Also read in

"মেডিক্যাল ক্যাম্পাসে নিজেদের সুরক্ষিত মনে হচ্ছে না," স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি বেজবরুয়ার; ঘুংগুর আউটপোষ্টকে পূর্ণাঙ্গ থানা করার দাবি

করোনাকালে গোটা বরাক উপত্যকার সবথেকে বেশি ভরসাযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এজন্য হাসপাতালের অধ্যক্ষ সহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে বারবার সাধুবাদ জানিয়েছে রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ সহ এখানে কর্মরত চিকিৎসকরা। তারা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে নিজেদের সুরক্ষিত মনে করছেন না। এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কাছে বৃহস্পতিবার এক চিঠি পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া। পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ঘুংগুর আউটপোষ্টকে পূর্ণাঙ্গ থানা হিসেবে রূপান্তরিত করার।

হতাশা এবং ক্ষোভের সুরে অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি, এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা, এর স্বীকৃতি সরকার আমাদের দিয়েছেন। হাসপাতালের খামতিগুলো পূরণ করে পর্যাপ্ত পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের চিকিৎসকরা বাড়তি পরিশ্রম করেছেন। অথচ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই কিছু দুষ্টচক্র বারবার আমাদের হাসপাতালে পরিবেশ নষ্ট করতে চেষ্টা করছে। নানা বাহানায় তারা ক্যাম্পাসে ঢুকে অশান্তি ছড়ায় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আমরা পুলিশকে খবর দিই, কিন্তু এখানে পূর্ণাঙ্গ থানা না থাকায় পুলিশের সংখ্যা কম। ৫০ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুজন পুলিশ লাঠি হাতে কিছুই করতে পারবেনা। এসব দেখে মনটা খারাপ হয়ে যায়, মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় সরকারকে বলেই দিই আমাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিন। তবে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার মানুষ আমরা নই। ক্যাম্পাসে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষার দাবি জানিয়ে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছি। তার কাছে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। হাসপাতালের ক্যাম্পাসের ভেতরে সুরক্ষা ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে অনুরোধ করছি।

হাসপাতালের পক্ষ থেকে কাছাড় জেলাপ্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুংগুর আউটপোষ্টকে পূর্ণাঙ্গ থানা হিসেবে রূপান্তরিত করা হোক এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুরক্ষা আরও কঠোর করা হোক। পুলিশ বিভাগের কাছে আমরা এব্যাপারে একটি আবেদন জানিয়েছি, আশা করছি তারাও আমাদের কথায় সাড়া দেবেন।

পুলিশসুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি আবেদন করা হয়েছে এবং তারা এটি রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বিভাগের আধিকারিকরা।

দুদিন আগে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিতে এসে তাণ্ডব চালিয়েছিল একদল ছাত্র সহ কিছু লোক। শিলচর পলিটেকনিকের ইউনিফর্ম পরা কিছু ছাত্ররা রক্ত দিতে এলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের ফটো তোলা হয়। তবে তারা ফটো তুলতে বাধা দেয়। এতে ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং রক্তদাতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়, সেটা ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করে। কালা নামের এক ব্যক্তি এর মধ্যে ঢুকে পড়ে, তারা একসময় ব্লাড ব্যাংক ইনচার্জ সহ অন্যান্য ডাক্তারদের মারতে উদ্যত হয়। শেষমেষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘুংগুর আউটপোষ্টে খবর দেন এবং পুলিশ এসে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এরপরেও পলিটেকনিকের কিছু ছাত্র সহ প্রায় পঞ্চাশজন লোক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে স্লোগান দিতে থাকেন।

এটা প্রথমবার নয়, আগেও এভাবে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া কথাগুলো তুলে ধরেছিলেন। তবু সুযোগ পেলেই লোকেরা হাসপাতালের ক্যাম্পাসে হম্বিতম্বি করতে থাকে।

এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক ও ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বুধবার দুপুরে কালো ব্যাজ লাগিয়ে একটি প্রতিবাদ করেন। যৌথভাবে একটি বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন তারা। এতে বলা হয়েছে, “ঐতিহ্যবাহী শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ দূষিত করার উদ্দেশ্যে একটি দুষ্টচক্র লাগাতার কাজগুলো করে যাচ্ছে। তারা এখন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং এখানে পড়াশোনা করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের ওপর চড়াও হবার চেষ্টা করছে। তারা মেডিকেল কলেজে ঢুকে এবং পরিবেশ দূষিত করে তোলছে। আমরা চাই প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিক এবং হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুক।”

উল্লেখ্য, শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডাঃ রাজিব বিশ্বাস সিসিটিভি বসানো সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলা মোবাইল নিয়ে ব্লাড ব্যাংকের আশেপাশে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সেটা ভিডিও করেন। অনেকেই নিজেদের পরিচয় বলতে নারাজ এবং কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে সরব হয়। অতীতে হাসপাতালে রক্ত দেওয়ার নামে টাকার লেনদেন নিয়ে অভিযোগ ছিল। এক ব্যক্তি শেষমেষ আত্মহত্যা করেন। তবে সম্প্রতি কালা নামের এক ব্যক্তি রাজীব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলতে শুরু করেন। মঙ্গলবার দুপুরে যে ঘটনা হয়েছে তার নেতৃত্ব দিয়েছেন কালা, সে এখন পুলিশের হাতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কতটুকু পরিবর্তন হয় এটাই দেখার বিষয়।

Comments are closed.