বরাক উপত্যকাকে নিয়ে পৃথক রাজ্য হলে বরাকের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন যা আছে তার থেকে আর খারাপ হবে না: উপত্যকার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জয়দীপ বিশ্বাস
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল,২০১৬ নিয়ে অনেকদিন ধরেই চর্চা চলছিল, কিন্তু যৌথ সংসদীয় কমিটির আসাম তথা শিলচর আগমনের পর থেকে সমগ্র আসাম জুড়ে প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডা চলছে। বড়াইল পাহাড়ের এপার-ওপার অর্থাৎ বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে ব্যবধান যেন অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। যৌথ সংসদীয় কমিটি বিগত মে মাসে আসামে আসার পর থেকেই পুরো রাজ্যজুড়ে সব ফোরামে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক বিতর্ক চলছে । বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় সংগঠন, ছাত্র ইউনিয়ন সবাই তাদের মতামত সর্বোচ্চ ধ্বনিতে জানিয়ে চলেছে। মোটামুটি, বরাক উপত্যকা এই সংশোধনীর পক্ষে মতামত জানালেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করছে।
এই মতবিরোধ ও বিতর্ক বরাক উপত্যকাকে আসাম থেকে পৃথক করে নতুন একটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠনের সেই পুরনো প্রস্তাবকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।
সেই ৬১’র ভাষা আন্দোলন থেকে পৃথক বরাকের দাবি সবসময়ই সক্রিয় ছিল, তবে এই মুহূর্তে এই দাবির সমর্থনে যতটুকু সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে তা কস্মিনকালেও পাওয়া যায়নি।
বরাক পৃথক হলে কি হতে পারে সেটা নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে। কেউ বলছেন এটা একটা বিরাট বড় পদক্ষেপ হবে, কেউ ভয় পাচ্ছেন যে চাকরি হারিয়ে পথে বসবেন, আবার অনেকে বলছেন এটা অর্থনৈতিক ভাবে অস্থির পরিস্থিতির জন্ম দেবে।
বরাক বুলেটিনের তরফ থেকে আমরা কাছাড় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করে বরাক উপত্যকা পৃথক হলে এর ফল কি হতে পারে তা জানার চেষ্টা করেছি। অধ্যাপক বিশ্বাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্কলার এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকার। বিভিন্ন বিতর্ক সভায় উনাকে দেখা যায় , বিশিষ্ট হিন্দু পত্রিকায় উনার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
আমরা উনাকে বরাক উপত্যকা আসাম থেকে আলাদা হয়ে গেছে এরকম একটা কাল্পনিক অবস্থা চিন্তা করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছিলাম। এখানে সেই প্রশ্ন এবং উত্তরের সম্পাদিত অংশ আপনাদের জানানো হলো:
শুরুতেই আমরা সোজাসাপ্টা কথায় জানতে চাই বর্তমানে আসামের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
উত্তর-পূর্বের অন্যান্য রাজ্যের মত আসামও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান এর উপর নির্ভরশীল কারণ এই রাজ্যগুলি কোনও ধনী রাজ্য নয়।
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে আসামের মোট রাজস্বের পরিমাণ ২০১৬ সালে ছিল ৬৬,১৮০ কোটি টাকা, তার মধ্যে ৬৮% কেন্দ্রের তরফ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া। তার মানে হচ্ছে আমাদের রাজ্যের সংগ্রহ ৩২-৩৩ শতাংশ অর্থাৎ ২১,৭৮০ কোটি টাকা; মানে দুই তৃতীয়াংশ অর্থই আসছে দিল্লি থেকে।
আমরা যদি কাল্পনিকভাবেও মনে করি যে বরাক উপত্যকা আসাম থেকে আলাদা হয়ে গেল, তবে আপনি কি মনে করেন যে কেন্দ্রীয় সাহায্য নিয়ে এ টিকে থাকতে পারবে ?
সর্বপ্রথমে আমি এখানে স্পষ্ট করে দিতে চাই যে রাজনৈতিকভাবে এই মতামতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি শুধু আসাম থেকে বরাক আলাদা হয়ে গেলে এর অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সে সম্বন্ধে বলছি। এবারে প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক, আমি বলব যে অর্থনৈতিকভাবে বরাক উপত্যকাকে প্রকৃতপক্ষে কোনো অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে হবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তার থেকে আর খারাপও কিছু হবেনা ।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় তেল শোধনাগার, বিভিন্ন খনিজ পদার্থের শিল্প এবং চা শিল্প আছে,যেগুলো বরাক উপত্যকায় তেমন নেই, তাহলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে কি দিয়ে হবে?
