'মিসেস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া ২০১৮' এর ফাইনালে পৌঁছে ইতিহাস গড়লেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা
দেশের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতা ‘মিসেস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া” এর ফাইনালে স্থান করে নিলেন শিলচরের মেয়ে সুকন্যা ভট্টাচার্য সুরি। বরাক উপত্যকার ইতিহাসে তিনিই প্রথম এই আসরের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার খ্যাতি অর্জন করলেন। ১২ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই দিল্লিতে ফাইনালটি অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশ থেকে মোট চল্লিশ জন প্রতিযোগী ফাইনালে বিভিন্ন স্তরে লড়াই করবেন। এতে যিনি বিজয়ী হবেন তিনি ডিসেম্বর মাসে ম্যানিলাতে হওয়া ‘মিসেস ইউনিভার্স ২০১৮’ আসরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
বিবাহসূত্রে নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা সুকন্যা মালুগ্রামের প্রয়াত প্রকাশক হরিসাধন ভট্টাচার্যের নাতনী এবং শিলচর মহিলা কলেজের অধ্যাপিকা প্রয়াত সুমিতা ভট্টাচার্যের মেয়ে।
তার কথায়, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জিতে ফ্যাশন দুনিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে নয় বরং সমাজের বিভিন্ন অন্ধকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ জোড়ালো করতে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেই আসরটিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
বিবাহসূত্রে নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা সুকন্যা শিলচরের মালুগ্রামেই বড় হয়েছেন। বিখ্যাত বানী প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হরিসাধন ভট্টাচার্যের নাতনি। তার মা প্রয়াত সুমিতা ভট্টাচার্য শিলচর মহিলা কলেজের অধ্যাপিকা ছিলেন। দাদু-দিদা এবং মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন সুকন্যা আর তার ছোট বোন শুয়া। মনোযোগী ছাত্রী হওয়ার পাশাপাশি নিবিড়ে গানের চর্চা করতেন সুকন্যা। মায়ের মৃত্যুর পর শক্ত হাতে পরিবারকে সামাল দেন। পরে দিল্লির ছেলে ভুপেশ সুরিকে বিয়ে করে নিউজিল্যান্ড পাড়ি দেন। ছেলে শিব এবং স্বামীকে নিয়ে চুটিয়ে সংসার করার পাশাপাশি বোন শুয়া আর দাদু দিদাকেও সবসময় সঙ্গ দেন। রবিবার গুয়াহাটি থেকে ফোনে তার এই যাত্রার কথা জানালেন সুকন্যা।
তিনি একজন হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী, নিউজিল্যান্ডের ‘ওয়ার্ল্ড ইন তাজ’ এবং ‘মারকিউরি’র মতো ৫-তারা হোটেলে কাজ করেছেন। এছাড়াও ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ডেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
গত বছরই পারিবারিক দায়বদ্ধতার টানে তার স্বামী ভুপেশ সুরি এবং ছেলে শিবকে নিয়ে শিলচর আসেন সুকন্যা। বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন এবং এর অন্যতম হচ্ছে ডমেস্টিক ভায়োলেন্স বা পারিবারিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে তার লড়াই।
তার কথায়, “ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ভাবে চারপাশের মানুষকে অত্যাচারের শিকার হতে দেখেছি। যখন সামর্থ্য হয়েছে নিজের মতো করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তবে একটু বেশি কিছু করার তাগিদ ছিল। যখন এই প্রতিযোগিতার কথা শুনলাম, জানতে পারলাম যে তারা সামাজিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে এক অভিনব উপায়ে আওয়াজ তুলে যাচ্ছেন। তখন এতে অংশ নেওয়ার কথা ঠিক করি। প্রথমদিকে নিজেই ভিডিও বানিয়ে ওনলাইনে মিসেস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় পাঠাই। তবে ভাবতেই পারিনি যে এভাবে ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে যাবো।
এসব ব্যাপারে আমার স্বামী ভুপেশ সব সময় পাশে থেকে সাহায্য করে গেছে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কি করে নিজেকে তুলে ধরতে হয় সেসব তো জানতামই না। তবে এবার নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার। তবে আমার লক্ষ্য হচ্ছে পারিবারিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া, প্রতিযোগিতায় কোথায় পৌঁছাই তা নিয়ে বেশি ভাবছি না। সমাজে পারিবারিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ গড়ে তোলাই আমার আসল উদ্দেশ্য।”
বিদেশে বাংলা গানের আসরে অনেকবার মায়ের শেখানো গান গেয়েছেন তিনি। এখনও প্রিয় দাবা খেলা নিয়ে সময় কাটাতে ভালবাসেন সুকন্যা।
Comments are closed.