Also read in

'অসমিয়া আরোপ করা হলে ১৯৬১'র পুনরাবৃত্তি হবে', শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে অসমিয়া পোস্টার মুছে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক বার্তা

আজ বরাক ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফ্রন্ট (বিডিওয়াইএফ) এবং অল বাঙালি স্টুডেন্টস ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এবিএসওয়াইও) যৌথভাবে অসমিয়া ভাষায় লেখা একটি সরকারি পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে শিলচর রেল স্টেশন প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তাদের বিতর্কের বিষয় হল যে এই সরকারি পোস্টারটি ১৯৬১ সালের ভাষা চুক্তি লঙ্ঘন করে, কারণ ঐ চুক্তি অনুযায়ী কাছাড় তথা বরাক উপত্যকায় সরকারি ভাষা হলো বাংলা।

উভয় সংগঠনের সদস্যরা আজ একত্রিত হয়ে পোস্টারটি কালো কালি দিয়ে মুছে ফেলেন এবং ভাষাগত শভিনিজম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী স্লোগান তুলেন। তারা বরাকের জনগণকে অসমিয়া পোস্টার খুঁজে বের করে তা মুছে ফেলার জন্যও আবেদন রাখেন।

এই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বিডিওয়াইএফ সদস্য দেবায়ন দেব, দেবরাজ দাশগুপ্ত, ঋষিকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য এবং ABSYO প্রতিনিধি অজিত দাস, সহ সভাপতি রাজু দেব, রাজীব দাস, মিঠু দাস, সমর দাস, টিপুল দাস, হারাধন দত্ত। তারা প্রতিবাদ অনুষ্ঠান সম্পর্কে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,

‘অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুবফ্রন্টের মূখ্য আহ্বায়ক কল্পার্ণব গুপ্ত বলেন, একাদশ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৬১ যে ত্রিভাষা সূত্র সরকারি ভাবে গৃহীত হয়, তাতে স্পষ্টতই সরকারি কাজকর্ম ও প্রচার ইত্যদিতে বরাকে বাংলাভাষা ব্যবহৃত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এবং এই ব্যাপারটি বর্তমান সরকারের অজানা থাকার মোটেই কথা নয়। কিন্তু তারপরও সরকারি তরফে বারবার এখানে অসমিয়া ভাষায় পোস্টার ইত্যাদি লাগানো মোটেই ভুলবশতঃ নয়, এর পেছনে কুউদ্দেশ্য রয়েছে। কল্পার্নব বলেন যে দিশপুরের কর্তাব্যক্তিরা এইভাবে পেছন দিক দিয়ে বরাককে গোয়ালপাড়া বানাতে চাইছেন। কিছুদিন আগে বিজেপি বিধায়ক পরমানন্দ রাজবংশী বরাকে এসে প্রাথমিক স্তরে যে অসমিয়া বাধ্যতামুলক করার কথা বলেছেন সেসবও একই পরিকল্পনার অঙ্গ। কল্পার্ণব বলেন যে সরকার নির্বিশেষে দিশপুরের কর্তাদের তরফে এইভাবে জোর করে অসমিয়াকরণের চেষ্টা চলছেই। তিনি বলেন, বরাকের জনগন তাই বাধ্য হয়ে ভাষার প্রশ্নে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছেন। তিনি আরো বলেন যে ভেতরে ভেতরে এইসব অপচেষ্টা, আর প্রকাশ্যে দুর্গাপূজায় এসে প্যান্ডেলে সফর করলে‌ কখনই বরাকের বাঙালিদের হৃদয় জয় করা যাবেনা।

কল্পার্নব বলেন যে এই উপত্যকায় অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। স্থাপিত হবার প্রায় পঞ্চাশ বছর পরও শিলচর মেডিক্যাল কলেজে আজ অব্দি স্নায়ুরোগ বা হৃদরোগের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই ।কত লোকজনকে এজন্য বিনা চিকিৎসায় প্রাণ দিতে হয়েছে ,কত রোগী শিলং বা গৌহাটিতে চিকিৎসার জন্য যেতে গিয়ে রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। মহাসড়কের কাজ ঝুলে আছে। মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্কের জন্য জমির বন্দোবস্ত হয়নি আজ অব্দি। ব্রহ্মপুত্র উপত্যাকায় ইদানীং কালে নতুন অনেক গুলো মেডিক্যাল কলেজের কাজ শুরু হয়ে গেছে, অথচ করিমগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের কাজের কোন অগ্রগতি নেই । ২০২১ এ দাড়িয়ে এইসব জাতিবিদ্বেষের মত সংকীর্ণ চিন্তা বাদ দিয়ে সরকারের এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তাতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থোদ্ধারও হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে বরাকে এইভাবে পেছন থেকে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দিতে গেলে তার ফল মোটেই ভালো হবেনা। এইসব‌ কিছুতেই মানা হবেনা এবং এসবের প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে বিডিএফ যুবফ্রন্ট।

এবসো কাছাড় জেলা কমিটির সভাপতি রাজু দেব বলেন ,যে রেলস্টেশন চত্তর একাদশ শহিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সেখানে ভাষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এইসব অবিবেচক কাজ ধিক্কারযোগ্য। তিনি বলেন, এইসব অবিলম্বে বন্ধ না হলে আবার ৬১ এর আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি হবে।

 

এদিনের সমাবেশে বিডিএফ যুবফ্রন্টের পক্ষ থেকে দেবায়ন দেব, দেবরাজ দাসগুপ্ত,হৃষীকেশ দে, জয়দীপ ভট্টাচার্য ও এবসোর পক্ষ থেকে এবসো
আসাম রাজ্য কমিটির সভাপতি অজিত দাস সহ রাজু দেব, রাজীব দাস, মিঠু দাস, সমর দাস,টিপুল দাস,হারাধন দত্ত
প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।’

Comments are closed.