
আরেক ধাপ পিছোলো এপিএসসি ২০১৮-র রেজাল্ট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পিডিএফ 'ফেক', জানালো কমিশন
দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ায় ২০১৮ সালের এপিএসসি মেন পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়নি। আটকে আছে অক্লান্ত পরিশ্রম করা অনেক যুবক যুবতীর ভবিষ্যৎ। ২৩ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি হাইকোর্টের এই মামলার শুনানির পর মঙ্গলবার রায় ঘোষণার কথা ছিল, তবে কোনও এক অজানা কারণে সেটা হয়নি। এর আগে ইন্টারনেটে রেজাল্টের একটি পিডিএফ ভাইরাল হয়েছে। এতে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এপিএসসির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই পিডিএফটি ফেক এবং কোনও এক দুষ্টচক্র ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করেছে। এর বিরুদ্ধে সিআইডি স্তরের মামলা করবে এপিএসসি কমিশন।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তে আসাম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রিলিম্স্ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তবে রেজাল্ট ঘোষণার আগেই একটি অদ্ভুত সমস্যা দেখা দেয়। পরীক্ষা ওএমআর শিটে নেওয়া হয়েছিল, এক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে একটি শুদ্ধ উত্তরপত্র কম্পিউটারে সেট করা থাকে। পরীক্ষার্থীরা যেগুলো উত্তর দেবেন তার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে কম্পিউটার নিজে থেকেই রেজাল্ট ঘোষণা করবে।
তবে সেই বছর কম্পিউটারে ভুল উত্তরপত্র ছিল বলে অভিযোগ উঠে। প্রশ্নের উত্তরে যে চারটি জায়গা দেওয়া থাকে সেখানে ভুল উত্তরকে শুদ্ধ দেখানো হয়েছে এবং শুদ্ধ উত্তরকে ভুল দেখানো হয়েছে। একটা দুটো নয়, ২১ থেকে ২২টি বিষয় মিলিয়ে মোট ৯২টি পেপারে এমন পাওয়া গেছে যেখানে শুদ্ধ উত্তরকে ভুল দেখানো হয়েছে এবং ভুল উত্তরকে শুদ্ধ।
কমিশন পুরো ব্যাপার খতিয়ে দেখে ৪০৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে যারা মেনস্ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এদের নাম দ্বিতীয় তালিকায় যুক্ত করে দেওয়া হয় যেখানে আগে থেকেই পাশ করা পরীক্ষার্থীদের একটি তালিকা তৈরি ছিল। এতে প্রশ্ন উঠে, ভুল উত্তর দিয়ে যারা পাশ করেছে তাদের কেন তালিকায় রাখা হবে। পরবর্তীতে গৌহাটি হাইকোর্টে এবিষয়ে মামলা হয়।
হাইকোর্টের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিলয় দত্তকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে, তিনি আদালতের কাজে সাহায্য করবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরবেন। এপিএসসি কমিশন এবং আদালতের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবেন তিনি।
২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি গ্রহণ করে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এতজন যুবক যুবতীর ভবিষ্যৎ শুধুমাত্র এই রায়ের জন্য আটকে রয়েছে, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মামলার নিষ্পত্তি হোক। আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয় ২৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে। এপিএসসি কমিশন জানিয়েছে, আদালতের পক্ষ থেকে রায় এলে এক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া সম্ভব।
কোনও এক অজানা কারণে ২৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেনি গৌহাটি হাইকোর্ট। ফলে বিষয়টি আর একটু পিছিয়ে গেছে। তবে এর আগে রেজাল্টের একটি পিডিএফ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এপিএসসি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পিডিএফটি ফেক। এতে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে, ফলে যারা এটি প্রকাশ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে এব্যাপারে অভিযোগ জানানো হয়েছে। আগামীতে সিআইডির কাছে এব্যাপারে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। দোষীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। কমিশনের চেয়ারম্যান নিজে মামলাগুলো করবেন এমনটাই খবর পাওয়া গেছে।
তবে পুরো ঘটনায় আবারও একধাপ পিছিয়ে গেল পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট ঘোষণার প্রক্রিয়া। এধরনের পরীক্ষায় যারা অংশ নেন, তারা অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী। পরীক্ষার জন্য নিজেদের অনেক দিন ধরে তৈরি করেন। কঠোর পরিশ্রমের পর মনে আশা নিয়ে পরীক্ষায় বসে এভাবে রেজাল্টের জন্য টানাপোড়ন চললে আখেরে ক্ষতি সমাজেরই।
Comments are closed.