করোনা আবহেই প্লেটিনাম জুবিলি উদযাপন করছে তারাপুর 'এস এস রাইস মিল' সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি, এবারও প্রতিমা দিয়ে বিশেষ নজর কাড়তে প্রস্তুতি সম্পন্ন
প্রতিমার জন্য প্রতি বছরই সবার বিশেষ নজর থাকে তারাপুর এস এস রাইস মিল সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির দিকে। বরাক উপত্যকার দুর্গাপুজোয় রাইস মিল পূজা কমিটি আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছে ‘বিশেষ’ ধরনের প্রতিমা নির্মাণের জন্য। উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন রাইস মিলের দুর্গা প্রতিমা দেখার জন্য। বেশ কয়েক বছর ধরেই এটা যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা কাল হলেও এবারও এই ট্রেন্ড বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার রাইস মিল সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সঙ্গে এক বিশেষ ব্যাপার জড়িয়ে রয়েছে। এ বছরই ঐতিহ্যশালী এই দুর্গাপূজা কমিটি নিজেদের ৭৫তম বছরে পা রাখছে। মহামারী ভাইরাস না থাকলে বিশাল পরিসরে জাঁকজমকভাবে পুজোর আয়োজন করতেন কমিটির সদস্যরা। তবে করোনা আবহে সেটা হচ্ছে না। তাই বলে নিজেদের একেবারে গুটিয়েও রাখছে না এই দূর্গা পূজা কমিটি। কোভিড প্রটোকল মেনে যতোটুকু আয়োজন করা যায় ততটুকুই করছেন তারা। আর প্রতিবছরের নিয়ে ন্যায় এবারও প্রতিমা তে বিশেষ নজর কাড়তে প্রস্তুত এসএস রাইস মিল দুর্গাপূজা কমিটি।
ভারত বর্ষ স্বাধীন হওয়ার বছরেই প্রথম পূজা শুরু হয়েছিল এই পূজা কমিটির। তখন পুজো হত ই অ্যান্ড ডি কলোনি এলাকায়। পল্লি মঙ্গল সমিতির ব্যানারে। পরবর্তী সময়ে স্থান পরিবর্তন হয়। অবশ্য গত দশ বছর থেকে রাইস মিলের সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের জমির ওপর পুজো হয়ে আসছে। এবছর মন্ডপ সৃজনে রয়েছেন জয় দাস ও বাপন চক্রবর্তী। আলোক সজ্জায় অজিত দাস এবং প্রতিমা নির্মাণে থাকছেন পয়লাপুলের শিল্পী নবেন্দু শেখর চৌধুরী। এবারও প্রতিমায় জোর দিয়েছেন তাঁরা। পুজোতে থিমের জোয়ারে গা না ভাসালেও, সাবেকিয়ানায় প্রতিমা সাজিয়ে তোলা হয়েছে। অসাধারণ সাবেকি সাজে সেজে উঠবে মা দুর্গার প্রতিমা।
করোনা আবহেও বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বস্ত্র বিতরণ। এক হাজার বস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নিয়েছেন তারা। এরমধ্যে পুরুষের পাঁচশ এবং মহিলার জন্য পাঁচশ বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কোভিডের জন্য বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি গাড়িতে করে শহরের স্থানে স্থানে করা হবে। কোভিড প্রটোকল বজায় রেখে দর্শনার্থীদের মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করতে হবে। ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হবে। সেইসঙ্গে সুস্বাদু বুন্দিয়া লাড়ু বিতরণ সহ ভারতীয় ডাকের পোস্টকার্ড প্রদর্শন এবং পোস্টিংয়ের আকর্ষণীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মূলত চিঠিপত্র আদান-প্রদানের বিষয়টি নব প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। এতে দর্শনার্থীরা ইচ্ছে করলে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের কাছে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে পারবেন। এরজন্য থাকবে পোস্টকার্ড পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা। এই কর্মসূচিতে পূবালী ক্লাব ও চতুরঙ্গ সহযোগিতায় রয়েছে।
৭৫তম বছর বলে কথা, তাই শুরুতে বাজেট ধরা হয়েছিল ৪০ লক্ষ টাকা। কিন্তু কোভিড আতঙ্কে অনেক অনুষ্ঠান ছেঁটে ফেলা হয়েছে। বর্তমান বাজেট একেবারে কমিয়ে ১৬ লক্ষের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেইনটেইন করে সবকিছুই হবে। প্যাকেটের মাধ্যমে করা হবে প্রসাদ বিতরণ। মন্ডপের এলাকা নিয়মিতভাবে স্যানিটাইজ করা হবে। করোনা টিকার প্রথম ডোজ না নেওয়া থাকলে মণ্ডপে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। এছাড়া মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের ব্যবহার করতে হবে। এবারের কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন দিব্যজ্যোতি নাথ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রজত শর্মা, যুগ্ম সম্পাদক সৈকত দত্ত ও এস চন্দ, কোষাধ্যক্ষ রিপন দে ও নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য।
করোনার জেরে মনে হচ্ছিল এবারও বুঝি সবকিছু ভেস্তে যাবে। তবে দেশের সঙ্গে রাজ্যেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কমিটির সদস্যদের মনে নতুন করে আশা জাগে। তারা সিদ্ধান্ত নেন, সরকারের জারি করা সব বিধি নিষেধ মেনেই পুজোর আয়োজন করবেন। সীমিত পরিসরে কোভিড প্রটোকল মেনেই সবকিছু করা হবে। সে অনুসারে এগিয়ে যাচ্ছে এসএস রাইস মিল দুর্গাপূজা কমিটি।
Comments are closed.