Also read in

নিয়োগ পরীক্ষার ভিড়ে উপেক্ষিত সোশ্যাল ডিসটেন্সিং, আতঙ্কিত এলাকাবাসী; "প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে," আশ্বাস পুলিশসুপারের

বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ

শিলচরের পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ড এবং সংলগ্ন রাস্তা জুড়ে কয়েকদিন ধরেই চলছে অসম পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার বিভিন্ন প্রক্রিয়া। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ফিটনেস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, ফলে এলাকায় সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা মানুষ এবং বিভিন্ন দর্শকদের ভিড়ে এলাকায় থাকছে না সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব; এতে আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। পাশাপাশি পুলিশ আধিকারিকদের দুর্ব্যবহারে এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাফেরা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাটে উঠেছে বিভিন্ন দোকানের ব্যবসাও। তবে পুলিশসুপার বিএল মিনা বলছেন, “এত বড় পরীক্ষা যেখানে এলাকার অনেক যুবক-যুবতী চাকরি পাবে, তাদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিছুটা সহায়তা আমরা আশা করি।”

শুধুমাত্র বাইরে থেকে আসা দর্শক নয়, পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া প্রায় প্রত্যেকেই সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডের মাঠে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় লাইনে অংশ নিচ্ছেন যুবক পরীক্ষার্থীরা, থাকছে না কোন দূরত্ব। প্রায় কারও মুখেই মাস্ক নেই। এমনকি পরীক্ষা নিতে আসা আধিকারিকদের অবস্থাও একই।

 

Running for job

অবশ্যই এত বড় পরীক্ষা হচ্ছে, এত মানুষ জড়ো হচ্ছেন ছোটখাটো ভুল হতেই পারে। কেউ কেউ সরাসরি বলেছেন, কিছু মানুষ চাকরি পাচ্ছে এতে আপনাদের কি অসুবিধে? সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি চাকরি হয়েছে, যেখানে বরাক উপত্যকার যুবসমাজ বঞ্চিত হয়েছে। যদি পুলিশের পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করে এলাকার যুবক-যুবতীরা চাকরি পায় এতে কেউ অখুশি হওয়ার নয়। যদিও সম্পূর্ণ এই পরীক্ষা নিয়ে নানারকম বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে এবং ধীরে ধীরে আরও অনেক রহস্য উদঘাটন প্রক্রিয়া চলছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে যদি কেউ বিপদের সম্মুখীন হয় সেটাও বিভাগকে খেয়াল রাখতে হবে।

শারীরিক পরীক্ষার প্রক্রিয়াগুলো কোনও মাঠে না নিয়ে কংক্রিট রাস্তায় নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে ইতিমধ্যে দুই তরুণী দৌড়াতে গিয়ে পা ভেঙেছে। তারা অবশ্যই পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করবে না, তবে এর জন্য কে দায়ী? এই প্রশ্ন উঠছে। কম বয়সী পরীক্ষার্থীরা গত কয়েক মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। শহরের আনাচে-কানাচে সকাল এবং সন্ধেবেলা রোজ তাদের পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। নিজেকে তৈরি করে প্রমাণ করার আগেই যদি তাদের এভাবে হঠাৎ হোঁচট খেতে হয় সেটা অবশ্যই কাম্য নয়। পরীক্ষায় অনেকেই হয়তো চাকরি পাবে আবার অনেকেই পাবেনা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে খুব একটা বেশি নিয়ম না মেনে পরীক্ষা নেওয়া এবং এতে প্রচন্ড জনসমাগম হওয়া, ইত্যাদির ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। যারা এতদিন নিজেকে সুস্থ রেখে পরিশ্রম করে গেছে তারা শুধু পরীক্ষায় এসে নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য করোনা ভাইরাস আমদানি করবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাও সরকারি পরীক্ষায় এই অবস্থা, এমনটাই বলছেন একাংশ এলাকাবাসী।

পুলিশসুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, বৃষ্টি হওয়ায় পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডের অবস্থা খারাপ হয়। এতেই বাইরে পরীক্ষা নিতে হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার পরীক্ষার্থী কাছাড় জেলায় রয়েছেন, প্রতিদিন ৫০০ পরীক্ষার্থীর শারীরিক যোগ্যতা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। ১লা নভেম্বর পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চললেও রোজ পরীক্ষা থাকবে না। এছাড়া যদি বৃষ্টি থেমে যায় এবং মাঠ শুকিয়ে আসে তবে মাঠের ভেতরে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘনে পরীক্ষার্থীরা পুলিশের আধিকারিকদের কোন অবদান নেই। পরীক্ষার্থীরা অনেক দূর থেকে আসছে ফলে পরিবারের সদস্য কেউ না কেউ তাদের সঙ্গে আসছেন। এছাড়া অনেকেই বিভিন্ন শরীরচর্চার প্রক্রিয়া দেখতে পছন্দ করেন, তারাও এলাকায় ভিড় করছেন। এতে অনেকটাই ভিড় জমেছে । “আমরা মানছি, আমাদের আধিকারিকরা তাদের বারবার যেতেও বলেছেন। তবে এর থেকে বেশি কঠোর হতে আমরা চাইছি না। পরিস্থিতির নাগালের বাইরে চলে গেলে আমরা অবশ্যই কঠোর হাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় কাজ করব।”

 

Spectators watching candidates undergoing the test

দফায় দফায় লকডাউনের সময় বিভিন্ন এলাকায় সোশ্যাল ডিসটেন্সিংয়ের নামে পুলিশের অত্যাচার চোখে পড়েছে। বিভিন্ন সময় গরিব সবজিওয়ালা, মাছওয়ালাদের সামগ্রী রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকরা। এলাকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন এই প্রক্রিয়ার ফলে তাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে ১লা নভেম্বর পর্যন্ত এলাকায় পরীক্ষাটি চলবে। প্রথমদিকে পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এলাকাবাসীরা পুলিশসুপার বিএল মিনার কাছে আবেদন জানানোর পর রাস্তাকে ওয়ান ওয়ে করে দেওয়া হয়। তবে পুরো এলাকাজুড়ে পুলিশ এবং সিআরপিএফ জওয়ানরা ঘোরাঘুরি করেন। তারা যাকেই দেখেন ধমকাতে শুরু করেন। ফলে কোন দোকানপাট খুলে লাভ হচ্ছে না, ক্রেতারা আসতে পারছেন না। এলাকার ব্যবসায়ী চন্দন মজুমদার বলেন, “সাত মাস ধরে আমরা ব্যবসা করতে পারিনি, এবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এর মধ্যেই পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ার নামে আবার এলাকায় অঘোষিত কারফিউ জারি হয়েছে। আরও দেড় মাস এই প্রক্রিয়া চলবে, মাঝখানে পুরো শারদীয় উৎসব রয়েছে। এই দুঃসময়ে যদি আমাদের ব্যবসা এভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়, না খেয়ে মরতে হবে।”

এব্যাপারে পুলিশসুপার বিএল মিনার বয়ান, “যখন আমাদের এলাকায় এতজন যুবক-যুবতী চাকরির জন্য নিজেদের তৈরী করছে এবং পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, আমাদের উচিত তাদের স্বার্থে এগিয়ে আসা। সারা রাজ্যেই পরীক্ষা হচ্ছে, আমরা বিভাগের রাজ্যে স্তরের আধিকারিকদের জানিয়েছি শিলচরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। যদি জনগণের অসুবিধা হয় আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে পারি। তবে এতে যারা পরীক্ষার জন্য নিজেদের তৈরি করেছে তাদের ক্ষতি হবে। ফলে আমি এলাকাবাসীর প্রতি বলতে চাই, সবাই মিলে এক হয়ে এই তরুণ প্রজন্মকে সাহায্য করি এবং এতে যদি ছোটখাটো ক্ষতি হয় সেটা নিজেরাই বৃহত্তর স্বার্থে মেনে নিই।”

Comments are closed.