Also read in

পূর্ত ছিনিয়ে সান্তনার বন মন্ত্রক পরিমলকে, স্থান পেলোনা নতুন মুখ, সর্বা সরকারেও উপেক্ষিত বরাক?

মন্ত্রীত্ব বন্টনের ব্যাপারে বরাক উপত্যকাকে একরকম ব্রাত্য করেই রেখেছিলেন সর্বানন্দ সনোয়ালের সরকার। একমাত্র মন্ত্রী হিসেবে পূর্ত, আবগারী এবং মৎস্য বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পরিমল শুক্লবৈদ্যকে। মন্ত্রী হিসেবে রিপোর্ট কার্ডও ভাল ছিল তাঁর, তবু প্রথম মন্ত্রীসভা সম্প্রসারনেই ছিনিয়ে নেওয়া হলো বরাকের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পূর্ত মন্ত্রকটি। এবার রাজ্যের সবথেকে ক্ষমতাশালী নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হাতেই গেল পূর্ত বিভাগ। আর পরিমলের ভাগ্যে এল বিতর্কিত বন বিভাগ।

বরাকের উন্নতির কথা ফলাও করে প্রচার করেন সর্বা সরকারের প্রতিনিধিরা। নমামি বরাক উৎসবে এসে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বরাকের উন্নতির আশ্বাস দিয়ে গেছেন। তবু কথা রাখার বেলায় বরাকের ভাগ্যে উপেক্ষাই জোটে।
বরাকের ১৫ টি বিধানসভা আসনে ৮টি জিতেছে বিজেপি, কাছাড়ে ৬টি এবং করিমগঞ্জে ২টি। শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে রাজ্যে বিধানসভার উপাধ্যক্ষের পদ দেওয়া হলেও একে মন্ত্রীত্বের পর্যায়ে নেওয়া যায়না।

পরিমল শুক্লবৈদ্য পুর্তমন্ত্রী থাকা কালীন বর‍াকে রাস্তাঘাটের উন্নতির গতি যে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল তা অস্বীকার করা যায়না। বিভিন্ন বিতর্ক থাকলেও বরাকের তিন জেলার গ্রাম এবং শহরের রাস্তাগুলি এখন সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে এবং এতে পরিমলের কাজের প্রশংসাই করেন সাধারণ মানুষ। তবে সর্বানন্দ সরকারের আমলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দাপটের সামনে বরাকের মানুষের স্বার্থ অবশ্যই উপেক্ষিত হওয়ার মতোই। তাই পূর্ত বিভাগ ছিনিয়ে নিয়ে শান্তনা হিসাবে বন বিভাগ দেওয়া হল। তার উপর মন্ত্রীসভায় নেওয়া হলোনা বরাকের নতুন কাউকে।

বন বিভাগ হল রাজ্যের অন্যতম বিতর্কিত বিভাগ যার অধীনে রয়েছে ডিমা হাসাও জেলায় থাকা মহাসড়কের সেই বিতর্কিত অংশ যার দরুন সড়কটির কাজ আজও শেষ হয়নি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের দুর্নীতির কথা সামনে আসে। প্রমিলা রানি ব্রহ্ম বনমন্ত্রী থাকাকালীন বিভাগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বহুবার সোচ্চার হতে দেখা গেছে পরিমল শুক্লবৈদ্যকে। কাছাড়ের বিতর্কিত ডিএফও এন আনন্দের দুর্নীতির ব্যাপারে বারবার প্রমিলার হস্তক্ষেপ আহবান করেছেন তিনি। পাথর কোয়ারির দুর্নীতি রোধেও কথা বলতে দেখা গেছে পরিমলকে। তবে সরকার কর্তৃপক্ষ এতে কতটা খুশী ছিলেন তা নিয়ে বারবার কথা উঠেছে। হয়ত এসব কারনেই এবার পরিমলকেই বনমন্ত্রী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সারা রাজ্যে ৮৬ আসনে জয়ী হয়েছিল বিজেপি তবে এর মধ্যে একমাত্র মুসলমান প্রার্থী কাছাড়ের সোনাই বিধানসভার আমিনুল হ‍ক লস্কর। সাম্প্রদায়িক সমতা রক্ষার কথা মাথায় রেখে তাঁকে মন্ত্রীত্ব দেবেন বলে অনেকেই ধারনা করলেও তা হয়নি। এবার মন্ত্রীসভা সম্প্রসারণের বেলায়ও উপেক্ষিত রাখা হলো তাঁকে। বরাক সহ সারা রাজ্যে এব্যাপারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আমিনুল হক এসব নিয়ে নিজে কোনও অসন্তোষ প্রকাশ না করলেও বরাক উপত্যকায় আরেকজন মন্ত্রী দেওয়ার দাবি করেন তিনি। সোনাই, হাইলাকান্দি, শিলচরের মধুরবন্দ সহ বরাকের স্থানে স্থানে এ নিয়ে বিক্ষোভ ও হচ্ছে ।

কংগ্রেসের আমলে বরাকের তিন জেলায় উন্নতি ঠিক কতটা হয়েছে তা বিতর্কিত বিষয় তবে বর্তমান সরকারের থেকে বেশী মন্ত্রী ছিলেন সেই সময়। সর্বানন্দ সরকারের বরাক-ব্রহ্মপুত্রের সমান উন্নতির স্লোগানে বরাকের জনগণ আস্থা রেখেই এই অঞ্চলে পদ্ম ফুটেছিল। তবে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি উপেক্ষা ভবিষ্যতে বিজেপির জন্য বিপরীত পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার আগে বোধোদয় হলেই সবার মঙ্গল।

সম্প্রসারণ, পরিবর্তনের পর রাজ্য মন্ত্রীসভার সর্বশেষ চিত্রটি হল এরকম

 

Comments are closed.