Also read in

শিলচরে 'কা' প্রতিবাদীদের টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ, হাতেগোনা প্রতিবাদীদের আটকাতে শ'খানেক পুলিশ

নতুন নাগরিকত্ব আইন (কা), এনআরসি এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কার্যসূচি আয়োজন করেন ফোরাম ফর সোশাল হার্মনি, কোরাস ইত্যাদি সংগঠনের সদস্যরা। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তিদের প্রতিবাদ রুখতে শ’খানেক পুলিশকর্মীকে মাঠে নামানো হয়। ১০-১৫ মিনিট প্রতিবাদ চলার পরই এদের টেনেহেঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় এবং শিলচর সদর থানায় প্রায় ঘণ্টা তিনেক আটক রাখা হয়। পুলিশের মতে তারা আইন ভেঙেছেন। তবে এই ছোটখাটো আন্দোলন আটকাতে এত বিশাল পুলিশবাহিনী নামানো নিয়ে সারা শহরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছ।

ফোরাম ফর সোশাল হার্মনি, কোরাস, অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে কিছু সাধারন মানুষও এদিন প্রতিবাদে যোগ দেন। আগে থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, বিকেল তিনটে নাগাদ প্রতিবাদী সভাটির ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে আয়োজন করা হবে। তবে সকাল থেকেই বিরাট পুলিশ বাহিনী নামিয়ে প্রশাসনের তরফে এলাকায় এক অন্য রকমের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। খোলা বারে গ্রাম গঞ্জ থেকে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন কাজে শহরে আসেন। সকাল থেকে পুলিশ বাহিনী দেখে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন শহরে কোনোও বড় ঘটনা ঘটেছে কিনা। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এলাকায় এসে জড়ো হন। ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে যে খালি জায়গা রয়েছে সেখানে আগে থেকেই একটি পুলিশের বাস রেখে দেওয়া হয়েছিল। তবু একদিকে খোলা জায়গা বেছে প্রতিবাদীরা প্লে কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।

প্রথমেই তারা নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, নতুন নাগরিকত্ব আইন (কা), এনআরসি এবং ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তাদের এই কর্মসূচি। প্রদীপ নাথ প্রতিবাদী কর্মসূচির প্রথম ভাষণটি শুরু করেন। তার সঙ্গে ধীরে ধীরে বাকিরাও যোগ দেন। তারা বলেন, ‘আমরা এখানে শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এসেছি। সরকার কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রতিবাদে কথা বলার অধিকার নাগরিক হিসেবে আমাদের রয়েছে। আজকাল কেউ কেউ বলেন, যারা এ ধরনের আইনের বিরোধিতা করছেন তারা মুসলমানদের হয়ে কথা বলছেন। তবে আমরা মনে করি না বিজেপি হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য কোন কাজ করছে। দেশের ৮০ শতাংশ লোক হিন্দু। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের কিভাবে দুর্দিনের মুখে পড়তে হচ্ছে এর থেকে হিন্দুরাও বাদ যাচ্ছেন না। তাই আমরা দাবি করছি বিজেপি হিন্দুদের সুরক্ষা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয়। ‘

তাদের ভাষণ কিছুটা এগোতেই জেলা প্রশাসনের তরফে দীপময় ঠাকুরিয়া এসে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি বন্ধ করতে বলেন। তার যুক্তি, রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের পারমিশন নেই। প্রতিবাদীরা তার কথায় কান দেননি এবং নিজেদের ভাষণ চালিয়ে যেতে থাকেন। তারপরই পুলিশের মহিলা এবং পুরুষ বাহিনী একে-একে প্রতিবাদকারীদের টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলতে শুরু করে। এদিকে বেশ কিছু শিল্পীরা সংগীতের মাধ্যমে এদিন প্রতিবাদ প্রদর্শন করছিলেন। তাদেরকেও টেনে গাড়িতে বসানো হয়। তারপর গাড়ির ভেতরেই তারা প্রতিবাদী গান শুরু করেন।

প্রায় তিন ঘণ্টা সদর থানায় আটকে রাখার পর প্রতিবাদীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, উচ্চস্তরের নির্দেশ পালন করতেই এদের আটক করা হয়েছিল।

Comments are closed.