উবাচ : কে কি বলছেন এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের প্রাকমুহুর্তে
এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া ,এই খসড়া প্রকাশের প্রাকমুহুর্তে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া নেতা মন্ত্রীদের বক্তব্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি :
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল :
জাতীয় নাগরিক পঞ্জির খসড়ায় নাম না থাকলেও বরাক,ব্রহ্মপুত্র,পাহাড়, সমতল সর্বত্র – আসামের এই ৩৩ টি জেলার কোনো ব্যক্তির শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। যতদিন পর্যন্ত দাবি আপত্তির স্থায়ী নিষ্পত্তি না হচ্ছে ১) ততদিন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি কোন ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না ২) কাউকে বিদেশি হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং ৩)কাউকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে হবে না।
সুস্মিতা দেব (সাংসদ):
কতজন মানুষের নাম বাদ পড়বে তা নিয়ে আগে থেকে জল্পনা করতে চাই না, তবে যেসব ভারতীয় নাগরিক সামান্য নথির অভাবে বা অন্যান্য কারণে তালিকা থেকে বঞ্চিত হবেন তাদের পাশে আমার দল রয়েছে। বরাক উপত্যকায় চিরকালই শান্তিপ্রিয় মানুষের বাস, তাই খসড়া প্রকাশের পর সাধারণ মানুষ অশান্তি করবেন না এটা আমার বিশ্বাস। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অশান্তি ছড়াতে চেষ্টা করবে, আমি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে আহ্বান রাখছি।
কবীন্দ্র পুরকায়স্থ (প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী):
অত্যন্ত দক্ষ হাতে এনআরসির কাজ চলছে রাজ্যে এবং সাধারণ মানুষরা সম্পূর্ণ সহায়তা করছেন তবে একাংশ মানুষ অপপ্রচার চালিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। একাংশ স্বার্থান্বেষী মানুষ সাধারণ মানুষকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছে। তাদের কথায় কান না দিয়ে সরকারের উপর ভরসা রাখা দরকার।
দিলীপ কুমার পাল (বিধায়ক শিলচর)
খসড়া নিয়ে কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে জনমনে, তবে সর্বানন্দ সোনোয়াল সরকারের প্রতিশ্রুতি মত কাউকে বঞ্চিত করা হবে না । কতজন মানুষের নাম বাদ পড়বে এ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও সংখ্যাটা বেশ ভালই হবে অনুমান করা যায় ।এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই ।বাঙালি হিন্দু সহ ছয়টি সম্প্রদায়ের নির্যাতিত মানুষ কোনভাবেই বিদেশি হতে পারেন না, এটা আমরা সবাই জানি । আসল অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে রাজ্যে বিদেশি সমস্যার সমাধান করতেই এত তোড়জোড়। ছোটখাটো কারণে অনেকের নাম তালিকায় নাও থাকতে পারে। তবে ভবিষ্যতে এটা ঠিক করে নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করার সুযোগ তো রয়েই গেছে, তাই প্ররোচনায় আতঙ্কিত হবেন না ।
কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, বিধায়ক উত্তর করিমগঞ্জ:
প্রথম খসড়া থেকে দ্বিতীয় খসড়া দুই ক্ষেত্রেই বরাক উপত্যকার মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, আমি মনে করি। এই খসড়া নিরপেক্ষ নয়, তাই প্রক্রিয়াটি আপাতত স্থগিত হওয়া উচিত। খসড়া প্রকাশের সঙ্গে বিশাল সংখ্যক মানুষ নিজেদের নাম খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হবেন । তবে শেষ পর্যন্ত কাউকে বঞ্চিত হতে দেব না আমরা। মানুষ আতঙ্কিত, এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামী রেবতী দাস আমার কাছে এসে তার মানসিক আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। বিজেপি সরকার মানুষের কাছে ব্যর্থ এবং এর ফল তাদের পেতে হবে। পুলিশ সেনাবাহিনী এনে ১৪৪ ধারা জারি করে কি বুঝাতে চাইছে রাজ্য সরকার?
কিশোর নাথ, বিধায়ক বড়খলা :
খসড়া থেকে কত মানুষ বাদ পড়বেন এসব নিয়ে চিন্তিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর যে সব ভারতীয় নাগরিক প্রয়োজনীয় নথির অভাবে অসুবিধায় পড়বেন তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করব আমরা। প্রয়োজনে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা হবে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সহায়তাও নেওয়া হবে ।
দুলাল মিত্র, সিপিআইএম
যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নাগরিকত্ব নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে রাজ্য সরকার এবং সমন্বয়ক প্রতিক হাজেলা। আজ প্রকাশিতব্য নাগরিক পঞ্জিতে হাজার হাজার মানুষের নাম বাদ যাবে, এসব জানা কথা। তবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমাদের আবেদন পুরনো নিয়মগুলো বহাল রেখে কি করে বেশি থেকে বেশি মানুষের নাম অন্তর্ভূক্ত করা যায় তার ব্যবস্থা করতে ।
আতাউর রহমান মাজার ভূঁইয়া, প্রাক্তন বিধায়ক কাটিগড়া:
এনআরসি একটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া এবং এতে কোনো আপত্তি থাকলে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। খসড়া প্রকাশ হলেই জানা যাবে কত মানুষ বাদ পড়েছেন ।সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে সুন্দরভাবে নিচ্ছেন এবং সহযোগিতা করতে রাজি আছেন ।তবে সরকার যেভাবে সেনা-পুলিশ এনে ১৪৪ ধারা জারি করে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি করেছে তাতে আমরা খুশি হতে পারছি না, এভাবে আতঙ্ক ছড়াবেন না। বরাকের মানুষ, বাংলা ভাষী মানুষ, এত ধর্মের রাজনীতি যাতে না হয়।
বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য :
ডি-ভোটার এর সঙ্গে এনআরসির কোনো সম্পর্ক নেই, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল এনআরসির সমস্যাকে গুলিয়ে ফেলছে, এতে জনগণ বিভ্রান্ত ।উদ্বাস্তু সমস্যাকে আপাতত সরিয়ে রাখলেও এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের প্রাক্কালে পরিস্থিতি অনেকটাই জটিল। তবে এ নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক, আশঙ্কা কিংবা চিন্তার কোন কারণ নেই, যেহেতু চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ পাওয়ার পরও আপত্তির মাধ্যমে নাম অন্তর্ভূক্ত করার সুবিধা রয়েছে।
Comments are closed.