পরিসংখ্যানগত ভাবে আমাদের জেলাওয়ারি রাজস্ব সংগ্রহের কোনও হিসাব এই মুহুর্তে আমাদের হাতে নেই যা দিয়ে এই বিষয়ে মন্তব্য করা যায়। তবে এটা সত্যি যে, বরাক উপত্যকা যদি আসাম থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে খনিজ পদার্থের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। তবে চা শিল্প সম্বন্ধে বলতে চাই, বরাক উপত্যকায়ও চা শিল্পের একটা বড় অংশ আছে। উত্তর আসামের মত আমাদের এখানেও চা শিল্প বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এই মুহূর্তে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মতই বরাক উপত্যকায়ও চা শিল্পে মন্দাভাব চলছে। একসময় সমগ্র বিশ্বজুড়ে আসামের চা অগ্রণী ভূমিকায় ছিল, সেই সোনালী দিনগুলো এখন আর নেই। তাই চা শিল্প থেকে যে রাজস্ব আসে তা সর্বোপরি আসামের সর্ব মোট রাজস্বের খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ।
তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সম্বন্ধে কি বলেন?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশন তাদের অগ্রণী ঘাঁটিগুলো আরো শক্তিশালী করছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে বরাক উপত্যকা তেলের ওপরে ভাসমান, কোন এক অজানা কারনে ওএনজিসি বরাক উপত্যকার তেল সম্পদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। এই তেল সম্পদের সঠিক উত্তোলন সম্ভব হলে পৃথক রাজ্য হিসেবে বরাক উপত্যকার প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিস্থিতিতে প্রভাব প্রভাব ফেলতে পারত। হ্যাঁ, আমাদের এখানে শোধনাগার নেই, তবে এটা একটা বিরাট বড় সমস্যা নয় যা পৃথক বরাকের প্রতিবন্ধক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ত্রিপুরার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে ত্রিপুরা এই বরাক উপত্যকা থেকেও অনেক অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে।
ত্রিপুরা প্রায় সবসময়ই কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা দলের বিরোধী দলের শাসনে আছে এবং বহাল তবিয়তে আছে। ওটা একটা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল রাজ্য নয়, নিজস্ব অনেক প্রতিকূলতা আছে, তবুও এগিয়ে চলেছে। তাই ত্রিপুরার মত একটা রাজ্য, যা কিনা ভারতবর্ষের মানচিত্রে অন্যতম সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত, যদি টিকে থাকতে পারে তবে বরাক উপত্যকা তো নিশ্চয়ই পারবে।
বরাক উপত্যকার ভৌগলিক অবস্থান ত্রিপুরা থেকে কিভাবে ভাল এবং এতে অর্থনৈতিক সুবিধা কি?
বরাক উপত্যকা ত্রিপুরা মনিপুর এবং মিজোরামের প্রবেশদ্বার। যদি বরাক উপত্যকা আলাদা হয়ে যায় আসাম থেকে, তাহলে আরও দুটো রাজ্য মেঘালয় ও আসামও প্রতিবেশি রাজ্য হয়ে যাবে। ফলে বরাক পাঁচটি রাজ্যের প্রবেশপথ হয়ে যাবে। এটা একটা বিরাট সুবিধার জায়গা যা কিনা কৌশলগতভাবে প্রয়োগ করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা সম্ভব হতে পারে।
শিক্ষা স্বাস্থ্য এবং সর্বোপরি জীবন যাত্রার মান সম্বন্ধে কি ভাবছেন, এটার কি কি অবনতি হতে পারে?
