Also read in

মাত্রাতিরিক্ত মাদক গ্রহণে মৃত্যু দেবরাজ রায়ের, পুলিশি তদন্তে প্রকাশ

নবম শ্রেণীর ছাত্র দেবরাজ রায়ের শোকাবহ, অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবরে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে গতকাল। আজ তার মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে যে খবর পাওয়া গেল, তা আরো শোকাবহ এবং অভিবাবকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পুলিশ সূত্রে নিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে ড্রাগসের ওভারভোজই এই মৃত্যুর কারণ। পুলিশ আজ সুনীল সিনহা (পরিবর্তিত নাম) নামের এক মাদকাসক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, দেবরাজ এবং তার সঙ্গীরা সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে ড্রাগস নিয়েছিল।

“গতকাল রাতেই আমরা সুনীলকে (পরিবর্তিত নাম) ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছি । ও স্বীকার করেছে যে, রোববার রাতে দেবরাজ এবং আরো কয়েকজনকে নিয়ে ওরা ড্রাগস নিয়েছিল। ড্রাগস নেওয়ার কিছু পরেই দেবরাজ অজ্ঞান হয়ে যায়, তখন ভয় পেয়ে বাকি সবাই ওকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সুনীলের (পরিবর্তিত নাম) এই স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে মাত্রাতিরিক্ত মাদক গ্রহণই দেবরাজ রায়ের মৃত্যুর কারণ” , জানান পুলিশ অধীক্ষক রাকেশ রৌশন।

এসপি রৌশন আরো জানান যে, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট খুব সম্ভবত আজ বিকেলে বা কাল সকালে এসে যাবে। তখন এই মাদকের ধরন এবং মাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।

রবিবার দুপুরে মোবাইল সারাই এবং গেম খেলার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল রাধামাধব রোডের তরুন দেবরাজ , তারপর আর বাড়ি ফেরেনি সে। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর পঁচা গলা মৃতদেহ পাওয়া যায় পঞ্চায়েত রোডের এক হোস্টেলের বাথরুমে।

রাধামাধব রোডের ব্যবসায়ী গোপাল রায়ের ছেলে দেবরাজ নবম শ্রেণীর ছাত্র। রবিবার সকাল থেকেই মোবাইল সারাইয়ের জন্য ৩০০ টাকা দেবার জন্য বাবার কাছে আবদার করছিল। দুপুরে বাবা রাজি হলে, গেম খেলা এবং কিছু খাবার জন্য আরও ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায় দেবরাজ। যাবার সময় বলে, তাঁর ফিরতে দেরী হবে। সন্ধ্যার পরও সে না ফেরায়, পরিবারের লোক ফোন করেন। সে ফোন তোলেনি, আর সারা রাত বাড়িও ফেরেনি। সকাল ৮টা নাগাদ তাঁর মোবাইলও বন্ধ হয়েযায়। পরিবারের লোক পুলিশে খবর দেন, পাশাপাশি শুরু হয় তাঁকে খোঁজার তোরজোড়। দিনরাত খুঁজেও কোনও সন্ধান মেলেনি। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চায়েত রোডের জনৈক ব্যক্তি তাঁদের ফোন করে জানান, তাদের ছেলেটির খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে এলাকায় পৌছে গোপাল রায় এবং পরিবারের অন্যরা বুঝতে পারেন, তাঁদের ছেলে আর নেই, কান্নায় ভেঙে পরেন তারা।

ডিএসপি এ জে বড়ুয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেট জনাথন বাইপিঙ এর নেতৃত্বে এক পুলিশ বাহিনী পচাগলা মৃতদেহটি উদ্ধার করে এদিন। পরিবারের পক্ষে সনাক্তকরণের পর একে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়।

পুলিশের তরফে জানানো হয়, পঞ্চায়েত রোডের সামসুল ইসলাম লস্করের বাড়িতে থাকা ছাত্রাবাসের বাথরুমে মঙ্গলবার মৃতদেহটি পাওয়া যায়। ছাত্রাবাসের পরিচারিকা ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকার মানুষকে জানান। এলাকাবাসিরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে ।

এদিকে, দেবরাজের মৃত্যুকে রহস্যজনক আখ্যায়িত করে সঠিক তদন্ত এবং বাড়ির মালিককে গ্রেফতারের দাবিতে ওই এলাকার জনগণ আজ বিকেলে হাসপাতাল রোডে সড়ক অবরোধ কার্যসূচি পালন করেন । ওদের অভিযোগ হলো ওই বাড়ির মালিক দীর্ঘদিন ধরে মাদক দব্য বিক্রিসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন।

Comments are closed.