দুর্গাপুজোর মণ্ডপ মইনুল হকের নামে হয়নি, সরকারি টাকায় বানানো মুক্তমঞ্চ প্রাক্তন নেতার নামে উৎসর্গিত হয়েছে, জানালেন অধ্যক্ষ আমিনুল
বরাক উপত্যকার উন্নতিতে একজন ব্যক্তির বা তার পরিবারের বিশেষ কোনো অবদান না থাকা সত্ত্বেও সিভিল হাসপাতাল এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তার নাম জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সোনাই বিধানসভা সমষ্টির প্রথম বিধায়ক মইনুল হক চৌধুরীর নামে একটি ছোটখাটো মুক্তমঞ্চের নামকরণ করায় অনেকে ক্ষোভ প্রদর্শন করছেন, এমনটাই বললেন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর।
সোনাই বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি খালি জায়গা যেখানে স্থানীয় সংগঠন প্রতি বছর দুর্গা পূজা করে, সেখানে সরকারি প্রকল্পে একটি ছোটখাটো মুক্তমঞ্চ বানানো হয়েছে এবং মইনুল হক চৌধুরীর নামে এর নামকরণ হয়েছে। এটা প্রায় এক বছর আগের ঘটনা। সম্প্রতি কিছু যুবক ফেসবুকে ঘটনাটি আবার উসকে দিয়েছে। তারা বলছে, বিধায়ক ইচ্ছাকৃতভাবে দূর্গাপূজা মন্ডপের নাম একজন মুসলমান ব্যক্তির নামে রেখেছেন।
স্থানীয় বিধায়ক আমিনুল হক লস্করের কাছে এ ব্যাপারে জবাব চাইলে তিনি বলেন, সরকারি প্রকল্পে যেগুলো মঞ্চ ইত্যাদি বানানো হয়, সেগুলোর নামকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় কোনও মহান ব্যক্তির নাম প্রথমে আসে। উদীয়মান দুর্গাপূজা ক্লাব ৫২ বছর ধরে একটানা এই এলাকায় প্রতিবছর পূজা আয়োজন করে আসছে। বাজার সংলগ্ন এলাকা, তাই পুজোর কয়েকটা দিন ছাড়া সারা বছর সেখানে বাজারের অনেক আবর্জনা প্রতিদিন ফেলে দেওয়া হতো। এতে এলাকা অত্যন্ত নোংরা হয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষের আগ্রহে আমরা মঞ্চ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিই। তবে এর আগে পুরো এলাকাকে সিসি ব্লক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জায়গাটি সরকারের তবে যেহেতু এত বছর ধরে এখানে পুজো আয়োজিত হচ্ছে তাই কিছুটা জায়গা খালি রেখেই মঞ্চ বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে এলাকার হিন্দু এবং মুসলমান জনগোষ্ঠীর মানুষের সম্মতিও নেওয়া হয়েছে। মইনুল হক চৌধুরী সোনাইয়ের প্রথম বিধায়ক। পরবর্তীতে তিনি ধুবরি থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্র সরকারের মন্ত্রীত্বও পান। তখন বরাক উপত্যকা অবিভক্ত কাছাড় ছিল। তিনি কাগজ কল, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এনআইটি সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প আমাদের এলাকায় পাঠিয়েছেন। তার অবদান বরাক উপত্যকার প্রত্যেক মানুষের উপর রয়েছে। তিনি যেসব কাজ করেছেন সেগুলো কখনোই তার নামে নামকরণ হয়নি। এখন যদি আমরা একটা মঞ্চ তার নামে বানালে সাধারণ মানুষ মন্তব্য করেন, তবে তাদের বলবো, আপনারা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করুন, সিভিল হাসপাতাল বা জেলা ক্রীড়া সংস্থা নির্মাণে তিনি প্রকৃত অর্থে কি অবদান রেখেছিলেন? মইনুল হক চৌধুরী কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন, তার দল ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনদিন তাকে সম্মান দেয়নি। আমি এই মঞ্চ তার নামে নামকরণ করে কংগ্রেস দলের গালে একটা থাপ্পর দিয়েছি। পারলে তারা এই কথার উত্তর দিয়ে দেখান।
তিনি আরো বলেন, অতীতে এলাকায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে রাজনৈতিক নেতারা ফায়দা লুটেছেন। তবে এখন আর মানুষকে ধর্মের নামে বোকা বানানো যায় না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী সোনাই থেকে ৩৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন, আমি ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ৪৬ হাজার ভোট পেয়েছি এবং গতবছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী রাজদীপ রায় ৫৬ হাজার ভোট পেয়েছেন। এতে প্রমাণিত এখন আর হিন্দু-মুসলিম দোহাই দিয়ে মানুষের মনে বিভাজন সৃষ্টি করা যায় না। একদিকে যেমন মুক্তমঞ্চ মইনুল হক চৌধুরীর নামে করা হয়েছে, অন্যদিকে এলাকায় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীজির একটি মূর্তি স্থাপনা করা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বে এটি হচ্ছে প্রথম বাজপেয়ীজির মূর্তি এবং সেটা সোনাই বিধানসভা সমষ্টিতে হচ্ছে।
আমাদের সরকার আসার পর, গত কয়েক বছরে বরাক উপত্যকার সবথেকে বেশি সরকারি গ্রান্ট সোনাই বিধানসভা সমষ্টিতে এসেছে। বিজেপির নেতৃত্বে থাকা সরকার এটা দেখেনি যে সোনাই সমষ্টিতে মুসলমান জনবসতি হিন্দু থেকে বেশি।
আমরা খবর পেয়েছি কেউ একজন ফেসবুকে মইনুল হক মঞ্চের নামকরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা বলবো, স্থানীয়রা আগেও এই মঞ্চের সমর্থন করেছেন এবং এখনো তাদের মনে কোনও দ্বিধা নেই। বাইরে থেকে একজন লোক এই ধরনের মন্তব্য করলে আমরা তার উত্তর দিতে বাধ্য নই। তবু তিনি যখন প্রশ্ন করেছেন আমি বলব, এলাকায় এসে নিজে দেখে যান আমরা কতটুকু শান্তিতে আছি।
স্থানীয়দের সঙ্গে এব্যাপারে আলাপচারিতা করলে তারা বলেন, ৫২ বছর ধরে এলাকায় উদীয়মান সংঘের নেতৃত্বে দুর্গাপুজো হচ্ছে। এলাকাটি পরিচ্ছন্ন ছিল না, সরকারের প্রকল্পে কাজটি হয়েছে। নামকরণ মঞ্চের হয়েছে, দূর্গাপূজা বা কমিটির হয়নি, ফলে এটা নিয়ে এলাকায় অশান্তির কোনও কারণ নেই।
Comments are closed.