'একলা চলো'তেই লাভ কংগ্রেসের, বললেন কমলাক্ষ
একদিকে এআইইউডিএফ’র সঙ্গে জোট ছিন্ন করার সিদ্ধান্তে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়!অন্যদিকে কংগ্রেস দল ছাড়ার তালিকা কেবল দীর্ঘই হচ্ছে। প্রথমে তাঁর প্রিয় বন্ধু রূপজ্যোতি কুর্মী,এরপর কিছুদিন আগে সুস্মিতা দেবের দলত্যাগ।
এই আবহে কংগ্রেসের আগামীদিনের রোডম্যাপ কী? শিলচর-সহ বরাক উপত্যকায় কী পরিকল্পনা রয়েছে দলের? কোর কমিটির বৈঠক সেরে বরাক বুলেটিনের সমস্ত প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিলেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
আচমকা এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণ কী?
দেখুন, গণতন্ত্রে মূল বিষয় হচ্ছে দায়িত্ব। শাসক-বিরোধী সবার কর্তব্য রয়েছে আমজনতার প্রতি। রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তাদের কাজ করবে। আর বিরোধী আসনে বসা ব্যক্তিদেরও নিজেদের ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় যে, গত কয়েক মাসে এআইইউডিএফ দলের মধ্যে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনের লক্ষণ দেখা যায়নি। তাদের বেশ কিছু আচরণ দায়িত্বশীল বিরোধী দলের হয়নি। ফলেই বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের।
একদল লোক বলছে, উজান অসমে ভোটের জন্যই এই লোকদেখানো সিদ্ধান্ত। তলেতলে ঠিক আপনাদের দুই দলের বোঝাপড়া থাকবে।
আড়ালেই যদি সমঝোতা করতে হত, তা-হলে সেটা বিধানসভা ভোটের সময়ই করা যেত। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে, তাতে মানুষকে কোনও একটা জায়গায় বোকা বানানো হবে। বরং জোট হলে সর্বসমক্ষে হওয়া উচিত। না থাকলেও সেটা সবার সামনেই হবে। লুকিয়েচুরিয়ে কোনও কিছু করা সঠিক নয়।
আজমলের দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য যে মাত্র পাঁচ মাস আগে জোট করার তা-হলে কী প্রয়োজনীয়তা ছিল?
রাজনীতি স্থিতিশীল বিষয় নয় যে সর্বদা একই থাকবে। এখানে চেঞ্জ আসতে বাধ্য। ভোটের আগের আর এখনের পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
লোক তো আপনাদের সুবিধাবাদী বলবে। ভোটের আগে ফায়দা দেখেছিলেন, তাই জোট হল। সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়ে আপনারা বুঝলেন যে কাজ হচ্ছে না। তাই ভেঙে দিলেন।
বিষয়টাকে এভাবে দেখা ঠিক নয়। ভোটের সময় প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটা পরে অনেক সময় বদলে যায়। বিহারে বিজেপি কী করেছিল মনে নেই? নীতিশ কুমারের বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রীই তো ভরা জনসভায় বলেছিলেন যে ওই লোকের ডিএনএ-ই খারাপ। অথচ পরে সরকার গড়ার সুযোগ আসা মাত্রই তাঁরা দিব্যি নীতিশের হাত ধরে নিলেন। আর আমাদেরটা দেখুন। এখানে কিন্তু সরকার গড়ার জন্য কোনও সুবিধাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং দায়িত্ব থাকা এক বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের জন্যই কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত।
ভোটের ফলই বলছে, বরাক উপত্যকায় বহু আসনেই আপনাদের সুবিধা হয়েছিল আজমলের দলের সঙ্গে জোট থাকার ফলে। আগামীতে এর প্রভাব পড়তে পারে কি?
