মঙ্গলবার পজিটিভ ১৫৯, পরপর দুইদিন আক্রান্ত শতাধিক, শরীরে করোনা নিয়ে মৃত শিশুটি হাইলাকান্দির
মঙ্গলবার কাছাড় জেলায় মোট ১৫৯ জন লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এটিই এযাবৎ একদিনে সবথেকে বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড। সোমবার এবং মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য বারবার ভুল প্রমাণিত হচ্ছিল। শেষে মঙ্গলবার গভীররাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা টুইট করে জানালেন, কাছাড় জেলায় মঙ্গলবার মোট ১৫৯ জন লোক আক্রান্ত হয়েছেন। তার মানে, এখন পর্যন্ত কাছাড় জেলায় মোট ৮৭৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে পাঁচ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের জন্য এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বাকি চারজনের মৃত্যুর পর শরীরে করোনা পাওয়া গেছে।
সোমবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৩, কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য দেওয়ায় আমাদের প্রতিবেদনে ৯৪ লেখা হয়েছিল। আজ বিভাগের তরফে এ কথাটি স্বীকার করা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যেবেলা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল জেলায় সাত বছরের একটি শিশুর মৃত্যুর পর করোনা পাওয়া গেছে। আসলে শিশুটি হাইলাকান্দির, ভুলবশত স্বাস্থ্য আধিকারিক আমাদের জানিয়েছিলেন শিশুটি কাছাড়ের বাসিন্দা। মঙ্গলবার গভীর রাতে বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এটি ভুলবশত দেওয়া তথ্য। তার মানে কাছাড় জেলায় এদিন এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর শরীরের কোরনা পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষায় ৪৬ জন এবং রেপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে পরীক্ষায় ৭৬ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কাছাড় জেলায় মোট ৮৭৪ জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে উপত্যকার বাকি দুই জেলাকে পেছনে ফেলে সবথেকে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কাছাড়ে।
মৃত্যুর পর শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যাওয়ার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। মঙ্গলবার জেলায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে, তার মৃত্যুর কারণ করোনা কিনা, এটা এখনো পরিষ্কার করে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা জানিয়েছেন, এটা ঠিক করবে রাজ্য স্তরের ডেথ অডিট বোর্ড। এর আগে চারজন ব্যক্তির শরীরে মৃত্যুর পর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়, এর মধ্যে একজনকে করোনা ভাইরাসের মৃত বলে ঘোষণা করেছে ডেথ অডিট বোর্ড।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানানো হয়েছিল, সাত বছরের শিশু নিবাস রায় শিলচর মেডিকেল কলেজে মারা গেছে এবং মৃত্যুর পর তার শরীরে করোনা পাওয়া গেছে। এটা সত্য, শিশুটি নেফ্রাইটিস রোগে ভুগছিল, তাকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তার হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। মৃত্যুর পর তার সোয়াব স্যাম্পল নেওয়া হয়, এবং জানা যায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। তবে প্রথমে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছিলেন যে শিশুটি কাছাড় জেলার, প্রায় রাত বারোটা নাগাদ তিনি আবার বলেন, শিশুটি কাছাড় জেলার নয়, হাইলাকান্দি জেলার বাসিন্দা ছিল।
কাছাড় জেলার মৃত ব্যক্তি হলেন ৪৬ বছরের সামসুল ইসলাম, বাড়ি ভাগা বাজার। এছাড়া তার ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোনও বিষদ বৃত্তান্ত জানানো হয়নি। জানা গেছে মৃত্যুর পর তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে ।
বেশ কিছুদিন পর কাছাড়ের কোন তথ্য সরাসরি টুইটের মাধ্যমে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। জেলায় এদিন মোট ১৫৯ জন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই আসাম রাইফেলসের জওয়ান।
মঙ্গলবার যাদের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে এর মধ্যে রয়েছেন তারাপুর এলাকার ৪০ বছরের রূপক গুহ ও ৫৫ বছরের দেবাশীষ পাল চৌধুরী ; প্রেমতলা এলাকার ৬ বছরের শিশু নবেন্দ্র কুমার অধিকারি , বিবেকানন্দ রোডের ১৬ বছরের কিশোর বিবেক শুক্লবৈদ্য; রাধা মোহন রোডের ৫৮ বছর বয়স্ক শুক্লা পাল ; জানিগঞ্জ বাজার এলাকার প্রিয়াঙ্কা পাল (২৩) ও গোপা পাল (৬২); বিধান সরণি, হাইলাকান্দি রোডের রৌশিক পাল (২০) ও রঞ্জন কুমার পাল (৫৬); রাধামাধব রোডের বিশাল কান্তি পাল (২৫)।
Comments are closed.