সোশ্যাল মিডিয়ায় টেট বুকলেটের ছবি: সেবা আইনি ব্যবস্থা নেবে; তদন্ত শুরু!
শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা পরীক্ষার (TET) একটি বুকলেটের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ৩১ অক্টোবরের এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যক্তি একজন শিক্ষক হবেন এবং রাজ্যের ভবিষ্যত গঠন করবেন। এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছিল এবং সরকারের কঠোর নিয়ম নীতিও ছিল। বরাক উপত্যকার অপর দুই জেলা হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ বাদ দিয়ে এক্ষেত্রে শুধু কাছাড়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কাছাড়ের ডেপুটি কমিশনার কীর্তি জল্লি পরীক্ষা শেষে পরীক্ষার্থী, ইনভিজিলেটর, কাছাড় পুলিশ এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত অন্যান্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন বার্তায় লেখা ছিল, “কোনও ঘটনা মুক্ত পরীক্ষার জন্য অভিনন্দন। কাছাড় জেলায় ৩৭,৩০৪জন পরীক্ষার্থী মসৃণ এবং সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন। আমরা আমাদের কেন্দ্র ইনচার্জ, ইনভিজিলেটর, ফ্লাইং স্কোয়াড, জেলার তত্ত্বাবধায়ক অফিসার এবং এছাড়াও নগাঁও এবং কামরুপ মেট্রো থেকে আগত এস ও’দের আমাদের ছাত্রদের ভবিষ্যতের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রশংসা করি।”
এখন মনে হচ্ছে, জেলা শাসক খুব তাড়াতাড়ি এ কথা বলেছেন। একটি পুস্তিকা যা সিল করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থাকার কথা, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যেখানে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ ছিল, পুস্তিকাটি কীভাবে সার্বজনীন ডোমেনে পৌঁছেছিল? কে ছবিটি ক্লিক করেছে এবং আপলোড করেছে? প্রশ্নপত্র কি নির্দিষ্ট প্রার্থীদের সাহায্য করার জন্য ফাঁস হয়েছিল? অনেক প্রশ্ন আছে এবং প্রতিটি বৈধ। এই ঘটনাটি পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের কারণও হয়ে উঠেতে পারে। কেউ আদালতে যেতে পারেন এবং ২০১৮ সালের এপিএসসি নিয়োগের ঘটনার মতো এবার টেটের নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও বিলম্বিত করতে পারেন।
দিসপুরের সূত্র যদি বিশ্বাস করা হয়, তবে আসামের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড নিয়ম-কানুন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার কথা ভাবছে।
বরাক বুলেটিন টিমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়েছে যে, সমস্ত প্রশ্ন সম্বলিত পুস্তিকাটি সোনাবাড়িঘাটের মইনুল হক চৌধুরী স্কুলের চার নম্বর কক্ষ থেকে পাবলিক ডোমেনে পৌঁছেছে। তাছাড়া, কাছাড়ের স্কুল পরিদর্শক সামিনা ইয়াসমিন রহমান কেন্দ্রের প্রধান মুস্তাফিজুর রহমানকে বিষয়টি তদন্ত করে বিকেলের মধ্যে তার সামনে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি বোঝার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটরাও কেন্দ্রের প্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মুস্তাফিজুর রহমান যে কোনো তদন্তে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এবং নিজেই তদন্তের অনুরোধ করেছেন।
টেট বুকলেট প্রতিটি প্রার্থীর জন্য আলাদাভাবে সিল করা এবং প্যাক করা হয়। প্রশ্ন এবং একটি ওএমআর শীট সম্বলিত পুস্তিকাটি যখন আবেদনকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন পরিদর্শকগণ পুস্তিকাটি প্যাক করা রয়েছে কিনা এবং সীলমোহরটি অক্ষত আছে কিনা তা প্রার্থীকে নিশ্চিত করতে বলেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে, ওএমআর শীটগুলি সিল করা হয় এবং প্রেরণ করা হয়। সংগৃহীত বুকলেটগুলি প্রক্রিয়াটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের মধ্যে কঠোর নিরাপত্তায় থাকার কথা।
ভাইরাল হওয়া পুস্তিকাটির ছবিতে প্রার্থীর রোল নম্বর রয়েছে। যার অর্থ, প্রার্থী কর্তৃক ছবিটি ক্লিক করার সম্ভাবনা খুবই কম। এছাড়াও, কেন্দ্রের অভ্যন্তরে মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ক্যামেরা নিষিদ্ধ। প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আগে প্রতিটি প্রার্থীকে একাধিকবার চেক করা হয়েছিল, তবে ক্যামেরাটি কোথা থেকে এল?
স্কুল পরিদর্শকের সূত্র জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন যে একজন পরিদর্শক হল থেকে কমন রুমে নিয়ে যাওয়ার সময় বা বাছাইয়ের সময় নিজেই ছবিটি ক্লিক করেছেন। তবে আরও রহস্যজনক বিষয় হলো পরিদর্শকদেরও হলে প্রবেশের আগে তাদের মোবাইল ফোন জমা দিতে হয়। ঐ স্কুলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে ২৪ জনের বেশি পরীক্ষার্থী থাকলে দুইজন ইনভিজিলেটর তদারকি করবেন এবং ২৪ জন প্রার্থী পর্যন্ত একজন পরিদর্শক হলগুলিতে একই কাজ করবেন। ৪ নম্বর কক্ষে ২৪ জন আবেদনকারী ছিলেন; তাই, শুধুমাত্র একজন পরিদর্শকই ছিলেন। বরাক বুলেটিন নিশ্চিত করেছে যে, স্কুলের একজন পুরুষ শিক্ষক সেই কক্ষে ডিউটিতে ছিলেন। তবে তিনি যে পুস্তিকাটির ছবি ক্লিক করেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
একজন শিক্ষক বরাক বুলেটিনের সাথে কথা বলে জানিয়েছেন, রোল নম্বর উল্লেখ থাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথাটি অবাস্তব, তবে পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। এই ঘটনায় পরীক্ষার ফলাফলের উপর কী প্রভাব ফেলে তাও দেখার বিষয়। এছাড়াও, স্কুল পরিদর্শক এবং পরীক্ষার প্রধানের কি বিষয়টির তদন্ত করা উচিত, না কি একটি তদন্ত সংস্থা এটি গ্রহণ করা উচিত! গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং উদ্বেগ সব দিক থেকেই আসছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কী ঘটে তা দেখার বিষয়। তবে মনে রাখতে হবে, শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করতেই এই পরীক্ষা এবং শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড।
Comments are closed.