Also read in

৩৬ তম মাসও আজ সম্পূর্ণ, বেতন ছাড়াই জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন কাগজ কলের কর্মচারীরা

পুরনো বছরকে পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সবাই যখন পার্টি মানাতে ব্যস্ত, তখন হিন্দুস্তান কাগজ কলের কর্মচারিদের কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে দিশেহারা অবস্থা। বাস্তবটা এতটাই কঠিন যে তারা আজ বেতনহীন ভাবে ৩৬ তম মাস সম্পূর্ণ করলেন।

এই মাসের শুরুর দিকে কাগজ কলের কোয়ার্টারে বসবাসরত প্রায় ৩৫০ জন পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, যখন ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কোয়ার্টার খালি করার আদেশ আসে। এদিকে এইচপিসি পেপার মিলস রিভাইভাল অ্যাকশন কমিটি এবং আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে কর্মচারিদের বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বাকি বকেয়া এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো না পাওয়া পর্যন্ত কোয়ার্টার খালি করা সম্ভব হবে না।

অন্যদিকে আসামের শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন যে আসাম সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, কাজেই কাউকে কোয়ার্টার খালি করতে হবে না। “আমরা কোনভাবেই তাকে বিশ্বাস করতে পারি না, কারণ তিনি এর আগেও বেশ কয়েকবার মিথ্যা বলেছেন। আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট, তারা যদি আমাদেরকে কোয়ার্টার থেকে বের করতে চান, তাহলে আমাদের মৃতদেহকে তাদের বের করতে হবে।প্রথমে তারা আমাদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা ছিনিয়ে নিয়েছেন এবং এখন তারা আমাদের মাথার উপর ছাদও ছিনিয়ে নিতে চান যা আমরা কোনোভাবেই হতে দেব না,” উল্লেখ করলেন এইচপিসি পেপারমিল রিভাইভাল অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী।

এদিকে মর্মান্তিক এক দৃশ্য দেখা যায়, যখন গতকাল এক ছাত্র রাস্তায় ডিম বিক্রি করতে বসেছিল। কারণ হিসেবে জানা যায়, তার সেমিস্টারের ফি দেওয়ার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। সে ফেসবুকে একটি পোস্টে উল্লেখ করে,” সরকার হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশনের কর্মচারিদের ৩৬ মাসের বেতন দেয়নি।অথচ সম্প্রতি তারা কর্মচারিদের কোয়ার্টার খালি করার জন্য আদেশ পাঠিয়েছে। তাহলে আমরা কোথায় যাব? সত্যি কি কোন দল আমাদের জন্য ভাবছে? আমি এখানে এইচপিসি হেডকোয়ার্টার ক্যাম্পাসের বাইরে বসে ডিম বিক্রি করছি।” তার ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায় যে সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে এবং তার সেমিস্টার-ফি বাকি রয়েছে।

“আমরা ভিখারি নই। আমরা অনুগ্রহ চাইছি না। আমাদের মুলতুবি বেতন, যা আমাদের অধিকার, যা আমরা কাজ করে অর্জন করেছি তা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারকে বলছি।মানুষ পরীক্ষার ফি দিতে পারছেনা, চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছে না এবং সরকার অলসভাবে বসে সব দেখছে। আমাদের মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করা হচ্ছে” চক্রবর্তী যোগ করেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং আরো অনেক কেন্দ্রীয় ও প্রতিমন্ত্রীরা কাগজ কলগুলো পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও সে প্রতিশ্রুতি গুলো এখন মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়ে গেছে।

নতুন বছর, নতুন দশককে স্বাগত জানাতে সবাই যখন আনন্দে মাতোয়ারা, তখন কাছাড় ও নগাও পেপার মিলের কর্মচারীরা অনিদ্রায় অনাহারে এক নতুন সূর্যের আশায় প্রহর গুনছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি সে সূর্যের উদয় হবে?

Comments are closed.