
২০২২ সালের মার্চের আগেই হচ্ছে মহাসড়ক, বরাকে নতুন দুটি সেতু এবং লজিস্টিক পার্ক, বাজপেয়ীর মূর্তি উন্মোচন করে ঘোষণা গাডকারির
মহাসড়কের কাজ শেষ না করে বাজপেয়ির মূর্তি উন্মোচন নিয়ে করা এবং এতে স্বয়ং কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকেই। তবে সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে শিলচরে দাঁড়িয়ে নীতিন গাডকারি ঘোষণা করে গেলেন, ‘২০২২ সালের মার্চের আগে সম্পন্ন হবে মহাসড়কের অসমাপ্ত অংশের কাজ। তিনি নিজে এসে সড়কটি জনগনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবেন কারণ এটা তার প্রিয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর স্বপ্নের প্রকল্প। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের আবদার মেনে বরাক নদীর উপর আরও দুটো নতুন সেতু এবং বরাক উপত্যকায় মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক বানানোর কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সড়ক-পরিবহন মন্ত্রী।
প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন উপলক্ষে মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে তার ১৩ ফুট উঁচু ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে মূর্তি উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাডকারি। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে অটল বিহারী বাজপেয়ীর ব্রোঞ্জের মূর্তি উন্মোচন করেন তিনি। এতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ, অসমের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর সহ অন্যান্যরা এতে অংশ নেন। পাশাপাশি বাজপেয়ীর জন্মদিনকে সামনে রেখেই পরিবহন বিভাগের কুড়িটি নতুন প্রকল্পের সূচনা হয় এবং সাতটি সম্পন্ন হওয়া কাজ জনগণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন নীতিন গাডকারি এবং আয়োজক ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। আয়োজক হিসেবে প্রথমে তিনি কথা বলেন এবং ছোট ভাইয়ের মতো বড় ভাই গাডকারির কাছে বরাক উপত্যকার জন্য অনেক কিছুই চেয়ে বসেন। তিনি বলেন, “আপনি ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ৬টি নতুন সেতু বানিয়েছেন, আমি চাই বরাকের ওপর অন্তত দুটি সেতু হোক। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ইতিমধ্যে মাল্টি মডেল লজিস্টিক পার্ক বানানোর কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রক, আমি চাই বরাক উপত্যকায় অনুরূপ একটি প্রকল্প ঘোষণা হোক। নরেন্দ্র মোদির কাজের অন্যতম মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘ট্রানসফর্মেশন থ্রো ট্রান্সপোর্টেশন’, অর্থাৎ পরিবহনের উন্নতির মাধ্যমে পরিবর্তন। উত্তর-পূর্বের পরিবহন ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলে অসম থেকেই বৃহত্তর এশিয়ার সঙ্গে ভারতবর্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। উত্তর-পূর্বের অন্যতম শক্তি হচ্ছে জল পরিবহনের ক্ষমতা। তাই লজিস্টিক পার্ক গড়ে উঠলে পরিবহন আন্তর্জাতিকমানে গিয়ে পৌঁছবে। আমরা অসমকে ভারতবর্ষের প্রথম পাঁচটি সব থেকে উন্নত রাজ্য হিসেবে দেখতে চাই এবং এই স্বপ্ন সফল হতে শুরু করেছে।”
