"অসমে কৃষি বিল বিরোধিতা করার কোনও কারণ নেই," এই মন্তব্য করেই আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে মন্ত্রী অতুল বরা
বুধবার হাইলাকান্দিতে দলীয় বৈঠক সেরে বৃহস্পতিবার শিলচরে জেলাশাসক কার্যালয়ে বিভাগীয় বৈঠকে যোগদান কৃষিমন্ত্রী অতুল বড়া। এদিনের বৈঠকে তার সঙ্গে যোগ দেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি সহ অন্যান্যরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার যেভাবে কৃষকদের সুরক্ষায় কাজ করছে এতে কেন্দ্রের নতুন কৃষি বিল নিয়ে অসম রাজ্যে বিরোধিতা করার কোনও প্রয়োজন নেই। আমরা কৃষক এবং বাজারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী দালালদের নির্মূল করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া পরিকাঠামোগতভাবে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প আনা হচ্ছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ইত্যাদি রাজ্যে পরিস্থিতি হয়তো আলাদা, তাই সেখানে আন্দোলন হচ্ছে। তবে আমি মনে করি গত সাড়ে চার বছরে আমাদের সরকার অসমে কৃষির উন্নতির ক্ষেত্রে যত কাজ করেছে, এর পরে কৃষকদের খুশি হওয়া উচিত, আন্দোলন করার প্রশ্নই ওঠে না।”
অসম গন পরিষদ রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকলেও নানান সময় সরকারের সমালোচনা করে। তবে অতুল বরা এদিন কোনও বিজেপি প্রতিনিধির মতোই নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্র যেভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ভালো কাজের ছাপ রেখেছে, কৃষিক্ষেত্রেও অনেক উন্নত হয়েছে আমাদের দেশ। আমরা তার নেতৃত্বে এই রাজ্যে উন্নতির বিভিন্ন নতুন দিক স্পর্শ করতে পেরেছি। আগামীতেও তারই নেতৃত্বে আরও নতুন প্রকল্প ঘোষণা হবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।”
বরাক উপত্যকা নিয়ে তিনি বলেন, “এই অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে উন্নত করতে চেষ্টা করছি। বিশেষ করে উন্নতমানের বাজার তৈরি করে সেখানে কৃষকদের সঠিক মূল্যে উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে জনপ্রতিনিধি এবং কৃষকরা এই প্রচেষ্টায় সঙ্গে রয়েছেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।”
বৈঠক শেষে তিনি জেলাশাসক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষকদের হাতে ট্রাক্টর তুলে দেন। এরপর জেলাশাসক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কৃষক আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পড়তে হয় তাকে। সিআইটিইউ-য়ের নেতৃত্বে কৃষকরা এদিন জেলাশাসক কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করছিলেন। তারা বার বার মাইকে আবেদন জানান কৃষিমন্ত্রী তাদের সঙ্গে দেখা করে গেলে ভাল হয়। কিন্তু অতুল বরা সহ তার সহযোগী কেউই কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বরং পুলিশ এবং সিআরপিএফ আধিকারিকরা আন্দোলনকারীদের জোর করে সরিয়ে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা করে দেন। এতে আন্দোলনকারীরা প্রচণ্ড ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, “আমরা কৃষি মন্ত্রীর সামনে আন্দোলন করছি, তিনি পারতেন একবার নেমে আমাদের কথা শুনতে, জনপ্রতিনিধির কাছে জনগনের এটুকু আবেদন থাকতেই পারে। তবে তিনি সেটা করেননি বরং তার রক্ষীরা আমাদের আন্দোলনকারী মহিলাদের পর্যন্ত টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দিয়েছে। ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং এখানে সাধারণ মানুষ আন্দোলন করলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের কথা অন্তত শুনতে আসবেন, এটা স্বাভাবিক। তাদের এই ব্যবহারে প্রমাণ হয়েছে জনগণকে নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমরা আমাদের আন্দোলন ভবিষ্যতে এভাবেই চালিয়ে যাবো।”
বৃহস্পতিবার জেলাশাসক কার্যালয়ে কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করতে রাজি হননি মন্ত্রী অতুল বরা। তবে বুধবার হাইলাকান্দির আলগাপুরে দলীয় সভায় যোগ দিয়েছিলেন মন্ত্রী অতুল বরা। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের দল। তবে এখনও বরাকে আসন বিভাজন নিয়ে পরিষ্কার কথা হয়নি। আমরা আপাতত আলগাপুরে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করানোর পরিকল্পনায় রয়েছি। দলের সদস্যপদ ইতিমধ্যে বরাক উপত্যকায় বাড়তে শুরু করেছে।”
Comments are closed.