Also read in

সৌদি আরবের নম্বর থেকে আসছে মিসড-কল, আতঙ্কিত উপত্যকার অনেকেই, কাশ্মিরের 'ওয়ান-রিং' স্ক্যামের সঙ্গে সামঞ্জস্য

সম্প্রতি বরাক উপত্যকার অনেকের কাছেই সৌদি আরবের নম্বর থেকে মিসড কল আসছে। স্মার্টফোনে প্রায় প্রত্যেকেই ট্রু-কলার ব্যবহার করেন, এতে অন্তত যে দেশ থেকে ফোন আসছে তার আন্তর্জাতিক কোড এবং এলাকার উল্লেখ থাকে।‌ যে নম্বরগুলো থেকে ফোন আসছে তার আন্তর্জাতিক কোড সৌদি আরবের। প্রথমদিকে ২ বা ৩ সেকেন্ডের জন্য মিসড কল আসছে, এর কয়েকদিন পর পুরো কল আসছে। কেউ কেউ সাহস করে সেটা রিসিভ করলেও ওপাশ থেকে কোনও আওয়াজ নেই। যদিও বেশিরভাগ লোকেই কল রিসিভ করছেন না, তবে অনেকেই এব্যাপারে কৌতুহল প্রকাশ করছেন, আবার কেউ কেউ আতঙ্কিত হচ্ছেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা এমন হয়েছে যেখানে অজানা নম্বর থেকে ফোন করে বয়স্ক এবং শিশুদের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুষ্কৃতীর দল। তাই সৌদি আরবের নম্বর থেকে ফোন আসায় আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক।

কিছুদিন ধরেই +৯৬৬ ৫৭৭৫৭৯৫৫৪, +৯৬৬ ৫৭৬৩৭৯৭৪৬, +৯৬৬ ৫৭৭৫২৬২৬২ ইত্যাদি নম্বর থেকে উপত্যকার অনেকেই মিসডকল পাচ্ছেন। গুগলে +৯৬৬ টাইপ করলেই জানা যায় এটি সৌদি আরবের আইএসডি কোড। অর্থাৎ সৌদি আরবের কোনও নম্বর থেকে মিসড কল আসছে। সরাসরি কোনও যোগাযোগ না থাকলেও সম্প্রতি অনলাইনে কাপড় ইত্যাদি জিনিস কিনতে গিয়ে মোটা অংকের টাকা হারিয়েছেন শিলচর সহ বরাক উপত্যকার অনেকেই। এতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক রয়েছে।

কেউ কেউ এব্যাপারে পুলিশের আধিকারিকদের কাছেও খবর দিয়েছেন। পুলিশের তরফ থেকে তাদের পরিষ্কার বলা হয়েছে, কোনওভাবেই যাতে কল রিসিভ না করেন অথবা মিস কল পেয়ে কল ব্যাক না করেন। এতে নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাদের অনেক তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারেন দুষ্কৃতীরা। এমনকি যে নম্বর থেকে কল ব্যাক করা হবে সে নম্বরের ক্লোন বানিয়ে নেওয়া সম্ভব, অর্থাৎ একই নম্বরের আরেকটি সিম বানাতে পারে দুষ্কৃতীরা। পরবর্তীতে সেই সিম ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

এবছরই মে-জুন মাসে জম্মু-কাশ্মীরে এমনটা হতে দেখা যায়। সৌদি আরব এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের নম্বর থেকে এভাবেই মিসকল আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা চোখে পড়ে। একসময় জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ সাধারণ মানুষকে সাবধান করে দিয়েছিল কোনওভাবেই যাতে এধরণের কল কেউ রিসিভ না করেন অথবা এসব নাম্বারে ফোন না করেন। এই অপরাধের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ান কল স্ক্যাম’।

পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র একটা রিংয়ের কল আসে এবং এতে গ্রাহকরা কল ব্যাক করলে তাদের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে নেয় দুষ্কৃতীরা। সুরক্ষা সংস্থাগুলো এমনও বলেছে, এগুলো আদতে বিদেশ থেকে আসা কল নয়। একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে দুষ্কৃতীরা এমনভাবে কল করে সেখানে আইএসডি কোড বিদেশের দেখানো যায় তবে আসলে তারা দেশের মাটিতে বসেই কাজটি করছে।

সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, নাম ছিল ‘জমতারা’। কিভাবে ফ্রড কলের মাধ্যমে মানুষের কষ্টে অর্জিত পয়সা হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা এটাই ছিল ওয়েব সিরিজের মূল কাহিনী। গতবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই ধরণের ঘটনা চোখে পড়েছিল। নানান দেশের পুলিশ তাদের মত করে এগুলো আটকানোর পদ্ধতি বের করেছে। জম্মু কাশ্মীরের পর অসমের বরাক উপত্যকায় সম্প্রতি একইভাবে ফোন আসছে, এটা অবশ্যই আতঙ্কিত হওয়ার মতই ঘটনা।

Comments are closed.