একশো'র বাইরে: আসাম বিশ্ববিদ্যালয় কি শেষ পর্যন্ত পাঁচগ্রামের কাগজকলে পরিণত হবে! চিন্তিত বুদ্ধিজীবীরা
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়! বরাকবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আর আন্দোলনের ফসল! বরাকবাসীর স্বপ্নমাখা এই বিশ্ববিদ্যালয়তো সহজলভ্য ছিল না।ঝরাতে হয়েছে অনেক ঘাম। এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে লেগেছে দীর্ঘ সময়। সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল আমাদের এই আসাম বিশ্ববিদ্যালয়! তাই এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বরাকবাসীর আশা ঊর্ধ্বমুখী হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু সেই আশা আজ অনেকটা মুখ থুবরে পড়েছে, যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় এনআইআরএফ’র রেঙ্কিংয়ে শীর্ষ একশোর মধ্যে জায়গা করতে পারেনি। বরং রেঙ্কিংয়ে ছিটকে পড়েছে অনেক পেছনে।কেন এই অবস্থা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের? এই অবনতির কারণ কি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই প্রসঙ্গটি পাড়া হল শিলচরের বিশিষ্ট কয়েকজনের কাছে। তাদের বক্তব্যের সম্পাদিত অংশ তুলে ধরা হলো।
তপোধীর ভট্টাচার্য, প্রাক্তন উপাচার্য, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়
২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় দুবার ৪০ এর মধ্যে রেঙ্কিং পেয়েছিল। আর দ্বিতীয় বারে তো আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ রেঙ্কিং পায়। তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় ছিল। কাজেই বিষয়টা শুনে অবশ্যই খুব খারাপ লাগছে। তবে সবচেয়ে প্রথমে তো বিষয়টা বুঝতে হবে জনসাধারণকে। অথচ এখানের জনসাধারণ নিশ্চুপ, উদাসীন। তাই কোনো কিছুতেই যেন তাদের কিছু যায় আসে না। আমি যখন উপাচার্য ছিলাম কাজ করার চেষ্টা করেছি এবং কতটা উন্নতি হয়েছিল সেটা ইতিহাস ধরে রেখেছে।
১৯৯৪ থেকে ২০১৪- টানা ২০ বছর অধ্যাপনা করেছি, তারপর উপাচার্য ছিলাম। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা বড় সুদৃঢ়। কাজেই এমন খবরে দুঃখতো হবেই। একটা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুললেই হয়না, তাকে রক্ষা করা, তাকে লালন করা কিংবা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা অনেক বড় দায়িত্ব। আমরা সেই দায়িত্বটা কতটা পালন করছি, সেটা বোধহয় বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে প্রশ্ন করা খুব জরুরি।
রাজদীপ রায, সাংসদ
হ্যাঁ, যে রেঙ্কিং এসেছে সেটা মোটেই কাম্য নয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, আমাদের আরও সময় দিতে হবে। আমি আশা করছি ম্যানেজমেন্ট, অধ্যাপক সবাই একসঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির চেষ্টা করবেন।
আর আমিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, প্রয়োজনের মুহূর্তে আমি তাদের সাহায্য করবো।তাদের সমস্যাগুলো শুনবো, বোঝার চেষ্টা করব ,যথাস্থানে ওদের সমস্যাগুলো নিয়ে যাওয়া এবং সমাধানের চেষ্টা করব। আমার যতটুকু করা প্রয়োজন আমি করব। ইতিমধ্যেই তাদের কাজের উপর আমি দৃষ্টি রাখছি।
সুস্মিতা দেব, প্রাক্তন সাংসদ
শিলচর এনআইটি যা করে দেখাতে পারলো, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় তা পারল না। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই না পারার পেছনে আমি মনে করি যোগ্যতার অভাব। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তগুলো যোগ্যতার উপর নির্ভর করে নেওয়া হচ্ছে না
একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছাতে হলে কোনভাবেই যোগ্যতার সঙ্গে সমঝোতা করা ঠিক নয়। আর এটাও সত্য, যোগ্যতার সঙ্গে সমঝোতা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পতন হওয়া অবশ্যম্ভাবী। আমার মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ এবং সিদ্ধান্তগুলো যোগ্যতার নিরিখে নেওয়া হচ্ছে না। এখানে উপাচার্য যে জড়িত আছেন, সেটা বলছি না, কিন্তু সরকারের খুব বেশি হস্তক্ষেপ রয়েছে।অথচ হস্তক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করা যেতেই পারে।আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি।
প্রদীপ দত্ত রায়, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আকসা
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাক উপত্যকার জনগণ আকসার নেতৃত্বে ১০ বছর আন্দোলন করেছেন। এটা এই উপত্যকার জনগণের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।কাজেই অনেক আশা ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে। কিন্তু বাস্তবে উল্টোটাই হলো। বর্তমান উপাচার্যের অধীনে এই বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আমরা জানি যে রেঙ্কিং একশ’র বাইরে চলে গেলে কেন্দ্র থেকে যাবতীয় অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই বলতে হচ্ছে, এই বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচগ্রাম কাগজ কলে পরিণত হতে চলেছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।তাই অবিলম্বে যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করা না হয় তাহলে একে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
অথচ আমাদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে, অর্থাৎ আমরা যে আন্দোলন করেছিলাম সেই আন্দোলনের বিপক্ষে গিয়ে জেদ করে তেজপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হল। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নন-এফিলিয়েটেড এবং আমাদের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এফিলিয়েটেড। অথচ সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ রেঙ্কিংয়ে এত উপরে উঠে গেছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের মাথা নত করে দিয়েছে পুরো আসামের মানুষের কাছে। কাজেই এখানের জনগনকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় রক্ষা করতে জোরদারভাবে কিছু একটা করতে হবে। আমি তো বলব, প্রশাসন ও এই উপাচার্য চরম ব্যর্থ। এই উপাচার্যের কবলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবস্থা হয়েছে।
Comments are closed.