Also read in

নতুন সাইবার জাল, ভিডিও কলের পর অশ্লীল ছবি দেখিয়ে মোটা টাকা চাইছে রাজস্থানের গ্যাং!

অনলাইন শপিং করতে গিয়ে হঠাৎ অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অংকের টাকা গায়েব, অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যাওয়া, সম্প্রতি সাইবার ক্রাইমের নতুন নতুন ধরন সামনে আসছে। এতে আরেক সংযোজন হচ্ছে ফেসবুকে সুন্দরী যুবতীর ফটো দিয়ে অ্যাকাউন্ট বানানো, বেছে বেছে যুবকদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো, মাঝরাতে ভিডিও কল, এরপর ফটোশপ করা নগ্নচিত্র পাঠিয়ে টাকা দাবী করা। শিলচর সহ উপত্যকার অনেক জায়গায় যুবক- প্রৌঢ়রা এমন চক্রের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাদের উল্টোপাল্টা ছবি ভাইরাল হবে এই ভয়ে মুখ খুলছেন না। একটা পরিবর্তনের দিক হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে পুরুষরাই টার্গেট হচ্ছেন।

সম্প্রতি শহরের সরকারি কার্যালয়ে কর্মরত এক যুবক এই সাইবার গ্যাংয়ের শিকার হয়েছেন। তবে তিনি বিচক্ষণ মনোভাব দেখিয়ে টাকা পাঠান নি বরং সরাসরি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশের আধিকারিকরা তাকে চেনেন, ফলে যেসব নম্বর থেকে তার কাছে ফোন এসেছে সেগুলো ট্র্যাক করা হয় এবং জানা যায় এগুলো রাজস্থান থেকে চালানো হচ্ছে। অর্থাৎ রাজস্থানের একটি গ্যাং বরাক উপত্যকার যুবক-যুবতীদের ওপর নজর রাখছে এবং তাদের ফোন নম্বর সহ বিভিন্ন তথ্য প্রথমে হাতিয়ে নিচ্ছে।

যুবকটি জানিয়েছে, রিয়া শর্মা নামের এক যুবতী তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। সুন্দরী মেয়ের ছবি দেওয়া প্রোফাইল, মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের তালিকায় রয়েছেন অনেক পরিচিতরা, তাই রিকুয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন তিনি। এরপর শুরু হয় কথাবার্তা। হঠাৎ মাঝরাতে আসে ভিডিও কলের রিকুয়েস্ট। মাঝরাতে যুবতীর ভিডিও কলের রিকুয়েস্ট পেয়ে অনেকটাই উৎসাহিত, বিছানায় শুয়ে শুয়েই ভিডিও কলের মাধ্যমে রোমান্টিক কথাবার্তা। তিনি বুঝতেই পারেননি তার কথাবার্তা রেকর্ড হচ্ছে, মেয়েটি তার অর্ধনগ্ন ভিডিও এবং ফটো সংগ্রহ করে নিচ্ছে। পরের দিন হঠাৎ করেই ফটোশপ করা তারই নগ্ন ফটো হোয়াটসঅ্যাপে আসে। কিছুক্ষণ পরে অজানা নম্বর থেকে ফোন, মোটা অংকের টাকা দিতে হবে, নাহলে এগুলো ফেসবুকে ফাঁস করা হবে। পাঠিয়ে দেওয়া হয় গুগোল-পে নম্বর। যেসব নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ৭৩৮১৬৮৫৪১২ এবং ৭৩০০২৭৯৬৮৬। তারা যে গুগোল-পে নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলেছে সেটা হচ্ছে ৬৩৭২৪৪৯৮৬৪।

গত বছর একটি ওয়েব সিরিজ খুব পপুলার হয়েছিল, নাম ছিল জমতারা। উত্তর প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বসে দিল্লি থেকে শুরু করে দেশের বড় বড় শহরের মানুষকে এভাবেই ঠকাচ্ছিল একটি বড়সড় সাইবার গ্যাং। সম্প্রতি শিলচর সহ বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকটি কলেজের ওয়েবসাইট হ্যাক করেছে দুষ্কৃতীরা। এর আগে অনলাইন শপিং এর নামে অনেকগুলো টাকা যেভাবেই হাতিয়ে নিয়েছে সাইবার গ্যাং। এই দলে নতুন করে নাম লিখিয়েছে ভিডিও কল গ্যাং। এদের কোথায় কেউ কেউ টাকা পাঠিয়ে দিলেও চাহিদা কমেনা। প্রথমে ১০ হাজার, এরপর ২৫ হাজার এবং ৫০ হাজার, ভয় দেখিয়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা চায়। এটাই এখন শহরে নতুন সাইবার ক্রাইম। এমন ঘটনা এখন বরাক উপত্যকার অহরহ ঘটছে। অনেকেই প্রকাশ্যে কথাগুলো বলছেন না কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা ভয় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

শহরের অনেক যুবক এব্যাপারে নিজেদের অনুভূতি তুলে ধরেছেন কিন্তু প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি যেসব নম্বর থেকে তাদের ফোন করা হয়েছে এবং গুগোল-পে নম্বর দেওয়া হয়েছে সেগুলো আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন তারা। আবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন কিন্তু লিখিত অভিযোগ দেন নি, ফলে পুলিশের পক্ষে কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে এব্যাপারে যুবসমাজ এখন সচেতন নয়, অনেকেই গোপনে এই সাইবার হামলার শিকার হচ্ছেন।

Comments are closed.

error: Content is protected !!