মানব উন্নয়ন সূচক (এইচডিআই) অনুযায়ী কাছাড় ২৪ নম্বরে, হাইলাকান্দি ২৭ নম্বরে এবং করিমগঞ্জ ২৬ নম্বর স্থানে অবস্থান করছে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান খুবই দুঃখজনক; কাছাড় জেলা আছে ২৭ নম্বরে,হাইলাকান্দি ২৪ এবং করিমগঞ্জ ২৫ নম্বরে। শিক্ষাক্ষেত্রে কাছাড়ের অবস্থান হলো ১৬ নম্বরে, করিমগঞ্জ ১৯ এবং হাইলাকান্দি ২৪ নম্বরে। তাই এই ব্যাপারে বলা যায় আমরা আসামে থেকেও খুব একটা উন্নতি করিনি, বরঞ্চ একেবারে নিচের দিকেই আছি; হাইলাকান্দিতো নিম্নতম স্থানে রয়েছে। আমি এই পরিসংখ্যান গুলো তুলে ধরলাম এটা বোঝানোর জন্য যে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে খারাপ হওয়ার কিছু নেই।
বরাক উপত্যকা আসাম থেকে আলাদা হলে কি ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে বলে আপনার মনে হয়?কোন একটা নতুন জন্ম নেওয়া রাজ্য প্রথম কয়েক বৎসর বেশ কিছুটা ঝামেলার অবস্থানে থাকে। আর এটাও মনে রাখতে হবে যে আসাম থেকে আলাদা হওয়ার পরে আসামের সাথে প্রথম দিকে খুব একটা ভালো সম্পর্ক থাকবে না; যদিও আমরা ভৌগোলিকভাবে, রাস্তাঘাট বা রেল যোগাযোগ নিয়ে ওদের উপর খুবই নির্ভরশীল থাকবো। কারণ আমাদেরকে ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যে যেতে হলে আসামের ভেতর দিয়েই যেতে হবে। কিন্তু কালে কালে এগুলোর একটা সমাধান হয়ে যাবে, পারস্পরিক বোঝাপড়ার সৃষ্টি হবে। তবে এ সবকিছুই নির্ভর করবে রাজনৈতিক ভাতৃত্ববোধ এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের উপর। আমি বিশ্বাস করি যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাও এখন বরাককে আলাদা করতে চাইছে, কারণ এই দুই উপত্যকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পূর্ণ পৃথক।
বর্তমানে যে রাজ্য সরকারের কর্মচারিরা আছেন নতুন একটা রাজ্য সৃষ্টি হলে তাদের কি হবে; নতুন রাজ্য সরকার কি তাদের মাইনে দিতে পারবে বা তাদের কি আরও ভালো হবে?
সরকারি কর্মচারিদের বেতন এবং পেনশন একটা নতুন রাজ্যের পক্ষে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সবগুলো ছোট রাজ্যই এই সমস্যার সম্মুখীন। আবার আমরা ত্রিপুরার উদাহরণ নিতে পারি। প্রথমে আসামের অবস্থা দেখি, এখানে যেমন আসাম সরকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি)’র সর্বশেষ বেতন কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন সেখানে অন্যান্য রাজ্যগুলো তা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ত্রিপুরাতে দেখা যাবে ওরা এখনো চতুর্থ বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন পাচ্ছে। আমি এই সমস্যাটিকেই প্রথম এবং সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে করি। কারণ আমি বিশ্বাস করি নতুন জন্ম নেওয়া রাজ্যকে উন্নত করতে হলে সেই রাজ্য সরকারকে তার নিজস্ব কর্মচারিদের সহযোগিতার জন্য এবং পূর্ণ উদ্যমে কাজ করার জন্য প্রথমেই তাদের বেতন ঠিকমতো দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক এক্ষেত্রে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
এটা অত্যন্ত জরুরি। নূতন একটা রাজ্য অন্ততপক্ষে প্রথম পাঁচ বৎসর পুরোপুরি কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল থাকে রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে। রাজ্য এবং রাজ্যবাসীর বিকাশের জন্য অনেক ধরনের রাজনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।
অভ্যন্তরীণ রাজস্ব কোথা থেকে আসতে পারে?
এখন যেভাবে বিভিন্ন ধরনের কর যেমন আয়কর, বিক্রয় কর, আবগারি শুল্ক, যানবাহনের উপর কর, সীমা শুল্ক, সেবা কর রয়েছে, এগুলোতো নতুন রাজ্যের ক্ষেত্রেও যথারীতি আসতে থাকবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে যদি আসামের কর এবং কর বিহীন রাজস্ব নিয়ে আমরা দেখি তবে দেখতে পাব যে ‘জিএসটি’র অবদান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি যার পরিমাণ ৬০%। কারণ যে সকল রাজ্যকে নিজস্ব উৎপাদিত পন্যের তুলনায় আমদানী বেশি করতে হয় তারাই জিএসটি বাবদ বেশি আয় করে থাকে। তাই বরাক উপত্যকা আলাদা হলে এখনকার আসামের মতোই হবে এবং স্বাভাবিক ভাবে রাজস্ব আমদানিও বেশি হবে। বন বিভাগের সূত্রে রাজস্বও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে এবং আয়ের একটা বড় সূত্র হয়ে যাবে।বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে ও রাজস্বের নতুন নতুন সূত্র বের করতে হবে ।এত সবের পর ও আমি বলতে চাই যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবগুলো রাজ্য কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল থাকবে। মিজোরামের দিকে তাকিয়ে দেখুন, মিজোরামে শুধু আদা’র উৎপাদন হয় আর কোনো কিছুই নেই। মেঘালয়, ত্রিপুরা এগুলোও ঘাটতি রাজস্বের রাজ্য।
আন্তর্জাতিক সীমানা নিয়ে এই নতুন রাজ্যের কি কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকবে?
