
হাইলাকান্দিতে রুবেলা টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ ২৫ পড়ুয়া : তালাবন্দি নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী,ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ ডিসির
মিসেলস-রুবেলা ভ্যাক্সিনেশন কর্মসুচির অধীনে সাহাবাদ এম ই মাদ্রাসায় রুবেলা টীকা প্রদানের পর পঁচিশ ছাত্র ছাত্রীর অসুস্থতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে উঠে হাইলাকান্দির সাহাবাদ এলাকা। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা,নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের তালাবন্দি করে প্রতিবাদে সোচ্চার হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। জেলা শাসক আদিল খান ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের পাশাপাশি , মিড ডে মিলের খাদ্য বাজেয়াপ্ত করে ফুড় ইন্সপেক্টর দিয়ে তদন্তের কথা ঘোষনা করেছেন। কাটলিছড়া শিক্ষা ব্লকের অধীন সাহাবাদ এম ই মাদ্রাসায় শনিবার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, নার্সরা রুবেলার টীকা প্রদানের সাথে সাথে একের পর এক ছাত্র ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুল ক্যাম্পাসে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে কারও জ্বর, বমি, আবার কারো শরীর ঠান্ডা হয়ে , দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। খবর পেয়ে অভিভাবক সহ এলাকার লোকজন দ্রুত স্কুল ক্যাম্পাসে ছুটে এসে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেন। অন্যদিকে অসুস্থ ছাত্রছাত্রী দের দ্রুত এম্বুলেন্স ডেকে কাটলিছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কাটলিছড়ার মহকুমাশাসক জেমস আইন্ড, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুব্রত দে, হাইলাকান্দির স্কুল সমুহের উপ-পরিদর্শক ইকবাল হোসেন বড়ভুইয়া, স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক ডাঃ অভিজিৎ বসু, কাটলিছড়া থানার ওসি নিতাই চান্দ সিংহ, পুলিশ, সি আর পি এফ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ সি আর পি এফ বাহিনী প্রথমে এসে জনতার ভিড় সরিয়ে দিতে চাইলে উল্টো প্রতিবাদে মারমুখী হয়ে উঠেন জনতা। খবর পেয়ে কাটলিছড়ার বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর দ্রুত ছুটে গিয়ে প্রতিবাদী জনতাকে শান্ত করেন। ততক্ষনে ক্ষুব্ধ জনতা নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, চিকিৎসক, আধিকারিকিদের একটি রুমের ভেতর তালাবন্দি করে নেন। এরই মধ্যে আবার ঘরের ছাদে ইট, পাটকেল, ঢিল পড়তে থাকে। ক্ষুব্ধ জনতা চিৎকার করে বিধায়ক সুজাম উদ্দিনের কাছে অভিয়োগ করে বলতে থাকেন, তাদেরকে না জানিয়ে, কোন ধরনের সভা না করে জোর করে তাদের কচিকাঁচাদের রুবেলা টিকা প্রদান করা হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ নার্স স্বাস্থ্য কর্মীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেন। বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর ঘটনাস্থলে পৌছে জনতাকে শান্ত করার পাশাপাশি জেলা উপায়ুক্ত আদিল খানের সাথে যোগাযোগ করে তদন্তক্রমে বিহিত পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানান। অন্যদিকে কাটলিছড়া হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ ছাত্র ছাত্রীদের স্বাস্থের খোঁজখবর নেন।
জেলা উপায়ুক্ত আদিল খানের নির্দেশে একসময় ছুটে আসেন ডিডিসি এফ আর লস্কর, অতিরিক্ত জেলা শাসক এলডাড ফাইরেন । এডিসি ফাইরেন, স্বাস্থ্য বিভাগের অধীক্ষক কাটলিছড়া হাসপাতালে গিয়ে অসুস্থ পড়ুয়াদের খোজখবর নেওয়া সহ চিকিৎসা সেবা তদারকি করতে থাকেন।। অন্যদিকে ডিডিসি এফ আর লস্কর সাহাবাদ এম ই মাদ্রাসায় ছুটে আসেন। বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর, ডিডিসি এফ আর লস্কর, যুগ্ম স্বাস্থ্য সঞ্চালক অভিজিৎ বসু , ডি আই ইকবাল হোসেন প্রমুখ দফায় দফায় ক্ষুব্ধ জনতার সাথে বৈঠকে বসেন ।
