শেষমেষ মিজোরাম অধিকৃত জমিতে ঢুকলেন অসমের ডিআইজি; সীমান্তের দুই দিকেই বসছে কেন্দ্রীয় বাহিনী
অসমের যে অংশ জমি মিজোরাম বাহিনী দখল করেছে সেখানে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে রাজ্যের কোন পুলিশ বা সরকারি আধিকারিক প্রবেশ করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো এলাকায় প্রবেশ করলেন ডিআইজি দিলীপ কুমার দে সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। সম্প্রতি মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া শিলচরে এসে জানিয়েছিলেন অসম মিজোরাম সীমান্তে বাহিনী পাঠাচ্ছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে মোট ছয়টি কোম্পানি পাঠানো হয়েছে। তিনটি অসমের দিকে বসবে এবং তিনটি মিজোরামের দিকে। ইতিমধ্যে বাহিনী এসে পৌঁছেছে এবং তাদের স্থানীয় সরকারি বিদ্যালয় থাকতে দেওয়া হয়েছে। পাকাপাকি ভাবে তাদের জন্য বেস ক্যাম্প বানিয়ে দিতেই এদিন সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেন ডিআইজি দিলীপ কুমার দে।
সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। আগে এর নাম ছিল স্পেশাল সার্ভিস ব্যুরো। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্ত সমস্যা সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যেই এদের পাঠানো হয়েছে। তাদের জন্য কোন জায়গায় ক্যাম্প বসানো হবে এটা দেখতে বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যের পুলিশ এবং বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে এলাকা পরিদর্শন করেছে।
পরিদর্শন শেষে ডিআইজি দিলীপ কুমার দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রের তরফে অসমের জন্য এসএসবি’র তিনটি কোম্পানি পাঠানো হয়েছে। কাছাড় জেলার সংলগ্ন সীমান্তে দুটো কোম্পানি বসবে এবং করিমগঞ্জ জেলায় সীমান্ত এলাকায় একটি কোম্পানি থাকবে। একইভাবে মিজোরামের দিকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তিনটি কোম্পানি পাহারায় থাকবে। তাদের দিকে বিএসএফ বাহিনী থাকবে বলে জানা গেছে। তারা এসে পৌঁছানোর আগে আমরা জায়গা নির্ধারণ করতেই এলাকা পরিদর্শন করেছি। প্রথমে মিজো বাহিনী আমাদের বাধা দিলেও পরে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দুই পক্ষ মিলে এলাকা পরিদর্শন করি। তবে তারা এখনও আমাদের জমি ছাড়তে রাজি নন, অন্তত এটুকু স্পষ্ট। তবে আমরা কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছি, সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ম্যাপ অনুযায়ী যে সীমানা রয়েছে সেখানেই যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী বসানো হয়। এবার তারাই বুঝবেন কোন জায়গায় তাদের বেস বানানো হবে।’
এদিন ডিআইজির সঙ্গে ছিলেন আইজিপি দীপক কেডিয়া, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, পুলিশ সুপার বিএল মিনা, বন বিভাগের ডিএফও সানিদেও চৌধুরী, বন বিভাগের সাউদার্ন আসাম সার্কেলের চিফ কনজারভেটর সুমন মহাপাত্র, সহ বন বিভাগের এবং কাছাড় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিকরা। এছাড়া এসএসবি কমান্ডেন্ট তাদের সঙ্গে ছিলেন। বাহিনীর যারা ইতিমধ্যে কাছে এসে পৌঁছেছেন তাদের আপাতত থাকার জন্য হাওয়াইথাং এবং ভাগা এলাকায় দুটি সরকারি স্কুলে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিন সরকারি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এলাকাবাসীরাও মিজোরাম অধিকৃত কাছাড়ের এলাকা দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অসমের জমিতে থাকা লায়লাপুর অটোস্ট্যান্ডেই তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে কোলাশিবের তরফে পুলিশ আধিকারিকরা এলে সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারি আধিকারিকদের ওপারে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে পাকাপাকি ভাবে থাকার জন্য বেস বানিয়ে দিতে তিনটি জায়গা দেখা হয়েছে। তুলারতল, পাগলাছড়া এবং খুলিছড়ায় সম্ভাব্য ক্যাম্প বসানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখনো এব্যাপারে স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, সোমবার মিজোরামের পুলিশ কাস্টডিতে অসমের নাগরিক ইন্তাজুল আলী লস্করের মৃত্যুর পর সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া এবং ডিজিপি ভাস্কর জ্যোতি মহন্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং মৃত ব্যক্তির বাড়িতেও যান। পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা করা পাঁচ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান তুলে ধরেন। এলাকায় পৌঁছে তারা মিজোরাম সরকারের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন। এরপর বুধবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কেন্দ্র সরকারের বাহিনী পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া সীমান্ত সমস্যার ঐতিহাসিক দিকগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, এসব ব্যাপারে দুই পক্ষকে মুখোমুখি বসে আলোচনা করতে হবে।
Comments are closed.