বরাক উপত্যকায় পনেরোটির মধ্যে চৌদ্দটি আসনে কংগ্রেস একার জোরে লড়াই করে জিতেছিল। তখন তো এআইইউডিএফ, বিজেপি সবাই আমাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। ফলে অন্য দলের সঙ্গে জোট না থাকায় ক্ষতি হবে আমাদের, এ কথা আমি মানি না। বরং আমার ধারণা, মানুষের হয়ে সঠিক অর্থে কাজ করলে কোনও অঙ্কের প্রয়োজন পড়ে না ভোটের ময়দানে। তাই আগামীদিনে বরাকে যে কংগ্রেস ফের আগের মত ভাল ফল করবেই, তাতে আমার অন্তত কোনও সন্দেহ নেই।
এবার তো বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ের ফায়দা তুলেছেন আপনারা।
আমার আসনেই তো শক্ত ত্রিমুখী লড়াই হয়েছিল। তারপরও আমি ভাল ব্যবধানে জিতেছি। তাই তো বললাম, এই পাটিগণিতের তত্বে আমি বিশ্বাস রাখি না।
আপনি শক্তিশালী বিরোধী হওয়ার কথা বলছেন। অথচ কংগ্রেস ছাড়ার তো কার্যত হিড়িক পড়েছে।
কংগ্রেস দল এত বছরে বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী থেকেছে। অনেক বড় মাপের নেতারাই দল ছেড়ে গেছেন। দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়ে আবার ফিরেও এসেছেন। ফলে কয়েকজনের যাওয়ায় দল দুর্বল বা নিঃশেষ হয়ে গেল, এমনটা নয়। মনে রাখা জরুরি, আজকের তুলনায় অনেক কঠিন সময় এসেছে কংগ্রেসের । কিন্ত সেসব কাটিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে দল।
তবুও সুস্মিতা দেব তৃণমূলে যাওয়ায় ক্ষতিই হয়েছে কংগ্রেসের।
সুস্মিতা দেব দল ছাড়ায় একজন সহকর্মী হিসেবে আমার দুঃখ হয়েছে, এ কথা স্বীকার করতে বাধা নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দল পুরোপুরি গাড্ডায় পড়ে গেল। গত পনেরোদিনের ঘটনাক্রম দেখুন। ক’জন তাঁর সঙ্গে দল ছেড়েছেন? জনতার মধ্যে সামান্য প্রভাব থাকা কেউই সুস্মিতার দলে যাননি।
কিন্তু কাছাড় জেলা কংগ্রেসে আপনার ডাকা সভায় তো একপ্রকার ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গেল।
ওইদিন একটি ছেলে এসে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে কথাবার্তা বলছিল। রাজনীতিতে কারও সঙ্গে ঘোর বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে অভব্য আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। ফলে তাকে সতর্ক করে সরিয়ে দেওয়া হয়। বাকি কোনও সমস্যা হয়নি।
কাছাড়ে আপনাদের দলের সংগঠনে দড়ি টানাটানির খবর বেরোচ্ছে। জেলা সভাপতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কার্যত ক্ষমতাহীন করে দেওয়া হল।
বিভিন্ন জায়গার সংগঠনেই বদল আনার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কাছাড়েও একই বিষয়। কিন্তু তা করার জন্য সবার সঙ্গে বিশদে আলোচনা প্রয়োজন। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারও ক্ষমতা কাড়ার মত কোনওকিছু মোটেই করা হয়নি।
টানা তিনবারের বিধায়ক। বরাক উপত্যকায় এই মুহূর্তে আপনিই কংগ্রেসের প্রধান মুখ। আগামীতে শিলচর থেকে লোকসভা ভোট লড়ার পরিকল্পনা আছে কি?
এসব কাল্পনিক অঙ্ক কষায় আমার ঘোর অনীহা। রাজনীতিতে নেতা তৈরি করেন ভোটাররা। আমি সেসব নিয়ে কোনওদিন মাথা ঘামাইনি। যে কাজ দেওয়া হয়েছে, সেটা প্রাণ ভরে করতে চেয়েছি। এখন উত্তর করিমগঞ্জের ভোটার ও দলীয় সংগঠনের দায়িত্ব রয়েছে। তাতেই জান লড়িয়ে দিতে চাই।
Comments are closed.