শেষ পর্যন্ত এদিন বিকেলে বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর ও ডি ডি সি এফ আর লস্কর ক্ষুব্ধ জনতাকে বিভাগীয় তদন্ত, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত, অসুস্থ ছাত্রছাত্রীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপয়ুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান, কর্তব্যরত দুই নার্স সেলি সুত্রধর ও শিপ্রা নাথ, সুপারভাইজার সাদিক আহমেদ লস্কর, সহ অন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্তক্রমে কড়া শাস্তিমুলক পদক্ষেপ গ্রহন, প্রধান শিক্ষক মহরম আলি লস্করের বিরুদ্দে তদন্তক্রমে বিহিত ব্যাবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন । পাশাপাশি লিখিত আশ্বাস দেন যুগ্ম স্বাস্থ্য সঞ্চালক ডাঃ অভিজিত বসু। এরপর কড়া পুলিশ সি আর পি এফ প্রহরায় নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের উদ্ধার করা হয়। এরপর ডিডিসি এফ বিধায়ক, ডিডিসি র আহবানে সাড়া দিয়ে এক সময় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন ক্ষুব্ধ জনতা। এদিন রুবেলা টিকা প্রদানের পর অসুস্থ হয়ে কাটলিছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনীর ২৫ পড়ুয়ারা হল সিরুল আলম বড়ভূঁইয়া, মিসবাউর রহমান বড়ভুইয়া, শাহজাহান লস্কর , সাজিদুল ইসলাম লস্কর, হাসনা বেগম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবজল হোসেন, তামিম হোসেন, শাহাব উদ্দিন লস্কর, আবুল কাশিম লস্কর, সইদ আহমেদ লস্কর,সিরুল আহমেদলস্কর, ইয়াহিয়া লস্কর, ইমদাদুর রহমান লস্কর, মাসুমা বেগম লস্কর, শামীমা বেগম লস্কর, সাহেদ হোসেন মজুমদার, সাজিদা বেগম, জিয়াবুর আহমেদ, সোহানা বেগম, জেসমিন সুলতানা, ইমরানা বেগম, জাহিদুল ইসলাম, তাসলিমা বেগম। এদিন সন্ধ্যায় অসুস্থ পঁচিশ জন পড়ুয়ার মধ্যে বাইশ জন সুস্থ হয়ে পড়ায় হাদপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অপরদিকে তসলিমা বেগম বড়ভুইয়া নামের বার বছরের ছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দু’জনের চিকিৎসা চলছে কাটলিছড়ায়। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে যুগ্ম সঞ্চালক অভিজিৎ বসু ও ডাঃ সুব্রত দে জানান, এদিন সাহাবাদ এম ই মাদ্রাসায় ১২০ জন পড়ুয়াকে রুবেলা টিকা প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে মাত্র পঁচিশ জন পড়ুয়া অসুস্থ হয়েছেন। এই অসুস্থতার কারন হিসেবে এম আর ভ্যাজসিনকে দায়ী করতে নারাজ তারা। অসুস্থতার পেছনে একটা ফোবিয়া কাজ করেছে বলে ডাঃ অভিজিৎ বসু মন্তব্য করেন। বলেন, কেন এটা হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই টিকা প্রদানে কোনো ক্ষতি হতে পারে না। অপরদিকে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের দাবি, রুবেলা টিকার ফলেই ছাত্র ছাত্রীদের এমন অবস্থা হয়েছে। এদিকে হাইলাকান্দির জেলা উপায়ুক্ত আদিল খান শনিবার রাতে জানান, গোটা ঘটনার ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত দেওয়া হয়েছে। পঁচিশ জন অসুস্থ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে বাইশ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তিনজনের মধ্যে তসলিমা বেগমকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাদপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে অসুস্থ পড়ুয়ারা কাটলিছড়া হাসপাতালে উপয়ুক্ত চিকিৎসা পায় নি বলে শবিবার রাতে একাংশ অভিভাবক,ছাত্র সংগঠন বরাক ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট ফ্রন্ট, সহ বিভিন্ন সংগঠন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রতিবাদে ধর্না, বিক্ষোভ আন্দোলন গড়ে তুলে। ডিডিসি এফ আর লস্কর,এডিসি এলডাড ফাইরেন সহ পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে একসময় রুবেলা ভ্যাকসিনের এফ এ বক্স সিল করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।। ব্যাবহৃত ভ্যাকসিন তদন্ত করে দেখা হবে বলে তারা আশ্বাস দেন। এনিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, কাটলিছড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর দুই পড়ুয়াকেও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে
Comments are closed.