যুইট করলেন অসমিয়া এবং ইংরেজিতে। ভাষণের শুরুতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা বললেও লেখার সময় তো শুদ্ধ বাংলাতে লেখাতে পারতেন, কিন্তু তা না করে তিনি টুইট করলেন অসমিয়া এবং ইংরেজিতে।
“অবিস্মৰণীয় আদৰণিৰ বাবে মই সমগ্ৰ অসমবাসী ভাই-ভনীলৈ ধন্যবাদ জনাইছো । শিলচৰৰ এই আলোকচিত্ৰ সমূহে উৎসাহ-উদ্দীপনাৰ গভীৰতাক প্ৰতিফলিত কৰিছে।
I thank my sisters and brothers of Assam for the memorable welcome.
These pictures from Silchar indicate the level of enthusiasm.”
আসলে প্রধানমন্ত্রীর ২০১৯’র সাধারণ নির্বাচনের প্রথম নির্বাচনী সভায় প্রাপ্তি থেকে অপ্রাপ্তির মাত্রা অনেক বেশি রয়ে গেল, প্রত্যক্ষ সাক্ষী উপস্থি়ত আড়াই লক্ষ মানুষ এবং রামনগরের ময়দান।
Comments are closed.