মিজো আক্রমণে কেউ মারা গেলে মনে হয় আমার ছেলের আবার মৃত্যু হলো, বললেন গতবছর নিহত যুবকের বাবা
গতবছর নভেম্বর মাসে জঙ্গলে লাকড়ি খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন মিজোরাম সীমান্তে থাকা অসমের বাসিন্দা ইন্তাজ আলি। দুদিনের মাথায় তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ মিজোরাম থেকে উদ্ধার হয়। তার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মা-বাবা এখনও সেই শোক ভুলতে পারেননি। সোমবার মিজো বাহিনীর গুলিতে ছয় পুলিশ জওয়ান মারা গেছেন, এই খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইন্তাজ আলির বাবা সাহাজুদ্দিন।
তিনি ভাল করে চোখে দেখতে পান না, ছেলের মৃত্যুর পর ভালো করে ঘুম হয় না তার। বাবা হারানো দুই নাতি এবং স্বামীহারা পুত্রবধূকে চোখের সামনে দেখে বারবার মনে হয় এই অন্যায়ের কি কোনও শেষ হবে না? অসমের ছয় পুলিশকর্মীর মৃত্যুর খবর শুনে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন, তার মনে হয়েছে, মিজোরাম তাদের চিন্তাধারা থেকে সরে আসেনি, বরং আরেকটু এগিয়ে গেছে।
বুধবার বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে মনের মধ্যে একটা আশা ছিল, হয়তো তার ছেলের হত্যাকারীদের কিছু হলেও সাজা হবে। তবে মিজোরাম যেভাবে প্রকাশ্যে অসমের মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে, আরও ছয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, এরপর তার ন্যায় পাওয়ার আশা আরও কমে গেছে।
তিনি বলেন, “মিজোরামের অন্যায় কার্যকলাপ আমার ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। সে নিরীহ মানুষ হিসেবে হয়তো কাউকে বিশ্বাস করেছিল এবং তারা তাকে সেখানে নিয়ে অকথ্য যন্ত্রণা দেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য করেছে। এই যন্ত্রণা আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনা। এরপর যখন দেখি আমার মতই আরও কোনও মা-বাবা সন্তান হারিয়েছেন এবং তাদের হত্যার পেছনে দায়ী মিজোরামের লোকেরা, আমার মনে হয় আবার নিজের ছেলেকে হারিয়েছি। দুদিন আগে যে ঘটনা হয়েছে এতে আমি আবার সন্তানহারা হয়েছি বলেই মনে হচ্ছে। সরকারপক্ষ কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে জানিনা, তবে যদি ঈশ্বর থাকেন তাহলে এই অন্যায়ের খেসারত একদিন মিজোরামকে দিতেই হবে।”
ইন্তাজ আলির স্ত্রী রায়না বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামীর মৃত্যুর মানসিক প্রভাব তার থেকে বেশি তাঁর দুই ছেলের উপর পড়েছে। তার দুই ছেলে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, যাতে ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে এমন অন্যায় হলে তারা রুখে দাঁড়াতে পারে। তবে সোমবার মিজো দুষ্কৃতিদের গুলিতে প্রকাশ্যে পুলিশ হত্যা হওয়ার পর তিনি এখন ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।
তিনি বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর আমার দুই ছেলে শাইদুল এবং শাইদুর পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারা ভবিষ্যতে কি হবে সেটা এখন বলা সম্ভব নয়, তবে স্বপ্ন যেহেতু পুলিশ হওয়ার দেখছে, সেটা বাস্তব হওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে। সোমবার যেভাবে মিজোরাম প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় একে একে ছয়জন পুলিশ কর্মী নিহত হলেন, এরপর আমি ছেলেদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।”
Comments are closed.