রামকৃষ্ণ মিশনে এবার অঞ্জলি লাইভে; বাড়িতে বসেই ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান করবেন
দুর্গাপুজোর ব্যাপারে প্রশাসনের নির্দেশাবলী জারি হওয়ার অনেক আগেই নিজেদের মতো করে অত্যন্ত সুন্দর নিয়ম গড়ে নিয়েছিলেন শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা। রামকৃষ্ণ মিশনের নিয়মাবলী গঠনের ক্ষেত্রে বেলুড় মঠের নির্দেশই শেষ কথা। তারা সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পুজোর অঞ্জলি প্রদান প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে টেকনোলজি ব্যবহার করে জনসমাগম কমিয়ে আনা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ গণধীশানন্দজি সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে ১ ঘন্টা লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অঞ্জলি প্রদান করাবেন। ধাপে ধাপে চারবার অঞ্জলি প্রদানের প্রক্রিয়া লাইভে করাবেন তিনি। ভক্তরা বাড়িতে বসে তাকে অনুসরণ করে মন্ত্রোচ্চারণ করবেন এবং অঞ্জলির ফুল-বেলপাতা ইত্যাদি বাড়িতেই মা দুর্গার প্রতিকৃতির সামনে অর্পণ করতে পারবেন। সারদা মায়ের ভক্তরা তাঁর প্রতিকৃতিতেও অঞ্জলির ফুল-বেলপাতা অর্পণ করতে পারবেন।
গণধীশানন্দজি মহারাজ এব্যাপারে বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অত্যন্ত সাবধানতার মধ্য দিয়ে মায়ের পুজো আয়োজন করা। জগজ্জননীর আরাধনায় জৌলুস থাকবে, প্রত্যেকেই নিজের মত করে মাকে দর্শনের সুযোগ পাবেন, অথচ কোভিড প্রটোকল ভাঙবেনা, এমনটাই পরিকল্পনা আমাদের। অঞ্জলি প্রদানের ক্ষেত্রে একসঙ্গে অনেকেই জড়ো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুজোর তিন দিন ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে চারবার লাইভে অঞ্জলি প্রদানের প্রক্রিয়া দেখানো হবে। যারা বাড়িতেই থাকবেন প্রত্যেকে নিজের মত সময় বেছে নিয়ে ফুল বেলপাতা ইত্যাদির মাধ্যমে অঞ্জলি প্রদান করবেন। মন্ত্রোচ্চারণের পর তারা দুর্গা মায়ের অথবা সারদা মায়ের প্রতিকৃতির চরণে ফুল-বেলপাতা ইত্যাদি অর্পণ করবেন।”
রামকৃষ্ণ মিশনের এই বছরের পুজোর আয়োজন নিয়ে বলেন, “পরিস্থিতির কারণেই এবছর পুজোর সংখ্যা কমবে, তাই মায়ের দর্শন করতে অনেক বেশি মানুষ রামকৃষ্ণ মিশনে আসবেন বলেই আমাদের ধারণা। মায়ের আগমনের মুহূর্তে কেউ যেন হতাশ না হন এবং প্রত্যেকেই যেন দর্শন পেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে চাইছি আমরা। অত্যন্ত সুন্দর নিয়মে ভক্তদের মন্দিরে ঢোকার এবং মায়ের দর্শন করে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরে ঢোকার আগেই প্রত্যেকের হাত সেনিটাইজ করা হবে, ভেতরে একটা জায়গায় জলের মধ্যে সেনিটাইজার মিশিয়ে রাখা হবে, ভক্তরা এর মধ্যে পা দিয়ে বেরিয়ে যাবেন তাতে পা সেনিটাইজড হয়ে যাবে। এর আগে উল্টোদিকে কলেজিয়েট স্কুল প্রাঙ্গনে ভক্তদের জুতো রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিশেষ মেশিন বানানো হয়েছে যার রে করোনা ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে সমর্থ। প্রত্যেক দর্শনার্থীকে এই রে পার করে ভেতরে যেতে হবে, তাই নিরাপত্তার কোনও ত্রুটি থাকছে না। এবার পুজো নতুন মণ্ডপে হবে, মণ্ডপটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। মাঠের সামনে মন্ডপ, তাই একটি বড় জায়গা নিয়ে ভক্তদের লাইন করা হবে। প্রত্যেকে প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াবেন। কেউ মন্দিরের ভিতরে দাঁড়াবেন না, হাঁটতে হাঁটতেই মায়ের দর্শন করে, প্রণাম করে বেরিয়ে যাবেন। গেটে ঢোকার পর বিভিন্ন কাউন্টার থাকবে যেখানে ভক্তরা মায়ের উদ্দেশ্যে আনা ভোগ-নৈবেদ্য, শাড়ি ইত্যাদি দিয়ে দেবেন। সেগুলো স্যানিটাইজ করে পরবর্তীতে ভেতরে নেওয়া হবে। এবছর খিচুড়ি বা মাখা প্রসাদ রাখা হচ্ছে না। ভক্তরা প্রণাম করে মন্দির থেকে বেরিয়ে গেটে যাওয়ার পথে প্রসাদের কাউন্টার থাকবে, সেখানে প্রসাদ হিসেবে গোটা ফল দেওয়া হবে। রামকৃষ্ণ মিশনের পক্ষ থেকে ৩০ কুইন্টাল বুঁদে বানানো হচ্ছে। সেটা প্রত্যেক ভক্তকে প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হবে। মাঠে ছয়টি আলাদা বুক স্টল বসানো হবে, যাতে ভক্তরা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পছন্দমত বই, ফটো ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারেন। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া গুলোকে একটু আলাদা করে সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বেলুড় মঠের সম্মতি নিয়েই গ্রহণ করা হয়েছে।”
বিসর্জন নিয়ে তিনি জানান, অন্যান্য বছর বিসর্জনে অনেকেই অংশ নেন তবে এবার এই প্রক্রিয়ায় কাউকে আসতে দেওয়া হবে না। অত্যন্ত নিজস্ব ভাবে সাবধানে বিসর্জন প্রক্রিয়া শেষ হবে। সন্ধ্যায় মণ্ডপের সামনে মাঠে বড় আকারের শান্তিজল প্রদান অনুষ্ঠান করা হবে। সেখানে ভক্তরা নিরাপদ দূরত্বে বসে শান্তিজল গ্রহণ করবেন এবং বিজয়া দশমীর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।
Comments are closed.