Also read in

রবীন্দ্রমেলা বা গান্ধীমেলা আয়োজন করতে সরকারের বাধা নেই, তবে ব্যবসায়ীরা আসবেন তো?

পুরোটা বছর করোনা ভাইরাসের প্রকোপে কাটিয়ে নতুন বছরের শুরুতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। নিয়ম মেনে অনেকেই পিকনিকে যাচ্ছেন, ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আবার নিজেদের পরিশ্রমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বরাক উপত্যকায় শীতের শেষে তিনটি মেলা হয়, করিমগঞ্জের নেতাজি মেলা, হাইলাকান্দির রবীন্দ্রমেলায় এবং সবশেষে কাছাড় জেলার গান্ধীমেলা। হাইলাকান্দির জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহাল জানিয়েছেন তাদের কাছে মেলা আয়োজন করতে অনুমতি চাওয়া হয়েছে এবং তিনিও রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুমতি চেয়েছেন। সরকারের তরফে বলা হয়েছে মেলা আয়োজন করা যাবে, তবে কিছুতেই কোভিড প্রটোকল উপেক্ষা করা চলবেনা। জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা শুরু করেছে কিভাবে মেলা সম্পন্ন করা যায়। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষকে নিয়ে বৈঠক আয়োজন করা হবে, দেখা হবে আদৌ মেলা আয়োজন করা যাবে কি না।

এধরনের মেলা সাধারণত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে অনেক বেশি বিক্রির একটা সুযোগ করে দেয়। অসমের বিভিন্ন এলাকা সহ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য থেকে ব্যবসায়ীরা মেলায় আসেন। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি সুযোগ পান। এই দিক থেকে মেলা আয়োজন সাধারণ মানুষের জন্য একটি লাভ দায়ক পদক্ষেপ। তবে মেলা আয়োজন হলে জনসমাগম অনেক বেশি হবে এবং সামাজিক দূরত্ব নিয়ম খুব একটা গ্রাহ্য হবে না। যদি ভুলবশত কোনও পজিটিভ ব্যক্তি এসব এলাকায় ঢুকে পড়েন তাহলে অনেক বেশি সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়। এই কথা ভেবে রাজ্যের প্রায় কোনও জেলায় লকডাউনের পরে মেলা আয়োজিত হয়নি।

শিলচরের গান্ধী মেলা আয়োজন করা দায়িত্বে রয়েছে পুরসভা। সাধারণত পুরপতি অন্যান্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন এবং তারাই মেলা আয়োজনের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত বছরের প্রথম দিকে শিলচর পুরসভার নির্বাচিত বোর্ড তার মেয়াদ শেষ করেছে। এরপর জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে বিভিন্ন কার্যকলাপ চলছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান শিলচর পুরসভার দায়িত্ব সামলেছেন। গান্ধীমেলা নিয়ে তাদের কি পরিকল্পনা? এই প্রশ্নের উত্তরে সুমিত সত্যওয়ান বলেন, “আমাদের কাছে এখনও মেলা আয়োজন করার জন্য কেউ আবেদন জানায় নি। তেমনটা হলে আমরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করতাম এবং তারা সিদ্ধান্ত নিতেন মেলা আয়োজিত হবে কি না। এছাড়া অনুমতি পেলেও এত বড় জনসমাগম হতে দেওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। আমরা এব্যাপারে নিজে থেকে এগিয়ে এসে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছি না, তবে এলাকাবাসী চাইলে এবং সরকার অনুমতি দিলে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের বেঁচে থাকবে কড়া নজরদারি রাখা যাতে কোনোভাবেই মেলার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ না হয়।

হাইলাকান্দি প্রশাসনের সূত্রমতে, রাজ্য সরকার জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহালকে জানিয়েছেন, মেলা আয়োজন করার ক্ষেত্রে কোনও ধরনের বিধিনিষেধ এখন নেই, তবে স্থানীয় প্রশাসনকে নজর রাখতে হবে, কোনওভাবে যাতে জনসমাগমের মাধ্যমে সংক্রমণ বৃদ্ধি না পায়।

স্থানীয় প্রশাসন বা সরকার অনুমতি দিলেও এই বছর যেকোনও ধরনের মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনা। গতবছর গান্ধীমেলা খুব একটা সফল হয়নি, মাঝরাস্তায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য থেকে মেলায় যোগ দিতে আসা ব্যবসায়ীদের লকডাউনে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে, দীর্ঘদিন আটকা পড়ে থেকে তারা অনেক কিছু হারিয়েছেন। এই ঘটনার এক বছর হয়নি, আবার তারা গান্ধীমেলায় আসার জন্য ঝুঁকি নিতে রাজি হবেন কি না এটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!