Also read in

শিলচরে আবার ছিনতাইবাজ চক্র! রাধামাধব কলেজের কর্মীর ২ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নিল বাইক-আরোহী দুষ্কৃতি

 

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে কাছাড় জেলায় লকডাউন দুপুর দুটো পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার লকডাউন শুরু হওয়ার ঠিক আগে শিলচরে ঘটে গেছে এক ছিনতাইয়ের ঘটনা। শহরের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাধামাধব কলেজের এক কর্মী কলেজেরই কিছু টাকা তুলতে রাঙ্গিরখাড়ি সংলগ্ন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিউ শিলচর ব্রাঞ্চে গেছিলেন। কলেজের এক লক্ষ টাকা এবং এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরেক ব্যক্তির এক লক্ষ টাকার চেক নিয়ে তিনি ব্যাঙ্কে জমা করেন। ক্যাশ টাকা তুলে সেটা খুব সাবধানে বুকের পাশে ব্যাগের মধ্যে রেখে সাইকেলে করে কলেজে ফিরছিলেন। তখন হঠাৎ মুখ ঢাকা দুই ব্যক্তি বাইকে চড়ে তাকে ধাঁওয়া করে।এরপর তার ওপর হামলা করে এবং টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাঙ্গিরখাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ছিনতাইবাজের কোন হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশীষ রায় জানিয়েছেন, হরিপ্রসাদ কুর্মি নামের এক কর্মচারি প্রায়ই কলেজের এসব কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করেন। শুক্রবার তাকে কলেজের পক্ষ থেকে কিছু প্রয়োজনে এক লক্ষ টাকার চেক ধরিয়ে বলা হয়েছিল ব্যাঙ্ক থেকে টাকাটি তুলে আনতে। সঙ্গে আরও এক লক্ষ টাকার চেক দিয়েছিলেন অন্য এক শিক্ষক। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার পর তিনি স্বাভাবিক পদ্ধতিতে নিজের সাইকেলে করে আবার কলেজে ফিরছিলেন, তখন তার ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতিরা।

দেবাশীষ রায় বলেন, “হরিপ্রসাদ কুর্মি অনেক পুরনো কর্মী এবং কলেজের বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি। শুক্রবার হামলার পর তিনি যখন ফিরে আসেন তার গায়ে একেবারে কাদামাখা ছিল এবং কিছুটা আহত ছিলেন। তিনি খুব সাবধানে একটা ব্যাগের মধ্যে টাকা ঢুকিয়ে বুকের পাশে সেটা বেঁধে সাইকেলে করে আসছিলেন।দু’জন ছিনতাইবাজ ছিল এবং তারা অনেক টানাহেঁচড়ার পর টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এলাকায় জনগণ কম ছিলেন, তবু যারা ছিলেন কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। এভাবে দিন-দুপুরে এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাই হওয়ায় আমরা স্তম্ভিত এবং কিছুটা আতঙ্কিত। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সঙ্গে সঙ্গে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেছি এবং পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছি দুষ্কৃতিদের যাতে ধরা হয়। আমরা চাই না ভবিষ্যতে আমাদের কর্মী বা অন্য যে কোনও ব্যক্তির উপর দুষ্কৃতি হামলা চালানোর সুযোগ পাক। পুলিশের আধিকারিকরা জানিয়েছেন তারা মামলার তদন্ত করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কাছাড় জেলার নবনিযুক্ত ডিএসপি কল্যান কুমার দাস এই বিষয়ে বলেন, “আমরা ঘটনার খবর পেয়েছি এবং কলেজের পক্ষ থেকে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। আমাদের রাইডিং দল সহ রাঙ্গিরখাড়ি থানার আধিকারিকরা ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে পড়েছেন। এলাকায় যেসব সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলোর ফুটেজ দেখার চেষ্টা চলছে। এছাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। সব দিক পর্যালোচনা করে দুষ্কৃতিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা হবে।”

উল্লেখ্য, গত বছরের শেষদিকে এবং এই বছরের প্রথম কয়েক মাস শিলচর শহরে ঘনঘন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। শেষমেষ পুলিশ এক দুষ্ট চক্রকে আটক করতে সমর্থ হয়। তারা ভিন রাজ্য থেকে শিলচরে এসে ঘর ভাড়া করে থাকছিল। এদের সবাইকে ধরতে সমর্থ না হলেও কিছু লোক আটক হয় এবং ছিনতাইয়ের ঘটনা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন এবং করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় এই বিষয়গুলো কিছুটা হালকা হয়ে যায়।

তবে শুক্রবার যে ঘটনা ঘটেছে তার ধরন একেবারে আগের ঘটনাগুলোর মতই। কেউ বড় অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে দুষ্কৃতিরা খবর পেয়ে যাচ্ছে। মুখে কাপড় বেঁধে কালো পালসার বাইকে করে তারা ধেয়ে আসছে এবং যে লোকটি টাকা নিয়ে বেরিয়েছেন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অতীতে দুষ্কৃতিদের গ্রেফতার করলেও এই ধরনের ছিনতাইয়ের পেছনে আর কোনও ব্যক্তির সহযোগিতা রয়েছে কিনা সেটা বের করতে পারেনি পুলিশ। সাধারণ মানুষ বারবার বলছেন, ব্যাঙ্ক থেকে কেউ টাকা তুললে পরে দুষ্কৃতিরা কিভাবে সেই ব্যক্তির সম্পূর্ণ তথ্য পেয়ে যায় এবং তার উপর হামলা করার সুযোগ পায়? এটা রহস্যজনক। হয়তো ব্যাঙ্কের ভেতরে এমন কোনও লোকজন রয়েছে যারা সম্পূর্ণ তথ্য দুষ্কৃতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এমনটা না হলে এত পরিষ্কারভাবে কোন ব্যাগে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই তথ্য পর্যন্ত দুষ্কৃতিরা বাইরে থেকেই জেনে যাবে, এটা একেবারেই স্বাভাবিক নয়।

Comments are closed.