কালীপুজোর রাতে শ্যামানন্দ লেনে দুর্ধর্ষ ডাকাতি,স্তম্ভিত এলাকাবাসী
পুজোর মরশুম শুরু হওয়ার পর থেকেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। কালীপুজোর রাতে কনকপুরের শ্যামানন্দ লেনে ঘটেছে এক পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনা। প্রায় পাঁচলক্ষ টাকার সোনা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সহ ৮০ হাজার ক্যাশ টাকা নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এরকম একটি ঘটনায় এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে, এভাবে পরিকল্পিত ডাকাতির পেছনে কোনও একটি দলের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিবেকানন্দ কমার্স কলেজের শিক্ষক অভিদীপ রায় চৌধুরী এবং তার স্ত্রী আরিয়ান কলেজের শিক্ষিকা মৈত্রেয়ী মিশ্রের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। যদিও সেই সময় তারা দুজনেই ঘরে ছিলেন না।
অভিদীপ রায়চৌধুরী কালীপুজোর রাতে শ্যামানন্দ আশ্রমে পুজোর কাজে শ্রমদান করেন। সন্ধেবেলাই আশ্রমে চলে গিয়েছিলেন তিনি। পরে তার স্ত্রী আশ্রমে যান এবং সেখান থেকে তার বাবার বাড়িতে কিছু সময়ের জন্য যান। এই সুযোগে বাড়ির পেছনের দিক দিয়ে ঢুকে তালা ভেঙে পুরো ঘর তছনছ করে ডাকাতরা। তাদের বিয়ের মাত্র এক বছর হয়েছে, এছাড়া পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী কিছু গয়না বাড়িতে রাখা ছিল। ডাকাতেরা ঘরের প্রায় সবগুলো আলমারি ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভেঙেছে। এরপর খুঁজে খুঁজে সবগুলো গয়না এবং টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। ঘরের আরও কিছু মূল্যবান জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে তারা। পরিবার সূত্রে বলা হয়েছে, অন্তত পাঁচলক্ষ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এছাড়া ঘরে যেসব জায়গায় ক্যাশ টাকা রাখা ছিল সেসবও নিয়ে গেছে।
রাতে আশ্রমের কাজের ফাঁকে একসময় অভিদীপ বাড়িতে এলে ঘরের তালা ভাঙ্গা হয়েছে দেখে চিৎকার করেন এবং বন্ধু-বান্ধবদের ডাকেন। সবাই ঘটনায় স্তম্ভিত। পুজোর রাতে এভাবে পরিকল্পিত ডাকাতি হওয়া এলাকায় প্রায় প্রথম। রাতে পুলিশকে খবর দিলে তারা আসেন এবং পুরো ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। রাঙ্গিরখাড়ি থানার তরফ থেকে আসা পুলিশকর্মীরা বলেন, “ডাকাতের দল বাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তির উপর নজর রেখেছে এবং তারা যখন বাড়িতে ছিলেন না তখন পরিকল্পিতভাবেই কাজটি করেছে। এখন প্রায় রোজ রাতেই শহরের কোনও না কোনও জায়গায় চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। আমরা আশা করছি তদন্তে কিছু না কিছু বেরিয়ে আসবে, যার সূত্র ধরে ডাকাতের দলকে পাকড়াও করা যেতে পারে।”
অভিদীপ রায় চৌধুরীর বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। প্রায় ছয় মাস আগে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। মা এবং বাবার স্মৃতি বিজড়িত বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র ঘরে ছিল। সেগুলো ডাকাতরা নিয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে তারা অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। এক সময় তো এমনটা বলতে শুরু করেন, ” পারলে টাকা নিয়ে নিক ডাকাতরা, আমাদের জিনিস গুলো ফিরিয়ে দিক। কারণ এগুলো শুধুমাত্র মূল্যবান জিনিসপত্র নয় আমার বাবার এবং মায়ের স্মৃতি।”
সম্প্রতি শহরে দিনের আলোয় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া চুরি এবং ডাকাতির সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেশি। পুলিশের তরফে চুরি হওয়ার পর এলাকা পরিদর্শন করলেও প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই কাউকে ধরা যায় না, চুরি হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধারতো অনেক দূরের কথা। এই পরিস্থিতিতে শহরের মানুষ নিজেকে কি করে নিরাপদ ভাববেন, এমনটাই প্রশ্ন করছেন অনেকে।
Comments are closed.