ধলাইয়ের "অক্সিজেন বয়"-কে কাছাড়ের পরিবেশ সচেতনতার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর বানানোর প্রস্তাব বন বিভাগের
ধলাই বিধানসভা সমষ্টির অধীনে ছোট জালেঙ্গা দ্বিতীয় খন্ডের বাসিন্দা ৯-বছর-বয়সের অভিনব দেব পরিবেশে অক্সিজেন বৃদ্ধি করতে ১০০০ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ছোট বয়সে এমন একটি সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় কাছাড় জেলার বন বিভাগ মঙ্গলবার তাকে সম্মান জানায়। বিভাগের ডিএফও সানিদেও চৌধুরী অভিনব দেবকে “অক্সিজেন বয়” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং তাকে কাছাড় জেলার পরিবেশ সচেতনতা ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করা অভিনব শিক্ষকদের কাছে শুনেছে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের অক্সিজেন দিতে হয়, আর অক্সিজেন আসে গাছ থেকে। তাই এলাকায় এক হাজার গাছ লাগানোর সংকল্প নেয় সে। ২ জুলাই নিজের জন্মদিনকে সামনে রেখে তার স্বপ্নপূরণের কাজে লেগে পড়ে সে। অবশ্যই পাশে রয়েছেন মা বুলটি দেব এবং বাবা অজয় দেব। ইতিমধ্যে তারা শ’খানেক চারা রোপণ করেছেন এবং সেগুলো রক্ষার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ছোট জালেঙ্গা দ্বিতীয় খন্ড থেকে নাগাথল রোড পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সরকারি সড়কের পাশে গাছ লাগানো হবে, বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে শিলচর শহরের অফিসপাড়ায় বন বিভাগের কার্যালয়ে অভিনব দেবকে সন্মান জানান বন বিভাগের আধিকারিকরা। কোভিড প্রটোকল মেনে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ছোট্ট শিশুটির মনোবল বৃদ্ধি করা এবং এর মাধ্যমে জেলার সাধারণ জনগণকে পরিবেশ সচেতন হওয়ার দিকে আকৃষ্ট করা।
ডিএফও সানিদেও চৌধুরী বলেন, “আমরা ছোট্ট শিশুটির উৎসাহ এবং তার মহৎ উদ্দেশ্য দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। আমার বিশ্বাস জেলায় আরও অনেকেই এভাবে পরিবেশ সচেতন হয়ে নিজেদের মতো কাজ করছেন, যার ফলস্বরূপ গাছপালা এবং পশু পাখি রক্ষা পাচ্ছে। মাত্র নয় বছর বয়সে একটি শিশু পরিবেশে অক্সিজেন বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে গাছ লাগাচ্ছে এবং চারপাশের গাছপালা রক্ষা করতে চাইছে, এটা অত্যন্ত একটি সুন্দর উদাহরণ। আমরা চাইছি এই শিশুটিকে কাছাড় জেলার পরিবেশ সচেতনতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা করতে। এতে আরও অনেকের মনে খুব সহজে পরিবেশ সচেতনতার ধারণা গিয়ে পৌঁছবে। শিশুদের কথা শিশুরা খুব সহজে বুঝতে পারে, যদি আগামীতে অনেক শিশু এভাবে গাছ লাগাতে উদ্যত হয়, তাহলে তাদের মা-বাবা এবং পরিবারের লোকেরাও এগিয়ে আসবেন। আমরা আগামীতে বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের কাছে এই প্রস্তাব বেশ করব এবং তিনি স্বীকৃতি দিলে অভিনব দেবকে কাছাড় জেলার পরিবেশ সচেতনতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ঘোষণা করা হবে।”
অভিনব দেবের বাবা অজয় দেব বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করলেও আমার ছেলের জিজ্ঞাসার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকে পরিবেশের বিষয়। গাছ কেন সংরক্ষণ করা প্রয়োজন? গাছপালা আমাদের কি দেয়? কেন লোকে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন? অক্সিজেন যখন কম, তাহলে গাছ কেন কাটা হচ্ছে? ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন তার। মাঝে মাঝে আমরাও তার প্রশ্নে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, অথচ তার সচেতনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ছোটবেলা থেকেই অভিনব গাছ লাগানো এবং গাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন। আমাদের বাড়িতে অনেক মূল্যবান গাছ তার উদ্যোগেই লাগানো হয়েছে এবং সেগুলো সংরক্ষণের দিকে সবসময় নজর রাখে অভিনব। এবার সে সংকল্প নিয়েছে এলাকায় গাছ লাগাবে এবং আমার কাছে দাবি করেছে, সেগুলো সংরক্ষণে তাকে সাহায্য করতে হবে। সম্প্রতি তার জন্মদিনে আমরা অন্য কোনও উপহার দিইনি, শুধুমাত্র তাকে গাছ লাগাতে সাহায্য করেছি এবং সেগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে তার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।’
কাঁঠাল রোডের দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্র অভিনব বাড়িতেই অনলাইনে ক্লাসে যোগ দেয়। সেখানেও শিক্ষকদের সঙ্গে তার আলোচনায় আগ্রহ সবসময়ই পরিবেশ, অক্সিজেন ইত্যাদি। তার মা বুল্টি দেব এলাকার আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য এবং সমাজসেবী। তিনি জানিয়েছেন, তার ছেলে মাছ-মাংস ইত্যাদি পছন্দ করে না, তার প্রিয় খাবার হচ্ছে ফল। তিনি বলেন, “অভিনব মাংস খেতে চায় না কারণ এতে কোনও প্রাণীকে হত্যা করা হয়। পরিবেশ নিয়ে তার উৎসাহ ছোটবেলা থেকেই রয়েছে। এবার এক অদ্ভুত বায়না ধরেছে, এলাকায় গাছ লাগিয়ে অক্সিজেন বাড়াবে। অবশ্যই এটা অত্যন্ত সুন্দর স্বপ্ন এবং তার সরল স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে আমরা পাশে রয়েছি।”
Comments are closed.