"আজমলের সঙ্গে জোট ধর্মনিরপেক্ষ নয়" বিজেপিতে যোগ দিলেন সুস্মিতা-ঘনিষ্ট দীপন দেওয়ানজী
১৯৮৬ সাল থেকে কংগ্রেস দলের একজন ভরসাযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে আসছেন দীপন দেওয়ানজী। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহাজোটের নামে এআইইউডিএফ দলের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত মেনে নিতে পারেননি তিনি। শেষমেষ দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন বরিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মীটি। সোমবার গুয়াহাটিতে রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস, সাংসদ রাজদীপ রায়, মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য সহ দলের তাবড় তাবড় নেতাদের উপস্থিতিতে বিজেপির অভিষেক ঘটেছে তার। এদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং দীপন দেওয়ানজীকে কংগ্রেস দলের ‘নিষ্প্রয়োজন নেতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে সুস্মিতা দেব এমনটা করেননি, তিনি বলেছেন প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের পছন্দ মত জায়গা খুঁজে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
এর আগে দীপন দেওয়ানজী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে তার দলত্যাগের সিদ্ধান্ত কারণ সহ জানিয়ে দিয়েছেন। সেই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট লিখেছেন, “বদরুদ্দিন আজমল এআইইউডিএফের সুপ্রিমো হওয়ার পাশাপাশি অসমের জামিয়া-উলামা-এ-হিন্দের মত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তার উপস্থিতিতে শিলচরে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যক্তির সঙ্গে যখন নির্বাচনের আগে কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে, অবশ্যই এতে দলের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ অপমানিত হয়েছে। তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিষ্ঠাবান কংগ্রেস কর্মী হিসেবে কাজ করেছি, শুধুমাত্র দলের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের জন্যই। বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা সম্ভব নয়। তাই আমি দলের সমস্ত পদ থেকে এবং দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।”
তবে অজিত সিং তাকে কংগ্রেস দলের অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দিলেও বিজেপি প্রদেশ কমিটি কিন্তু বেশ জাঁকালোভাবে তাকে বরণ করে নিয়েছে। নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিলেও টিকিট প্রত্যাশীদের দৌড়ে নেই তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন দীপন দেওয়ানজী। গুয়াহাটি থেকে ফোনে বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “ছাত্রজীবন থেকেই আমি একজন রাজনীতিবিদ। সারা জীবন কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি করেছি এবং দলের ভরসাযোগ্য নামে হিসেবে নিজেকে এগিয়ে রেখেছি। আজ হয়তো অজিত সিং বা প্রদীপ দে-র মত নেতারা আমাকে নিষ্প্রয়োজনীয় বলছেন, তবে আমি সন্তোষ মোহন দেব এবং সুস্মিতা দেবের মত দলের প্রথম সারির নেতার কাছে অত্যন্ত ভরসাযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বারবার প্রমাণ দিয়েছি। এখনও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে, তবে আদর্শগতভাবে আর কংগ্রেস দলে থাকতে পারছি না।”
সোমবার বিকেলে কংগ্রেস কার্যালয়ে দলীয় অফিসে একটি সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সাংবাদিকরা দীপন দেওয়ানজীর প্রসঙ্গ টেনে সুস্মিতা দেবকে প্রশ্ন করলে প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং এবং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ দে নিজেই এগিয়ে এর উত্তর দেন। তারা বলেন, “দীপন দেওয়ানজী বহুদিন ধরেই জেলা কংগ্রেসের কাছে নিষ্প্রয়োজন একজন কর্মী। তাকে দিয়ে দলের কোনো কাজই হচ্ছে না, ফলে এমন ব্যক্তি বিজেপিতে চলে গেলে আমাদের ক্ষতি হবে না।”
তাদের কথার মাঝখানে সুস্মিতা দেব বলেন, “আমি এমনটা মনে করিনা। দীপন দেওয়ানজী যদি বিজেপিতে যোগ দিয়ে থাকেন সেটা তার নিজের স্বাধীনতা। তার সিদ্ধান্তকে ব্যক্তি হিসেবে আমি শ্রদ্ধা জানাই। আর নির্বাচনের আগে নেতাদের একদল থেকে আরেক দলে চলে যাওয়া কোনো নতুন ব্যাপার নয়।”
কয়েক মাস আগে কাছাড় জেলায় কংগ্রেস দলের একমাত্র বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের টিকিট প্রত্যাশায় বিজেপিতে যোগ দেননি, বরং কংগ্রেস দলের সঙ্গে এআইইউডিএফের আতাত হওয়ার ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রায় হুবহু এক কথাই বললেন দীপেন দেওয়ানজী। তিনিও টিকিট প্রত্যাশী নন, বরং কংগ্রেস দলের সঙ্গে আজমলের আঁতাত হওয়ার ফলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেস কার্যালয়ের আশাপাশে এমনটাও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে আগামীতে শরিফুজ্জামান এবং তমাল কান্তি বণিকের মতো বহু পুরনো কংগ্রেস নেতারা মাথায় গেরুয়া-টুপি পরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার সময় বলে দেবে নির্বাচনের আগে আর কতজন কংগ্রেস নেতা বিজেপির সদস্য পদে নেন।
Comments are closed.