Also read in

গান্ধীমেলা বাতিল হলেও সেই মাঠেই ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ডিজনিল্যান্ড মেলা

করোনার প্রকোপে এই বছর গান্ধীমেলা সহ বরাক উপত্যকার ঐতিহ্যবাহী তিনটি মেলাই বাতিল হয়েছিল। তবে এবার নতুন আশা নিয়ে শিলচর গান্ধীমেলার আকারের একটি বেসরকারি মেলা আয়োজিত হচ্ছে। আয়োজক হচ্ছেন গুয়াহাটির ডিকে এন্টারপ্রাইজ যারা প্রতিবছর গান্ধী মেলায় অংশ নেন। ১৫ দিনের জন্য গান্ধীমেলার মাঠে ডিজনিল্যান্ড মেলা আয়োজন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এর মেয়াদ আরেকটু বৃদ্ধি হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক রাজীব রায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ডিজনিল্যান্ড মেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। 

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গতবছর গান্ধী মেলা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেই শুরু হয় লকডাউন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা সহ অসমে বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা মেলায় যোগ দিয়েছিলেন তারা জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে যাওয়া তো দূর, নিজেরাও আটকা পড়েন। পরবর্তীতে অনেক কষ্টে নিজেরা ফিরে গেলেও মেলার জিনিসপত্র এখানেই এক বছর ধরে রাখা ছিল। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হওয়ার পরেও আবার নতুন উৎসাহ নিয়ে মেলার আয়োজন শুরু হয়েছে। অন্নপূর্ণা ঘাট সংলগ্ন গান্ধীমেলার মাঠে সেজে উঠছে বড় বড় আকারের চরকি, নাগরদোলা, ব্রেক ডান্স ইত্যাদি। আবার মাঠের মাঝখানে সারিবদ্ধ ভাবে গড়ে উঠছে দোকান। ইতিমধ্যে বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ১০০ জনের বেশি ব্যবসায়ী মেলার মাঠে উপস্থিত হয়ে গেছেন। যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। সব মিলিয়ে দেরিতে হলেও শিলচরের মানুষ মেলায় অংশ নেওয়ার স্বাদ পেতে চলেছেন। 

আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাবলা ব্যানার্জি, বেজনাথ রায়, স্বপন কুমার দে এবং মুক্তার আলম মঙ্গলবার বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেলা আয়োজনের ব্যাপারে নিজেদের বয়ান তুলে ধরেন। তারা বলেন, “গতবছর হঠাৎ করেই মেলা বাতিল হয় এবং আমরা অনেক চেষ্টা করেও আর্থিক ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারিনি। বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা গান্ধীমেলায় অংশ নিতে আসেন, প্রত্যেকে আটকা পড়ে যান এবং তাদের জিনিসপত্র পুরোপুরি নষ্ট হয়। এরপর এই বছর গান্ধীমেলা আয়োজন হয়নি, এতে আমরা আশাহত হই। শেষমেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিজেদের উদ্যোগে মেলা আয়োজন করা হবে। আমরা কাছাড় জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই। তারা আমাদের অনুমতি দেন, তবে সঙ্গে সতর্কবার্তাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেলায় যোগ দিয়ে আমাদের কতটুকু লাভ হবে সেটা জানি না, তবে গতবছর যে ক্ষতি হয়েছে তার কিছু অংশও যদি পুষিয়ে নেওয়া যায় সেটাও অনেক। এছাড়া দশকের পর দশক ধরে যে ধারা চলে এসেছে সেটা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য মেলা আয়োজন করছি আমরা। 

বিহারের চম্পারন জেলার ব্যবসায়ী পরমানন্দ গিরি প্রতিবছর শিলচর গান্ধী মেলায় যোগ দিতে আসেন। তাদের এলাকা থেকে প্রায় ৬০-৭০ জন ব্যবসায়ী একইভাবে মেলার অংশীদার হন। গত বছর তারা মেলায় অংশ নিতে এসে বিপদের মুখে পড়েছিলেন এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবু এবার মেলায় আসার সুযোগ পেয়ে তারা হাতছাড়া করেননি। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, “বহুদিন ধরে বরাক উপত্যকার গান্ধীমেলা সহ অন্যান্য মেলায় যোগ দিচ্ছি। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের জন্য নয়, এটা আবেগের টান হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতবছর শুধুমাত্র শিলচরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমনটা নয়, সারা পৃথিবীতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাই আমরা কাউকে দোষারোপ করতে পারিনা। এবার আবার নতুন উৎসাহ নিয়ে মেলায় যোগ দিয়েছি এবং আশা করছি পরিস্থিতি গত বছরের মতো দাঁড়াবে না। যদি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেলায় আসেন এবং আমাদের বিক্রি-বাট্টা ভাল হয় তাহলে ভবিষ্যতে মেলা বন্ধ হবেনা বলেই আমার ধারণা। তবে মনে উৎসাহ থাকলেও একটু ঝুঁকি নিয়েই মেলায় যোগ দিচ্ছি আমরা।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক রাজীব রায় বলেন, “আয়োজকরা আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এবং ১৫ দিনের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই কোভিড প্রটোকল লংঘন করা যাবে না, এটা বলে দেওয়া হয়েছে। তারা আরেকটু বেশিদিন সময় চেয়েছেন তবে সেটা এখনও বিবেচনাধীন। তারা যদি নিয়ম লঙ্ঘন না করেন এবং খুব বেশি জনসমাগম যদি না ঘটে, তাহলে মেলার মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা দ্বিতীয়বার ভাববো।”

শিলচর পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিবার মেলা আয়োজন করা হয়, কিন্তু এবার গান্ধীমেলা তারা আয়োজন করেননি। পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুমিত সত্যওয়ান বলেন, “করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করছেন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, তাহলে নিয়ম মেনে মেলা আয়োজন করতে কি অসুবিধা? কিছু ব্যবসায়ী মিলে আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বেসরকারিভাবে একটি মেলা করবেন, আমরা তাদের অনুমতি দিয়েছি তবে আমাদের আধিকারিকরা তাদের উপর চোখ রাখবেন।”

Comments are closed.