এরপর মঞ্চে ওঠেন মুখ্য অতিথি নীতিন গাডকারি, প্রথমেই অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে তার বিভিন্ন স্মৃতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “অনেক দূরের ভবিষ্যত দেখার ক্ষমতা রাখতেন অটল বিহারী বাজপেয়ী, প্রত্যেকের ভালো কাজের খবর রাখতেন এবং কাজের উদাহরণ তুলে ধরে বিভিন্ন প্রকল্প বানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এর একটি উদাহরণ। রাজনীতি তার কাছে দেশের উন্নতির একটি মাধ্যম ছিল, অবশ্যই ব্যক্তি-কেন্দ্রিক রাজনীতি পছন্দ করতেন না, দেশের স্বার্থে কাজ করতেন। বরাক উপত্যকা তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি এলাকা এবং জীবনে অনেকবার এখানে এসেছেন। যখন মহাসড়কের পরিকল্পনা চলছিল তখন শিলচরের নাম তিনি বলেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তার মৃত্যুর আগে আমরা তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি, কিন্তু এখন কাজ হবে। আমি আছি এখানে দাঁড়িয়ে কথা দিচ্ছি ২০২২ সালের মার্চ মাসের আগে কাজ শেষ হবে এবং আমি নিজে এসে উদ্বোধন করে যাব।”
সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিভিন্ন আবেদন নিয়ে তিনি বলেন, “সর্বানন্দ সোনোয়ালের আমার কাছে একটা অধিকারবোধ রয়েছে কেননা তার বিজেপিতে আসা আমার হাত ধরে। তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেছি আমি। তার হয়ে অনেক জায়গায় এমন কথা দিতে হয়েছে যেটা পরবর্তীতে পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। এবার তিনি আমার কাছে বরাকের ওপর দুটি সেতু এবং একটি লজিস্টিক পার্ক চাইলেন, আমি অবশ্যই তার কথা রাখছি এবং ঘোষণা করছি আগামীবছর দুটো প্রকল্পেরই শিলান্যাস হবে। তবে বরাক উপত্যকার মানুষকে একটা কথা দিতে হবে, আগামী বছর নির্বাচনের পরে যখন প্রকল্পের শিলান্যাস হবে, তখনও যাতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালই থাকেন, এই দায়িত্ব আপনাদের।”
এদিন সভায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন নতুন সড়ক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রী। এরমধ্যে বরাক উপত্যকার দুটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে, শিলচর থেকে ভাইরেঙতে এবং শিলচর থেকে জিরিঘাট চার-লেন রাস্তা। তিনি বলেন, “অসমে সম্ভাবনা এত বেশি যে এই রাজ্যকে ভারতবর্ষের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। দেশ-বিদেশের মানুষ পর্যটনের জন্য এই রাজ্যে ভবিষ্যতে আসবেন। যারা সর্বানন্দ সোনোয়ালের মত একজন যোগ্য ব্যক্তিকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা আগামীতেও তাকেই জয়ী করুন, এমন লোক রাজনীতিতে খুব কম আছেন।”
এদিন অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস বরাক উপত্যকার জনগণের হয়ে নীতিন গাডকারির কাছে মহাসড়কের কাজ শেষ করার দাবি জানান। রাজদীপ রায় বলেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মহাসড়কের জিরো পয়েন্টে তার একটি মূর্তি বসানো হবে। পুরো কাজটা হয় অনুরাগীদের কাছ থেকে দান হিসেবে পাওয়া অর্থে। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বানানো হয় এবং এতে ৩৩ লক্ষ টাকা পাঠান অনুরাগীরা। কেউ দশটাকা দিয়েছেন কেউ দশহাজার টাকা, প্রত্যেকের শ্রদ্ধা সমান ছিল। এই টাকাতেই মূর্তি বানানো হয়েছে এবং অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। মূর্তি বানিয়েছেন কলকাতার চন্দ্রশেখর দাস। মাত্র চার মাসে মূর্তিটি গড়ে তোলে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।”
এদিন অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং নীতিন গাডকারি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। একদিকে যেমন নীতিন গাডকারি কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে নিজের বড় ভাই বলে আখ্যা দেন, অন্যদিকে সর্বানন্দ সোনোয়াল তাকে পিতৃতুল্য বলেন। অসমে বিজেপির জয় যাত্রা শুরু হয়েছিল তার হাত ধরেই, অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এই কথা ভুলে যাননি মুখ্য অতিথীরা।
Comments are closed.