'চাকরি পাওয়ার মেধা নেই বলে বরাকের শিক্ষিত যুব-সমাজকে অপমান করেছেন রাজদীপ, ক্ষমা চাওয়া উচিত', বললেন সুস্মিতা
সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংসদ রাজদীপ রায় এবং বিজেপির কাছাড় জেলার প্রভারি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বলেছিলেন কাগজকল ধ্বংসের পেছনে অতীতের সরকারে থাকা রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তাদের সহায়তায় ধীরে ধীরে কাগজকল ধ্বংস হয়েছে এবং এর থেকে অনেক মুনাফা নিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। যেহেতু সেই সময়ে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার ছিল, তাই সভাপতির এই অভিযোগের কেন্দ্রে তখনকার কংগ্রেস নেতারাই রয়েছেন। এই প্রসঙ্গ এনে সুস্মিতা দেব সরাসরি বিজেপির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তারা পারলে প্রমাণ সহ কাগজকল ধ্বংসকারীদের গ্রেফতার করুক। পাশাপাশি তিনি বলেন, এছাড়া বরাকের যুবসমাজের সরকারি চাকরি পাওয়ার মতো মেধা নেই বলে শিক্ষিত যুবক যুবতীদের অপমান করেছেন সাংসদ রাজদীপ রায়, তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরেন সুস্মিতা দেব সহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা। তারা জানান, এবছর নির্বাচনে দলের ম্যানিফেস্টো বানানো হবে জনগণের অভিমতের ওপর ভিত্তি করে। একদিকে যেমন গুজরাট মডেলকে সামনে রেখে বিজেপি নির্বাচনে প্রচার চালায়, ঠিক তেমনভাবেই অসমে এবার কংগ্রেসের পাল্টা হাতিয়ার হবে ছত্রিশগড় মডেল। এমনকি দলের ম্যানিফেস্টোর খসড়া পাঠানো হবে ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি বিচার করে বলবেন যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে সেটা কতটুকু পালন করা সম্ভব।
সুস্মিতা বলেন, “আমরা এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে চাইনা যেটা পালন করা সম্ভব নয়। বিজেপি বারবার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, কেননা তাদের উদ্দেশ্য থাকে জনগণকে চমক দেখিয়ে বোকা বানানো। আমরা বিজেপির মিথ্যাচার বারবার জনসমক্ষে তুলে ধরেছি। আমাদের ম্যানিফেস্টো ছত্রিশগড় মডেলকে সামনে রেখে বানানো হবে, অবশ্যই সেটা হবে জনগণের স্বার্থে, মানুষ সেটা বুঝবেন এবং আমাদের সমর্থন করবেন, এমনটাই আশা করছি।”
৪ ফেব্রুয়ারি ধলাইয়ে কংগ্রেস দলের ‘জনহুংকার র্যালি’ আয়োজিত হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে বিজেপি রাজ্য সরকারে থেকে জনবিরোধী কাজ করেছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখতে পারেনি, তার খতিয়ান তুলে ধরা হবে কংগ্রেসের সভায়। এই বিষয়ে সুস্মিতার বয়ান, “কয়েকমাসের মধ্যেই নির্বাচন, এতে বিজেপি আবার নতুন করে প্রতিশ্রুতি ডালা সাজিয়ে জনসমক্ষে তুলে ধরবে। নির্বাচনের গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক বেশি, কারণ জনগণ এর মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বিজেপি জনগণকে আবার বোকা বানানোর চেষ্টা করবে এবং বিরোধী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। এই উদ্দেশ্যে ‘জনহুংকার র্যালি’ আয়োজন করা হচ্ছে। যেহেতু বরাক উপত্যকার একমাত্র মন্ত্রীর সমষ্টি হচ্ছে ধলাই, ফলে প্রথম অনুষ্ঠানটি সেখানে রাখা হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য স্তরের বিভিন্ন নেতা সহ স্থানীয় নেতারা অংশ নেবেন।”
সম্প্রতি যেসব সরকারি চাকরি হয়েছে, সেখানে বরাক উপত্যকার ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত কম সুযোগ পেয়েছে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে একেবারেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই প্রসঙ্গ টেনে সুস্মিতা বলেন, “সম্প্রতি ডিআরডিএ বিভাগে ৭৮টি পদে চাকরি হয়েছে, এরমধ্যে ৪৫টি পদ বরাক উপত্যকায় থাকা বিভিন্ন কার্যালয়ে ছিল। অথচ উপত্যকার একজন যুবক-যুবতীও এতে চাকরি পায়নি। এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত। শুনেছি সাংসদ রাজদীপ রায় বলেছেন, এসব চাকরি পাওয়ার মতো যোগ্যতা নাকি বরাকের ছেলেমেয়েদের ছিলনা। অতীতে বরাকের মাটি নিয়ে মন্তব্য করায় বিজেপি তরুণ গগৈকে ব্যঙ্গ করেছে, এবার কি তাহলে রাজদীপ রায় একই সুর ধরে বললেন যে বরাকের ছেলে মেয়েদের মাথায় বুদ্ধি নেই? এটা উপত্যকার প্রত্যেক যুবক-যুবতীকে যারা পড়াশোনা করছে তাদের অপমান করা হয়েছে, আমার মনে হয় সাংসদ রাজদীপ রায় এজন্য বরাক উপত্যকার শিক্ষিত যুবক যুবতীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিং, দলের জেলা সভাপতি প্রদীপ দে, জেলা ও রাজ্য কমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
অজিত সিং বলেন, “অতীতে আলুপেঁয়াজ বা পেট্রোলের দাম যখনই অল্প বৃদ্ধি পেয়েছে, বিজেপির নেতারা গলায় আলু পিঁয়াজের মালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। এরমধ্যে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতারাও ছিলেন। অথচ এখন প্রায় প্রতিদিন দাম বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম আগে থেকে প্রায় তিনগুণ হয়েছে এবং তারা দলে থেকেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না। দলের নেতৃত্বকে তোষামোদ করতে গিয়ে তারা মানুষের প্রতি অন্যায় করছেন, এর ফল তাদের পেতে হবে।”
Comments are closed.