নেলেকের আওয়াজে কেঁপে উঠল বরাকের তিন জেলাসদর, সেনাপোশাকে আন্দোলনে প্রাক্তন সেনা জওয়ান
এনআরসি নিয়ে এতদিন যে চাপা ক্ষোভ ছিল মঙ্গলবার তার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো নর্থ ইস্ট লিঙ্গুয়িস্টিক অন্ড অ্যাথনিক কো-অর্ডিনেশন কমিটি (নেলেক) এর ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। শিলচরের বিক্ষোভে নজর কাড়েন দীর্ঘ ২৪ বছর সেনাবাহিনীতে সেবা প্রদান করে আসা হাবিলদার লক্ষ্মীপুর এলাকার বিন্নাকান্দি কৃষ্ণনগরের প্রদীপ সূত্রধর। চাকুরী থেকে অবসর নিলেও সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরেই পেশ করেন তার বক্তব্য, তবে ব্যাল্ট ছিল না। প্রদীপ সূত্রধর জানান, এনআরসিতে তার নাম ওঠেনি; ওঠেনি বিবাহিত মেয়ে বিশাখা সূত্রধর, ভাই মনি সূত্রধর সহ তার পাঁচ সন্তানের নাম ও। এনআরসিতে নাম নথিভুক্তির জন্য ১৯৬৫ সালের জমির দলিল দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশের সেবা করেছেন, কারগিল যুদ্ধে ও তার অবদান রয়েছে। হাবিলদার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন ২০১৩ সালে। তিনি বলেন, “আমি কাউকে ভয় পাই না । যে দেশ রক্ষায় জীবনের এতটা বছর উৎসর্গ করলাম, সেই দেশে আমি বিদেশে হতে পারি কিভাবে”।
এদিনের সভায় এক বক্তা চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “তোমাদেরকে ভোট দিয়ে এ জন্য পাঠিয়েছিলাম নাকি, তোমরা ফিতা কাটবে, সাইরেন বাজিয়ে ঘুরে বেড়াবে। স্নিগ্ধা বর্মন, দিপালী দাস ডিটেনশন ক্যাম্পে আছে, ওদের পরিবার ও তোমাদেরকে ভোট দিয়েছে। ওদের ভোটের বদলেই তোমাদের গাড়িতে সাইরেন বাজছে। আমরা যদি চোখ ঘুরিয়ে নেই তাহলে নেতাগিরি শেষ হয়ে যাবে। আমাদের ভোটে ক্ষমতায় এসে বদরপুরে গিয়ে চুতিয়া সম্মেলন করছো”।
এদিকে হাইলাকান্দি সম্মেলনে যোগদান করে গৌতম রায় জানান, কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই এনআরসি থেকে বাদ পড়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তিনি যতবার নির্বাচিত হয়েছিলেন ততবার 95% হিন্দু ভোট পেয়েছিলেন বলে জানান গৌতম রায়।
এই আন্দোলন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, নেলেকের মোড়কে আরএসএসের হিন্দু দরদি আন্দোলনের নাটক চলছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন আসুর প্রাক্তন সভাপতি। আইএমডিটি আইন সুপ্রিম কোর্টে বাতিল করার জন্য জাতীয় নায়ক উপাধি পেয়েছিলেন তিনি। তাই তার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৪ লক্ষ হিন্দু বাঙালির নাম বাদ পড়াটা খুবই স্বাভাবিক।
নেলেকের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিনাশর্তে নাগরিকত্ব প্রদান, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের কেন্দ্রীয় সরকারের জোড়া অধ্যাদেশ অবিলম্বে অসমে কার্যকর করা, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অবিলম্বে আইনে পরিণত করা, ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে অবিলম্বে হিন্দুদের মুক্ত করা, অসম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা অনুসারে কোন প্রকার সংরক্ষণ না রাখা, ৬ নম্বর ধারা নিয়ে গঠিত হাই পাওয়ার কমিটিতে সকল ভাষাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং বিদেশী মুক্ত শুদ্ধ এনআরসি প্রস্তুত করা।
Comments are closed.