Also read in

"সংসদে আমাদের মৃত্যুতে কেউ কাঁদে না, সরকারের সদবুদ্ধি হোক" ধর্মীয় শোকমিছিলে আক্ষেপের বার্তা কাগজকল কর্মীদের

হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের অধীনে থাকা কাছাড় এবং জাগীরোডের কাগজ কল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৮১ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের বিদেহী আত্মার শান্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলচরে ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’ আয়োজন করেন কাগজ কল পুনরুদ্ধার আন্দোলনকারী এবং পরিবারের সদস্যরা। যদিও প্রথমে পুলিশ তাদের বাধা দেয় কিন্তু তারা মোমবাতি না জানিয়ে মিছিল করার প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় শেষমেষ অনুমতি মেলে। এদিন মিছিলে উপস্থিতি কম থাকলেও অত্যন্ত সুন্দর এবং সুশৃংখলভাবে সেটি সম্পন্ন হয়।

Mourning

মিছিলে কাছাড় এবং নগাঁও কাগজ কলের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি, এইচপিসি পেপারমিল রিভাইবাল অ্যাকশন কমিটি এবং কাগজ কল কর্মীদের পরিবারের সদস্য সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “কাগজকলের মৃত কর্মচারীদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ২৫ জানুয়ারি এক মোমবাতি মিছিল করা হয়েছিল। তবে গণতন্ত্র দিবস এবং করোনা পরিস্থিতির ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন অনুমতি দেওয়ার পরেও মিছিল আটকে দিয়েছিল প্রশাসন। এবার অসমাপ্ত মিছিল সম্পন্ন করতেই আবার পথে নামি আমরা, নাম দেওয়া হয় ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’। দুই কাগজকল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬৯ জন হিন্দু এবং ১২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বি কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। তাই এদিন শিলচর শ্মশান ঘাটে কালী মন্দিরে হিন্দুদের জন্য এবং কলেজ রোড সংলগ্ন ফজল শাহ মোকামে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন কাগজ কল কর্মীরা।”

পাশাপাশি কাগজকল পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার উদাসীনতা দেখাচ্ছে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের সদবুদ্ধি জাগ্রত হওয়ার উদ্দেশ্যও প্রার্থনা করেন কাগজ কল কর্মচারীরা। তারা বলেন, “সম্প্রতি বিরোধী দলের এক নেতার বিদায় অনুষ্ঠানে রাজ্যসভায় অঝোরে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ কাগজ কলের ৮১ জন কর্মী মৃত্যুবরণ করেও প্রধানমন্ত্রীর মনে জায়গা করে নিতে পারলেন না। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংসদ এবং বিধায়ক, আমাদের মৃত্যুতে কারো চোখে জল আসে না। কোন কর্মচারী মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছেন এই খোঁজ নেননা জনপ্রতিনিধিরা। আমরা মা শ্মশানকালীর মন্দিরে এবং ফজল শাহ মোকামে তাদের প্রত্যেকের সদবুদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছি।”

এদিন রাজনীতিবিদ প্রদীপ দত্ত রায়, সমাজসেবী কমল চক্রবর্তী, বাহার উদ্দিন লস্কর সহ অন্যান্যরা মিছিলে যোগ দেন।

৮ ফেব্রুয়ারি কাছাড় এবং নগাও কাগজ কলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে ন্যাশনাল কোম্পানির লো ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি)-তে শোনানি ছিল, সেটা পিছিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে। অর্থাৎ আগামীকাল দুটো কাগজ কল পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বড়সড় সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে ৮ বার তাদের শুনানি পিছিয়েছে এনসিএলটি। তবে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে আর যাতে শুনানি পিছিয়ে না নেওয়া হয় এবং একটি পাকাপাকি সিদ্ধান্তে আসে এনসিএলটি। যদিও সরকারের পক্ষে এখনও দুই কাগজ কল পুনরুদ্ধার নিয়ে কোনও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়নি। গতবছর ১০ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এনসিএলটি-র কাছে চিঠি লিখে দুই মাস সময় চাওয়া হয়েছিল, তবে এর প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা দেওয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে কাগজ কল কর্মীদের বয়ান, “সম্প্রতি একই ধরনের মামলায় কেরালা সরকার তাদের এলাকায় কাগজ কল পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছে। সরকারের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এনসিএলটি। একইভাবে অসম সরকার যদি কোনও পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারতো, তাহলে হয়তো এনসিএলটি এতে সম্মতি দিত। তবে আগামী কালকের শুনানির পর যদি তেমন কোনও সম্ভাবনা চোখে না পড়ে, তাহলে কাগজ কল দুটোকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে সময় লাগবে না। এমনটা হলে পুরো সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পারে এনসিএলটি।”

Comments are closed.