আন্তর্জাতিক সীমা সবসময়ই সম্পদ এবং দায়বদ্ধতা দুই-ই হয়ে থাকে। আসাম চুক্তির পরেও এটা ঘটনা যে ভারত বাংলাদেশ সীমানায় এখনো প্রচুর ফাঁক-ফোকর রয়ে গেছে। বরাক উপত্যকা আসাম থেকে আলাদা হওয়ার সাথে সাথে ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমানা থেকেও কিছুটা অনুপ্রবেশ ঘটবে। যদিও আন্তর্জাতিক সীমানাটা কেন্দ্রের দায়িত্ব তবুও নতুন রাজ্য সরকারকেও এটা দেখতে হবে যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে। আবার আন্তর্জাতিক সীমানা একটা সম্পদও হতে পারে। ধরুন, সুতারকান্দি বর্ডারে একটা ট্রেড সেন্টার বা বাণিজ্যকেন্দ্র আছে যা এখন একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যদিও এখানে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, এখন ওইখানে যে সকল বাণিজ্য চলছে সেটা শুধু বেআইনিভাবে হচ্ছে। যদি নতুন রাজ্য এই জিনিসটাকে আইনি ধারায় নিয়ে এসে আইনিভাবে বাণিজ্য শুরু করতে পারে তাহলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বাংলাদেশ একটা ভোক্তা দেশ, আমি ২০১১ সালে ঐখানে গিয়েছিলাম,আমার মনে পড়ে, আমি ১৫ টাকা দিয়ে একটা ৫ টাকার চকলেট কিনে ছিলাম যা ভারত থেকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছিল।
আপনার রায়ে বরাক উপত্যকা আলাদা হয়ে একটা নতুন রাজ্য হিসেবে টিকতে পারবে কি?
আপনি যদি আসামের ইতিহাসের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যে এটা কোনদিনই রাজস্ব উদ্বৃত্ত রাজ্য ছিল না। প্রকৃতপক্ষে ১৮৭৪ সালে মুখ্য কমিশনারের অধীনে যখন এই উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রাজ্য গঠন করা হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা তখন জেলা ছিল মাত্র পাঁচটি। কিন্তু কিছুদিন পরেই এটা বুঝা গেল যে এই নতুন রাজ্য একটি ঘাটতি রাজ্য। এই ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে ব্রিটিশ সরকার সিলেটকে এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত করে, কারণ সিলেট ছিল রাজস্ব উদ্বৃত্ত জেলা। তাই দেখা যাচ্ছে যে রাজস্ব ঘাটতি প্রথম থেকেই আছে এবং স্বাধীনতার পরেও এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তাই আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় এই নতুন রাজ্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য থেকে খুব একটা আলাদা কিছু হবে না। ভারতীয় যুক্তরাজ্যের একটা অঙ্গ রাজ্য হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে কোনদিনই স্বনির্ভর হতে পারবে না।
এতক্ষন আপনি আপনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক চিন্তাধারা দূরে সরিয়ে রেখে শুধু আর্থিক অবস্থা বিচার-বিবেচনায় মতামত ব্যক্ত করেছেন, এখন আলাদা রাজ্য হওয়ার ব্যাপারে আমরা আপনার ব্যক্তিগত মতামতটা জানতে চাই
ঠিক আছে, এটা যদি আলাদা হয় তবে বর্তমানে যা আছে তার থেকে খারাপ একটা কিছু হবে না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এই বরাক উপত্যকাকে আলাদা করার প্রস্তাবের সমর্থক নই। আমি বিশ্বাস করি, একটা আলাদা রাজ্য গঠন করলেই সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয় না, বরঞ্চ এটা আরো নূতন সমস্যার জন্ম দিতে পারে। আমি আলাদা রাজ্যর বিরোধিতা করি কারণ ‘এখানে দুটো সংস্কৃতি আছে যেটা পাশাপাশি টিকে থাকতে পারে না, তাই একটা আলাদা রাজ্যের প্রয়োজন’ এরকম একটা মতবাদ খুবই বাজে। এই মতবাদের ফলে আমাদের উপমহাদেশ বিশেষ করে আসামকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। যতই উস্কানি চলুক বড়াইলের এপার ওপার নিয়ে, আলাদা রাজ্যের সমর্থক নই আমি।বরাক উপত্যকা আসামেরই একটা অংশ হিসেবে থাকার পক্ষপাতী আমি।
Comments are closed.