ফেছাই মিয়ার দান করা জমিতে সতীন্দ্রের নামে হাসপাতাল কি করে, জানতে চান আমিনুল
শিলচর সিভিল হাসপাতাল নির্মাণে জমি দিয়েছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ফেছাই মিয়া লস্কর সেই ১৯৩৪ সালে। ১৯৯৩ সালে সেই সিভিল হাসপাতালের নাম সতীন্দ্র মোহন দেব মেমোরিয়াল সিভিল হাসপাতাল হলো কি করে! তথ্য জানার অধিকার আইনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারিনি। এ বিষয়ে এবার কাছাড় জেলা যুগ্ম স্বাস্থ্য সঞ্চালকের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠি লিখেছেন সোনাইর বিধায়ক তথা বিধানসভার নবনিযুক্ত উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর।
বিধায়কের বক্তব্য অনুযায়ী সে সময়ে অনেকটা গায়ের জোরে এভাবে নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল। নাম পরিবর্তনের আগে যিনি জমি দিয়েছিলেন সেই ফেছাই মিয়া লস্করের বংশধরদের সাথে ও এ ব্যাপারে কোন আলাপ আলোচনা করা হয়নি, এটা বরাক উপত্যকার মুসলিম সমাজের প্রতি এক প্রকার বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর। তাই বর্তমান সময়ের দাবি হচ্ছে সিভিল হাসপাতাল থেকে সতীন্দ্র মোহন দেবের নাম সরিয়ে দেওয়া।
আমিনুল জানান, ১৯৯৩ সালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রূপক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভূমিধর বর্মনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকীয়া। বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা থেকে নির্বাচিত সাংসদ এবং তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব। সেই অনুষ্ঠানে সিভিল হাসপাতালে ওষুধপত্র, শৌচালয়ের পরিষেবা এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি ট্রাস্ট থেকে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে শর্ত ছিল, সিভিল হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে সতীন্দ্র মোহন দেবের নামে করতে হবে। আমিনুল বলেন, “আসলে সন্তোষকে সন্তুষ্ট করতেই হিতেশ্বর শইকীয়া এমন প্রস্তাব মেনে নেন। তবে, হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে কোন নোটিফিকেশন বের করা হয়নি, শুধুমাত্র কাছাড়ের স্বাস্থ্য বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টরের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল সতীন্দ্রমোহন দেব ট্রাস্ট”। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে সন্তোষ মোহন দেব পরাজিত হওয়ার পর সতীন্দ্রমোহন দেব ট্রাস্টের পক্ষে স্বাস্থ্য সঞ্চালককে জানিয়ে দেওয়া হয় সিভিল হাসপাতালের ওষুধ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতনের ব্যয়ভার বহন করতে পারবে না ট্রাস্ট। তখনকার প্রবল প্রতাপান্বিত মন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব ইচ্ছে করলেই নতুন এক-দুটো হাসপাতাল নির্মাণ করে তার বাবা সতীন্দ্রমোহন দেবের নামে উৎসর্গ করতে পারতেন, কিন্তু বাস্তবে শিলচর সিভিল হাসপাতাল থেকে ফেছাই মিয়া লস্করের অবদান মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে অসম বিধানসভায় বরাক উপত্যকার বিকাশ নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনা প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন বিধায়ক আমিনুল। তাই শুধু বিধানসভায় প্রশ্ন উত্থাপন নয়, ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্ত করার ইচ্ছে রয়েছে বর্তমান উপাধ্যক্ষের, এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
Comments are closed.